‘বিলাইছড়িতে বৌদ্ধ বিহার পুড়িয়েছে জেএসএস’

ধর্মীয় দেশনা নয়, বরং একগাদা অভিযোগ নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন বিলাইছড়ির বৌদ্ধধর্মীয় গুরু ড. এফ দীপঙ্কর মহাথেরো। তার অভিযোগের তীর পাহাড়ের আঞ্চলিক দল সন্তুলারমার জনসংহতি সমিতি-জেএসএস’র দিকে।

বললেন, ‘হিংসার কারণেই বিলাইছড়ির ধুপশীল আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ ভাবনা কেন্দ্রটি পুড়িয়ে দিয়েছে জেএসএস’র সন্ত্রাসীরা। দলটি নিরংকুশ আধিপত্য জানান দিতেই এ জঘণ্য অপরাধ করেছে’ বলে তিনি এ অভিযোগ তুলেছেন।

সোমবার (১৮ মে) দুপুরে রাঙামাটি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন এমন অভিযোগ এনেছেন পুড়ে যাওয়া বিহারটি অধ্যক্ষ ড. দীপঙ্কর।

তার দাবি ‘ওই আগুনে থাইল্যান্ড থেকে আনা অষ্টধাতুর সুবিশাল মূল্যবান বুদ্ধমূর্তি, বুদ্ধবাণী পবিত্র ত্রিপিটক, ভিক্ষুসংঘ, ভাবনাকারিদের নানাবিধি ব্যবহার্য সামগ্রী, আসবাবপত্রসহ আনুমানিক ২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে’।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেএসএস’র কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা। তার দাবি ‘অগ্নিসংযোগের সাথে জেএসএস জড়িত নয়’।

অগ্নিসংযোগের কারণ তুলে ধরে ড. দীপঙ্কর মহাথেরো বলেন, ‘জেএসএসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে স্থানীয় পাহাড়ি জনগণের জীবন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে আমরা জেএসএসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসতে সাধারণ পাহাড়িদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। এটা সহ্য করতে না পেরে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা’।

ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে ভাবনা কেন্দ্রের শ্রীমৎ মহানামা ভিক্ষু, শ্রীমৎ মেমির ভিক্ষু, শ্রীমৎ জ্ঞাতিনমত্র ভিক্ষু, চঞ্জিত মিত্র ভিক্ষু উপস্থিত ছিলেন।

গত ১৫ মে ভোর রাতে বিলাইছড়ি সদর ইউনিয়নের ধুপশীল গ্রামে ওই বৌদ্ধ বিহারটি পুড়িয়ে দেয় একদল দুর্বৃত্ত। পরদিন ১৬ মে বিহারটির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিদ্যাসাগর তঞ্চঙ্গ্যা বাদী হয়ে বিলাইছড়ি থানায় মামলা দায়ের করেন।

বিলাছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পারভেজ আলী বলেন, ‘মামলায় অজ্ঞাত ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে’।

ড. দীপঙ্কর অভিযোগ করেন, ‘বিহারের সীমা নির্মাণে বাধা দেওয়া জেএসএস ২০১৬ বিরোধের সূচনা করে। এরপর ২০১৭ সালের ২ ডিসেম্বর বৌদ্ধ বিহারে সশস্ত্র হামলায় ১০-১২ জন আহত হয়। ১৭ ডিসেম্বর অস্ত্রের মুখে বিহারের সেবক নীলচান তঞ্চঙ্গ্যাকে অপহরণ করা হয়’।

‘২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি সন্ত্রাসীরা বিহারে গুলিবর্ষণ করলে বিশ্বরায় তঞ্চঙ্গ্যা গুলিবিদ্ধ হন। ২০ মার্চ বিহারে আবারও সশস্ত্র হামলায় ৬ জন আহত হন। পরদিন ২১ মার্চ নদীপথে ফারুয়া যাওয়ার সময় সেবক ও ভিক্ষুসংঘের ওপর গুলিবর্ষণ করলে এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয়’ বলছিলেন ড. দীপঙ্কর।

‘কিছুদিন পর বিহারে যাওয়ার অপরাধে বিমল তঞ্চঙ্গ্যাকে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। অপহরণ করা হয় তুফান তঞ্চঙ্গ্যাকে। নবীন চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে ও পানের বরজ (ক্ষেত) পুড়িয়ে দেয়। গেল বছরেও ধর্মজিৎ ভিক্ষুকে অপহরণ ও মারধর করা, বিহার ও কুঠির উঠিয়ে নেয়ার হুমকি, ধর্মীয় সভা বাতিল করে দেয়াসহ বিভিন্ন হামলা করে জেএসএস’র অস্ত্রধারীরা। সর্বশেষ গত শুক্রবার বিহার পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটলো’। যোগ করেন এ ধর্মীয় গুরু।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!