বিমানের ক্ষতি, চট্টগ্রামের চারটিসহ ৮ ট্রাভেল এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল

অহেতুক টিকিট বুকিং এবং বাতিলের মাধ্যমে বিমানের আর্থিক ক্ষতি করায় ৮ ট্রাভেল এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে চারটিই চট্টগ্রামের। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট জিডিএস কোম্পানির সঙ্গে যোগসাজশে প্রতারণা ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের লাভবান হওয়ার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটির তদন্তে এমন অভিযোগ উঠে আসে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সোমবার (২১ অক্টোবর) মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ৮ ট্রাভেল এজেন্সি লাইসেন্স বাতিল করা হয়।

লাইসেন্স বাতিল হওয়া এজেন্সিগুলোর মধ্যে চারটিই চট্টগ্রামের। এগুলো হল চৌধুরী ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল সেন্টার, দারুল ইমান ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, বিপ্লব ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্ট ও ঊর্মি ট্রাভেল এজেন্সি। ঢাকাভিত্তিক অন্য চার এজেন্সি হল সামস এয়ার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, মুনা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর লিমিটেড ও মাদারল্যান্ড ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস।

আদেশে ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩’ অনুযায়ী এসব এজেন্সির নিবন্ধন সনদ বাতিল করা হয়। ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে ইস্যু করা নিবন্ধন ও নিবন্ধন নবায়ন সনদ ফেরত দেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এজেন্সিগুলোর অপরাধের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, এসব ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে জুলাই ২০১৮ থেকে এপ্রিল ২০১৯ পর্যন্ত ৫৯৮টি টিকিটের জন্য বুকিং দেওয়া হয় এবং এ সময়ে ৪৯১টি টিকিট বাতিল করা হয়। এতে বিমানের আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের কমিটির তদন্তে প্রমাণিত হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিমানের বোর্ডসভায় বিষয়টি আলোচনা শেষে সংশ্লিষ্ট এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশ করে এবং অসম চুক্তির সুযোগ নিয়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে চারটি গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (জিডিএস) কোম্পানি। অ্যামাডিউস, অ্যাবাকাস, গ্যালিলিও ও সাবরি নামের এই চার কম্পানির লুটপাটের সহযোগী বিমানেরই তালিকাভুক্ত তিন শতাধিক ট্রাভেল এজেন্ট।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে টিকিট বুকিং বাতিলের জন্য চারটি জিডিএস কোম্পানিকে ৯৩ কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করা হলেও বেশির ভাগ বুকিংই ছিল ভুয়া। আলোচ্য সময়ে পাঁচটি দেশের ২২ জন এজেন্ট ৮০ শতাংশ বুকিং এবং সাতটি দেশের ৩১ জন এজেন্ট ৭৫ শতাংশ টিকিট বুকিং বাতিল করেছে।’

এ দিকে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) এই পদক্ষেপকে ‘লঘু পাপে গুরুদণ্ড’ বলে উল্লেখ করেছে। আটাব সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব বলেন, ‘জিডিএসের কেউ অপব্যবহার করে থাকলে এয়ারলাইনসের বিধি অনুযায়ী তাদের জরিমানা করা যেত। এটি লঘুপাপে গুরুদণ্ড হয়ে গেছে। আমরা মনে করি, মন্ত্রণালয়ের এটি বিবেচনা করা উচিত। কারণ সামান্য আর্থিক ক্ষতির কারণে এত বড় শাস্তিতে অনেক গ্রাহকের ভোগান্তি হবে।’

তদন্ত প্রতিবেদনে এজেন্সিগুলোর দুর্নীতি প্রসঙ্গে আটাব সভাপতি বলেন,‘আগে এজেন্সিগুলোকে জরিমানা করে এডিএম (এজেন্সি ডেবিট মেমো) রেইজ করা যেত। তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা যেত। তা না করে লাইসেন্স বাতিল কাম্য নয়।’

বাতিলের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো মন্ত্রণালয়ে আপিল করবে জানিয়ে আটাব সভাপতি বলেন, ‌’তারা লাইসেন্স ফিরে পাবে বলে আশা করছি।’

তদন্ত কমিটির সুপারিশে বিমানের টিকিট বিক্রি কার্যক্রম স্বচ্ছ করতে সংস্থার নিয়োজিত অডিট ফার্মের কাছ থেকে প্রতিবেদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়ী এজেন্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!