বিশ্ব অবাক তাকিয়ে রয়, টন্টনে বাংলাদেশের নান্দনিক জয়

সাকিবের সেঞ্চুরি, লিটনের ৯৪ রান

‘সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয় : জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার/তবু মাথা নোয়াবার নয়।’ বাংলাদেশ কখনো কোথাও মাথা নোয়ায়নি। কখনো কখনো দীর্ঘ লাফ দিতে একটু ঝুঁকে কুঁজো হতে হয়। শরীরটাকে গুটিয়ে নিতে হয়। ধনুক থেকে ছুটে বেরিয়ে যেতে তিরটাকেও একটু পিছু হটতে হয়। গত দুই ম্যাচে সেই দমটা নিয়ে বাংলাদেশ আবারও লং জাম্প দিল যেন। শপাং করে বেরিয়ে গেল তিরের ফলা হয়ে।

নদীতে যেন ভাটার টান। স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি শান্ত। যেন ইচ্ছে করলেই অনায়াসে পাড়ি দেয়া যায়। নদীতে বর্ষার ভয়ংকররূপ আসার আগেই নদী পার হতে নদীর পাড়ে অপেক্ষায় আছেন শিকারী বাঘ। সর্বশেষ দুটি শিকার হাতছাড়া হয়েছে। শিকার করতে গিয়ে নিজেই শিকারে পরিণত বাঘ সোমবার সকালে থেকেই ফুঁসছিল। বাঘের জন্য হুমকি হয়ে যেকেনো মুহূর্তে নদীতে চলে আসতে পারত বান, দেখা দিতে পারত ভয়ংকররূপে। নদীতে বান এসেছে, নদী রূপধারণ করেছিল ভয়ংকর আকারে। তবে সেই নদীর নাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয়, সেই নদীর নাম বাংলাদেশ। সাকিব নামক বানে প্লাবিত হয়েছে পুরো ক্যারিবিয় অঞ্চল।

বিশ্ব অবাক তাকিয়ে রয়, টন্টনে বাংলাদেশের নান্দনিক জয় 1
বাংলাদেশের জয়ের দুই কারিগর সাকিব আল হাসান ও লিটন দাশ। দুজন মিলে করেন ম্যাচ জেতানো ১৮৯ রানের জুটি

পেস আর বাউন্সে উড়িয়ে দেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দীর্ঘদেহী ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলাররা ৯০ মাইল গতিতে বল করার অপেক্ষায়। ব্যাটসম্যানদের এনে দেওয়া ৩০০ ছাড়ানো এক স্কোরের পর বাংলাদেশকে গতিতে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাই করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। উড়ল ঠিকই, তবে সেটা বল আর উইন্ডিজদের দর্প। সাকিবের সামনে আজ যে সবাই নতজানু হলেন। দুর্দান্ত বাংলাদেশের কাছে ৭ উইকেটে হারল উইন্ডিজ।

তাও কেমন জয়। ৩২২ রানের লক্ষ্য। এ বিশ্বকাপে কোনো দল আড়াই শ তাড়া করে জেতেনি এখনো। তিন শ ছাড়ানো স্কোর মানেই জয়ের নিশ্চয়তা। সে ম্যাচে বাংলাদেশের ৪০তম ওভার যখন শেষ হলো, তখন স্কোরবোর্ডে লেখা ৩০৫! ৬০ বলে ১৭ রান দরকার বাংলাদেশের। সেটা ৫১ বল হাতে রেখেই কাজ সারল বাংলাদেশ। দাপুটে জয়? না, উপমাটি কম হয়ে যাচ্ছে আজ। উল্টো রান কম হওয়ায় সেঞ্চুরি না পাওয়ায় লিটন অভিযোগ করতে পারেন ক্রিস গেইলদের।

সাকিব আল হাসান এ বিশ্বকাপকে নিজের বানাতে চান। বিশ্বকাপের আগেই অমনটা শোনা গিয়েছিল। অমন কথা অনেকের মুখেই শোনা যায়, কিন্তু কথা রাখতে পারেন খুব কম। কিন্তু সাকিবের ধাত আলাদা, সেটা ক্যারিয়ারের সব সময় বোঝা গেছে। সেটা নতুন করে আরেকবার মনে করিয়ে দিলেন এই যা।

বিশ্ব অবাক তাকিয়ে রয়, টন্টনে বাংলাদেশের নান্দনিক জয় 2
দলকে দুর্দান্ত জয় এনে দেয়ার পথে হাওয়ায় ভেসে উড়ন্ত শট খেলছেন সাকিব আল হাসান।

নবম ওভারে যখন নেমেছিলেন বাংলাদেশের স্কোরটা তখন ভালোই। ৫০ বলে ৫২ রানের উদ্বোধনী জুটিকে যেকোনো বিচারেই ভালো বলতে হবে। তবে সে ভালোটাকে আরও ভালো করার দায়িত্ব নিয়েছেন সাকিব। গত কিছুদিনের খোলসবন্দী তামিম টনটনে বল্গা হরিণের মতো না হলেও ছুটছিলেন। কিন্তু সে তামিমকেও ম্লান দেখাচ্ছিল সাকিবের কাছে। সেটা হওয়ারই কথা। বিশ্বকাপের প্রথম তিন ম্যাচেই ফিফটি ছাড়িয়েছেন। সর্বশেষ ম্যাচে সেটা সেঞ্চুরির কোটাও পেরিয়েছে।

নবম ওভারে নেমেছিলেন, ২১তম ওভার শুরু হতেই পেয়ে গেলেন ফিফটি। শিমরন হেটমায়ারের মতো ছক্কা মেরে বল হারাতে যাননি। ঠিক যতটা দরকার, ততটা করেছেন। আর তাতেই ৪০ বলে ফিফটি হয়ে গেল তার। ৭টি চার তার মাঝে। এর মধ্যেই অবশ্য বাংলাদেশের ইনিংসে একটা ঝড় বয়ে গেছে। ১০ বল ও ১২ রানের মধ্যে বাজেভাবে বিদায় নিয়েছেন তামিম (৪৮) ও মুশফিক (১)। ৩ উইকেটে ১৩৩ রান বাংলাদেশের। সাকিবের সামনে তখনো বহু পথ বাকি, তাঁর সঙ্গী বিশ্বকাপে আজই অভিষিক্ত লিটন দাস। বাংলাদেশ কি পারবে? সাকিব কি পারবেন?

সাকিব যে পেরেছেন সেটা তো এরই মাঝে জানা হয়ে গেছে। কিন্তু যেভাবে সে পথে এগিয়েছেন, সেটাই বেশি আলোচ্য। বাংলাদেশকে গতিতে উড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল উইন্ডিজদের। তা বাউন্সার দিতে কোনো কার্পণ্য করেননি তাঁরা, কিন্তু হুক, পুল বা কাট করতে সাকিবও তো কখনো আলস্য দেখাননি। উইন্ডিজ ফিল্ডারদের চোখের সামনে দিয়ে বল সীমানা পেরোতে লাগল, হা হুতাশ বাড়তে বাড়তে পরাজিত এক দলের দেখা মিলল ইনিংসের মাঝপথেই। ফিফটিটা সেঞ্চুরি হলো। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড এক ইনিংস পরেই ১২ বল কমিয়ে আনলেন সাকিব। ততক্ষণে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়ে গেছে। তবুও কাজ শেষ হয়নি বুঝে কোনো বুনো উল্লাস নেই, শুধু একটু ব্যাট তুলে অভিবাদন বুঝে নেওয়া।

বিশ্ব অবাক তাকিয়ে রয়, টন্টনে বাংলাদেশের নান্দনিক জয় 3
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় শতকের পরও অনেকটা নির্লিপ্ত সাকিব। কেননা, কাজ তখনো অনেক বাকি ছিল।

সাকিব গত ম্যাচেও এভাবে বোলারদের শাসন করেছিলেন। কিন্তু ইংল্যান্ড ম্যাচে বড্ড একা পড়ে গিয়েছিলেন। আজ আর তাঁকে একা লড়তে হয়নি। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমে প্রথম দুই তিনটি বলে একটু অস্বস্তি দেখা গিয়েছিলে। দুই তিনবার ব্যাটের কানা লেগে বল যে পেছন দিয়ে চার হয়েছে তাতেও লিটনের কোনো অবদান ছিল না। কিন্তু সে সব শটেই আত্মবিশ্বাস এসেছে। আর সে আত্মবিশ্বাসের ফলটা টের পেলেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। ৩৮তম ওভারের প্রথম তিন বল সীমানার এপারে পোড়তে দেননি লিটন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম ছক্কার হ্যাটট্রিকের রেকর্ডটা লিটন বুঝে নিলেন কী অবলীলায়! কী অনায়াসে!

দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাকিবের চেয়ে আগ্রাসী ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের ক্রিকেটেই কম এসেছে। তবু ফিফটি পেরিয়ে যাওয়া সাকিবকেই একটু পরে দ্রুত রান তোলায় টপকে গেলেন লিটন। ১৩৫ বলে ১৮৯ রানের চতুর্থ উইকেট জুটিতে সাকিবের অবদান ৮০। আর সাকিবের চেয়ে মাত্র ৩ বল বেশি খেলা লিটনের অবদান ৯৪। একটাই অতৃপ্তি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান একটু কম হয়ে যাওয়ায় সেঞ্চুরিটা পেলেন না লিটন।

বিশ্ব অবাক তাকিয়ে রয়, টন্টনে বাংলাদেশের নান্দনিক জয় 4
মিথুনের ফর্মহীনতায় সুযোগ পেয়ে বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচে ৯৪ রানে অপরাজিত থাকলেন লিটন দাশ

প্রতিপক্ষ ৩২২ রান করার পরও লেখা যাচ্ছে, ‘রানটা একটু কম হয়ে যাওয়ায়।’ না, এমন দাপুটে জয় আসলেই দেখেনি বাংলাদেশ।

ইংল্যান্ড ম্যাচে টস জিতে বোলিং নিয়ে কেলেঙ্কারি! পরে বড় হার। কড়া সমালোচনা! ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে যখন আবারও শুরুতে বল করাকেই শ্রেয় মনে করলেন মাশরাফী, ভ্রু-কুঁচকে যাওয়াই ছিল স্বাভাবিক। হয়ত ছিল কী-বোর্ডে তীরবিদ্ধ করার প্রস্তুতি! তবে রেকর্ড গড়া জয়ে মহাকাব্য লেখার রাতে এখন কেবলই ফুলবর্ষণ! বাংলাদেশের জন্য সুরভিত জয়ের নায়ক চলতি বিশ্বকাপে ব্যাটে-বলে উড়তে থাকা সাকিব আল হাসান।

সোমবার টন্টনে শুরুতে ব্যাট করে নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেটে ৩২১ রানের বড় লক্ষ্যই দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রানবন্যার সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হওয়া বিশ্বকাপে এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত যখন কোনো দল তিনশ পেরোনো লক্ষ্য ছুঁতে পারেনি, লক্ষ্যটা তখন আরও বড়ই হয়ে যায়।

সেটি টপকাতে কেবল বিশ্বকাপেই নয়, নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসেরই সর্বোচ্চ রানতাড়ার রেকর্ড গড়তে হত। অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটে মাশরাফী বিন মুর্ত্তজার বাংলাদেশ গড়েছে সেই রেকর্ডটাই। সাকিব-লিটনের ঝড় তোলা জুটিতে ৫১ বল আর ৭ উইকেট অক্ষত রেখেই জয়ে নোঙর ফেলেছে।

বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের তোলা ৩২১ রান বাংলাদেশ পেরিয়ে যায় ৫১ বল হাতে রেখে। সাকিব করেছেন ১২৪ রান, লিটন ৯৪। চতুর্থ উইকেটে দুজনের ছিল ১৮৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি।

ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটি ছিল বিশ্বকাপেই। গত অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে নেলসনে স্কটল্যান্ডের দেয়া ৩১৮ রান টপকে ৩২১ করে ফেলেছিল কোয়ার্টারে খেলা বাংলাদেশ। সেই রেকর্ডই নতুন করে লিখল টাইগাররা। ৩ উইকেটে ৩২২ করে। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ, বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বোচ্চ, আর বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড।

উইন্ডিজ এমনিতেই খুব চেনা প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের। গত দেড় বছরে সব ফরম্যাট মিলিয়ে ২০ বার সাক্ষাত, তাতে জয়ের পাল্লাটা টাইগারদের দিকেই ভারী। শেষ ৯ ওয়ানডেতে ৭টিতেই জিতে অপ্রতিরোধ্য ছিল লাল-সবুজরা। টন্টনে সেটি আরেকধাপ এগিয়ে গেল।

পঞ্চম বিশ্বকাপে এসে সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া বাংলাদেশ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে ২০১৫ আসরে টানা দুই ম্যাচে শতক দেখেছিল। ষষ্ঠ আসরে যেয়ে সাকিবের ব্যাটে দুই সেঞ্চুরি দেখল লাল-সবুজরা। তাতে নামের পাশে দুটি করে শতকে ধরে ফেললেন রিয়াদকে। মাহমুদউল্লাহ গত অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৩ এবং পরের ম্যাচে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১২৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।

টন্টনে সেঞ্চুরির আগে ২৩ রানে থাকার সময় দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ছয় হাজার ওয়ানডে রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন সাকিব। সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ছুঁয়েছিলেন আড়াইশ রানের কীর্তি। তাতে এই ফরম্যাটে অনন্য ডাবলের অভিজাত ক্লাবে এখন সাকিব। তার আগে যে কীর্তি ছুঁয়েছেন কেবল তিনজন, আফ্রিদি, ক্যালিস ও জয়সুরিয়া। টাইগারদের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সবার চেয়ে কম ম্যাচে কীর্তি ছুঁয়ে বাকিদের পেছনে ফেলেছেন।

পাকিস্তানি আফ্রিদির ছয় হাজার ও আড়াইশ রানের ডাবলের কীর্তি ছুঁতে লেগেছিল ২৯৪ ওয়ানডে। প্রোটিয়া ক্যালিসের লেগেছিল ২৯৬, আর লঙ্কান জয়সুরিয়ার ৩০৪ ম্যাচ। সাকিব সবাইকে পেছনে ফেললেন মাত্র ২০২ ম্যাচে এই অভিজাত ক্লাবে নাম লিখিয়ে। এদিন শচীন-স্মিথের একটি রেকর্ডেও ভাগ বসিয়েছেন মহাকাব্য লেখা সাকিব। মাত্র চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরের প্রথম চার ইনিংসে ৫০ বা ততোধিক রানের সংগ্রহ গড়ার কীর্তি গড়েছেন।

বিশ্ব অবাক তাকিয়ে রয়, টন্টনে বাংলাদেশের নান্দনিক জয় 5
ম্যাচ সেরা ট্রফি হাতে বিশ্বকাপের এখনব্দি সেরা রান সংগ্রাহক সাকিব আল হাসান।

ইংল্যান্ড আসরের প্রথম তিন ম্যাচের একটি সেঞ্চুরি ও দুটি হাফসেঞ্চুরি নিয়ে সোমবার টন্টনে নামেন সাকিব। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেই দারুণ রেকর্ডটি গড়েন। নভজাৎ সিং সিধু, শচীন টেন্ডুলকার ও গ্রায়েম স্মিথ বিশ্বকাপের এক আসরের প্রথম চার ইনিংসে ফিফটি প্লাস রান করার কীর্তি গড়েছেন। টাইগার মহাতারকা পরে তো সেঞ্চুরিতেই রূপ দিলেন মহাকাব্যিক ইনিংসটি।

নিজেদের প্রথম ম্যাচে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৫ রানের ইনিংস খেলে দুর্দান্ত শুরু। দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৪, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচে ১২১, আর পরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ ভেসে গেলে মাঠে নামা হয়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে পেলেন ব্যাক-টু-ব্যাক সেঞ্চুরির স্বাদ। তাতে ইংল্যান্ড আসরে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন জেগে থাকল রঙিন হয়েই।

এর আগে ৮ উইকেটে ৩২১ রানের পাহাড়সমান পুঁজি দাঁড় করায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে অবশ্য শুরুটা তেমন ভালো ছিল না তাদের। বোলিং উদ্বোধন করেন টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা। প্রথম ওভারে কোনো রান নিতে পারেননি ক্যারিবীয় দুই ওপেনার ক্রিস গেইল আর এভিন লুইস। মেডেন দেন মাশরাফি। পরের ওভারে সাইফউদ্দীনও ২ রানের বেশি দেননি। তৃতীয় ওভারে এভিন লুইসের কাছে মাত্র একটি বাউন্ডারি হজম করেন মাশরাফি। তার পরের ওভারে দ্বিতীয় বলেই আঘাত সাইফউদ্দীনের।

অফসাইডে বেরিয়ে যাওয়া বল বুঝতে না পেরে একটু খোঁচা দিয়েছিলেন গেইল। উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহীম ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন। এ নিয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে চার ম্যাচে দুবারই শূন্যতে আউট হলেন বিধ্বংসী এই ওপেনার। ৬ রান তুলতেই ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। কিছুটা বিপদেই পড়ে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন এভিন লুইস আর শাই হোপ, দ্বিতীয় উইকেটে তারা যোগ করেন ১১৬ রান।

বিশ্ব অবাক তাকিয়ে রয়, টন্টনে বাংলাদেশের নান্দনিক জয় 6
শট খেলতে গিয়ে একটু সামনে চলে এসেছিলেন। বোলার বল ধরেই তড়িৎ গতিতে থ্রু করলেন। লাফিয়ে পড়েও বাঁচতে পারেননি তামিম ইকবাল।

থিতু হয়ে গিয়েছিল জুটিটা, চোখ রাঙানিও দিচ্ছিল। ২৫তম ওভারে এসে টাইগার শিবিরে স্বস্তি ফেরান সাকিব আল হাসান। তাকে তুলে মারতে গিয়ে লং অফে বদলি ফিল্ডার সাব্বির রহমানের ক্যাচ হন লুইস। ৬৭ বলে ৬ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় ক্যারিবীয় ওপেনার করেন ৭০ রান। তৃতীয় উইকেটে নিকোলাস পুুরান আর সিমরন হেটমায়ারের ৩৭ রানের জুটিটিও ভাঙেন এই সাকিব। টাইগার স্পিনারের ঘূর্ণিতে ৩০ বলে ২৫ রান করে লং অনে সৌম্য সরকারের ক্যাচ হন পুরান। ১৫৯ রানে ৩ উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা।

সেখান থেকে ৪৩ বলে ৮৩ রানের বিধ্বংসী এক জুটি হেটমায়ার-শাই হোপের। কোনো কিছুতেই কোনো কাজ হচ্ছিল না। অবশেষে মোস্তাফিজ ঝলক দেখান। ৪০তম ওভারে এসে জোড়া আঘাত হানেন কাটার মাস্টার। মোস্তাফিজের ওভারের তৃতীয় বলটি মিডউইকেটে ভাসিয়ে দেন হেটমায়ার। ২৫ বলে ৫০ রানের টর্নোডো ইনিংস খেলা এই ব্যাটসম্যান হন তামিম ইকবালের চোখে লাগার মতো এক ক্যাচ। ওভারের শেষ বলটিতে দুর্দান্ত এক ডেলিভারি দেন মোস্তাফিজ, শূন্য রানেই আন্দ্রে রাসেল ধরা পড়েন উইকেটের পেছনে।

২৪৩ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে আরেকটি ঝড়ো জুটি ক্যারিবীয়দের। এবার হোপের সঙ্গী অধিনায়ক জেসন হোল্ডার, ১৫ বলে ৩৩ রানের ঝড় তুলে ক্যারিবীয় অধিনায়ক আউট হন সাইফউদ্দীনের বলে, লং অফে ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ। তারপরও একটা প্রান্ত ধরে ছিলেন শাই হোপ। বল খরচ করলেও যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। শেষ পর্যন্ত আর সেঞ্চুরি পাওয়া হয়ে উঠেনি তার। ১২১ বলে ৯৬ রান করে মোস্তাফিজের শিকার হন হোপ।

শেষ ৬ ওভারে টাইগার বোলাররা বেশ চেপে ধরেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। এর মধ্যেও টুকটাক বাউন্ডারি মেরে রান এগিয়ে নিয়েছে তারা। শেষ ওভারের শেষ বলে ড্যারেন ব্রাভোকে (১৫ বলে ১৯) বোল্ড করেন সাইফউদ্দিন।

বাংলাদেশের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নেন দুই পেসার মোস্তাফিজ আর সাইফউদ্দিন। স্পিনার সাকিবের শিকার ২ উইকেট।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!