গভীর সমুদ্রে আটকে ১৪ ঘণ্টারও বেশী সময় পর সেন্টমার্টিন থেকে কক্সবাজারে ফিরেছে পর্যটকবাহী জাহাজ বে ওয়া ক্রুজের যাত্রীরা।
সেন্টমার্টিন থেকে মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল ৩ টায় কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে জাহাজটি।
রাত ৯ টার দিকে গভীর সমুদ্রে আটকে যায় জাহাজটি। জাহাজটিতে ১ হাজার ৩০০ পর্যটক ছিলো বলে জানা গেছে।
বুধবার (২১ ডিসেম্বর) ভোর ৫ টার কিছু পর কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে আসে বে ওয়ান থেকে পর্যটকদের স্থানান্তরিত হওয়া বার আউলিয়া জাহাজটি। ফেরত আসা যাত্রীরা এ সময় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
বিশেষ করে নারী পর্যটকেরা জানান, ছোটো বাচ্চা আর বয়স্ক মানুষের ভোগান্তি ছিলো চরমে। অনেকে বসার জায়গা না পাওয়ায় ১৪ ঘণ্টা ধরে দাড়িয়ে ছিলেন।
ওই জাহাজে থাকা এক চিকিৎসক দম্পতি জানান, জাহাজ কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা আর অসহযোগিতা ছিল চরম। জাহাজের ১৫ শতাংশ যাত্রীকে খাবার দেওয়া হয়েছে মাত্র।
এই চিকিৎসক দম্পতি বলেন, আগের দিন ভোর ৫ টায় তারা ঘাটে আসে সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য। আর পরদিন ভোর ৫ টায় ফিরেছেন। সেন্টমার্টিন দেখার সুযোগও হলো না। মাত্র ৪৫ মিনিট দ্বীপে অবস্থান করার সুযোগ হয়েছিলো।
ঢাকা থেকে আসা আরেক দম্পতি জানান, সমুদ্র উত্তাল ছিল। এ সময় বারবার বলার পরও কর্তৃপক্ষ লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করেনি। সেই সাথে তিনটি আলু সিংগারার দাম রাখা হয়েছে ১০০ টাকা, খিচুড়ির দাম রাখা হয়েছে ২৫০ টাকা।
আরেক পর্যটক জানান, তিনি সাড়ে ৭ হাজার টাকা দিয়ে টিকেট কিনেছেন কেবিনের। তাকে খাবারও দেওয়া হয়নি। তার স্ত্রী জানান, বাচ্চাদের নিয়ে রাতভর সমুদ্রে ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতা হলো।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে কর্ণফুলী ক্রুজ লাইনের কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম জানান, জোয়ার ভাটাজনিত কারণে কক্সবাজার থেকে বারো আউলিয়া জাহাজে করে গভীর সমুদ্র থেকে কক্সবাজার ঘাটে যাত্রীদের ফেরত আনতে সময় লেগেছে।
এতে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল না বলে দাবী করে তিনি বলেন, যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করার মতো পরিস্থিতি হয়নি বলেই লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হয়নি। জাহাজে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট ছিলো বলে তিনি জানান।
খাবার সকল যাত্রী না পাওয়া নিয়ে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, সবাইকে খাবার দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। খাবারের অতিরিক্ত দাম নেওয়া নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাহাজের খাবারের দোকান কর্তৃপক্ষ অন্যজনকে ভাড়া দিয়েছে, এখানে জাহাজ কর্তৃপক্ষের কোনো হাত নেই।
তিনি জানান, এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, দূর্ঘটনা নয়। সকল যাত্রী নিরাপদে ফিরেছে এবং এ রকম আর সমস্যা হবে না বলেও জানান তিনি।
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটের কিছু অংশে নাব্যতা সংকটের কারণে জাহাজ চলাচল এ বছর বন্ধ রয়েছে।
কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুটো জাহাজ সেন্টমার্টিন যাতায়াত করে পর্যটকদের নিয়ে। তবে প্রায়ই জাহাজ পৌঁছাতে দেরিসহ নানান অভিযোগ শোনা যায় পর্যটকদের কাছ থেকে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে হাজার খানেক পর্যটক নিয়ে বে ওয়ান ক্রুজ জাহাজটি সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ঘাট থেকে রওয়ানা হয়েছিল। দুই ঘণ্টা চলতে না চলতেই জাহাজের ইঞ্জিন ত্রুটির কারণে আগুন ধরে যায়। সেখানকার আগুন ও ধোঁয়ায় পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনার সময় ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জাহাজে থাকা সবাইকে লাইফ জ্যাকেট পরানো হয়েছিল।
এমএফও