চোখের জলে মা দূর্গার বিদায় পতেঙ্গার জলে

দশমীর সিঁদুর খেলা ও বিসর্জনের বিষাদ নিয়ে ছলছল চোখে দুর্গা মাকে বিদায় দিতে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রে হাজির হয়েছিলেন কয়েক লক্ষ সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষ। দুপুরের পর থেকেই ভীড় বাড়তে থাকে সৈকতে। সমকণ্ঠে ‘জয়, দুর্গা মায়ের জয়’ বলতে বলতে প্রতিমা বিসর্জন করেছেন ভক্তরা। এ সময় অনেকে শেষবার প্রণাম করছেন দুর্গা মাকে। কেউবা মনোবাঞ্ছা পূরণে গুঁজে দিয়েছেন চিরকুট।

বিজয়ার দিনে শান্ত বিকেলে পতেঙ্গা সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন।
বিজয়ার দিনে শান্ত বিকেলে পতেঙ্গা সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে দুর্গা মায়ের বিদায় উপলক্ষে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) বিকেল থেকে ভীড় বেড়ে পরিণত হয় জনসমুদ্রে। এবারের দুর্গা পূজায় চট্টগ্রাম মহানগরের প্রায় ২৭০ টি পূজা মন্ডপ থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে আসেন প্রতিমা বিসজন দিতে।

পাহাড়তলী থেকে সমুদ্র সৈকতে আসা গৃহবধূ প্রিয়তি ঘোষ বলেন, ‘এ কয়দিন খুব আনন্দে কেটেছিল দুর্গোৎসব।মাকে বিদায় দিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আগামীতেও এখানে আবার আসবো।’

‘জয়, দুর্গা মায়ের জয়’—ধ্বনিতে প্রতিমা বিসর্জন করছেন ভক্তরা।
‘জয়, দুর্গা মায়ের জয়’—ধ্বনিতে প্রতিমা বিসর্জন করছেন ভক্তরা।

আগ্রাবাদ থেকে আসা প্রিয়জয় দাশ বলেন, প্রতিবছর মা আসেন আমাদের দুঃখমোচন করতে। মায়ের কাছে অঞ্জলি দিয়ে আমার ঋদ্ধ হই, সিক্ত হই ভালোবাসায়। আজ মা চলে যাচ্ছেন। বিদায়ে কিছুটা বেদনা থাকে।

দুপুর থেকেই পতেঙ্গায় শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিমাসহ ভক্তরা মিছিলে মিছিলে ভীড় জমান পতেঙ্গা সৈকতে। ভোরে মণ্ডপে মণ্ডপগুলোতে বিদায়ী প্রস্তুতি শুরু হয়। ষোড়শ উপাচারে দশমীর বিহিত পূজা, দর্পন বিসর্জন, শাস্ত্রীয় আচার, দেবীর চরণে অঞ্জলি নিবেদন, দেশ-জাতি, ব্যক্তিগত-পারিবারিক সুখ, শান্তি, মঙ্গল কামনায় দিনব্যাপী ব্যস্ত ছিলেন পূজার্থীরা।

মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার জানান, নগরে প্রায় ২৭০টি মণ্ডপে পূজা হয়েছে। পতেঙ্গা সৈকতে ১২০-১৩০ প্রতিমা বিসর্জিত হয়েছে।এছাড়াও ফিরিঙ্গিবাজারের অভয়মিত্র ঘাট, কাট্টলী সৈকত, পাহাড়তলীর বিভিন্ন পুকুর ও দীঘিতে, কালুরঘাটের কর্ণফুলী নদীতেও প্রতিমা বিসর্জিত হয়েছে। রাতেও অনেক মণ্ডপ থেকে নগরীতে ভক্তরা আসবেন প্রতিমা বিসর্জনের জন্য । এরজন্য আলোকায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘সব মিলিয়ে অতীতের তুলনায় এবারের দূগোৎসব অনেক সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয়েছে।’

দশমীর সিঁদুর খেলার পর মা দূর্গাকে বিদায় দিতে আসা পূজার্থী।
দশমীর সিঁদুর খেলার পর মা দূর্গাকে বিদায় দিতে আসা পূজার্থী।

প্রতিমা বিসর্জনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে পতেঙ্গা থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তিন স্তরের বলয়ে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা ছিল। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত জুড়ে বিভিন্ন আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কাজ করে গেছেন।’

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, যে কোন দুর্ঘটনা এড়াতে ১১ টি ডুবুরি টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছিলো।

এদিকে, বিজয়া দশমীতে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পরিদর্শনে যান চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগম,উপ-পুলিশ বন্দর কমিশনার, হামিদুর রহমান, চট্টগ্রাম মমহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ,প্যানেল মেয়র কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, কাউন্সিলর শৈবাল দাস সুমন, সালেহ আহম্মদ চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ইছা,সুমন দেবনাথ সুমন,অধ্যক্ষ অজন ব্যানার্জিসহ বিভিন্ন পূজা উদযাপনের নেতৃবৃন্দ।

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!