চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে বিন হাবিব বিডি লিমিটেড নামের একটি এলপিজি কোম্পানির ১৩ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মো. আরিফ এবং লক্ষ্মীন্দ্র দাশ ওরফে নিলয় দাশ নামের দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে কর্ণফুলী থানা পুলিশ। পরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়।
কর্ণফুলী থানা পুলিশ জানায়, ৮ মে সকালে চরলক্ষ্যা এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে আরেকটি সূত্রের দাবি, আসামিদের আগের রাতে গ্রেপ্তার করা হলেও সারারাত দেন-দরবারের পর তাদের পরদিন সকালে ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার মো. আরিফ (২৬) কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী আলিম উদ্দিন বাড়ির মৃত পেয়ার আহম্মদ মেম্বারের ছেলে। অপর আসামি লক্ষ্মীন্দ্র দাশ ওরফে নিলয় দাশ (২০) কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলার বরঘোপ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম পাড়া বিদ্যুৎ মার্কেট এলাকার যদু দাশের ছেলে। তাদের বিরুদ্ধে কর্ণফুলী থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
চট্টগ্রামের আদালত সূত্রে জানা গেছে, আসামি মো. আরিফের বিরুদ্ধে ১৩ লাখ টাকার ছিনতাইয়ের ঘটনায় প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর নিলয় দাশ আদালতে জানান, ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আরিফ। সে গ্রেপ্তারের পর স্বীকার করেছে, পুরো ছিনতাই পরিকল্পনায় আরিফের ভূমিকা ছিল এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজনের নামও তদন্ত কর্মকর্তাকে জানিয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই পরিতোষ দাশ বলেন, ‘মামলাটি মূলত প্রতারণার অভিযোগে রুজু করা হলেও তদন্তে এটি সরাসরি ছিনতাইয়ের ঘটনা হিসেবে উদঘাটিত হয়েছে।’
ঘটনার শুরুতে কোম্পানির অর্থ পরিবহনকারী কর্মচারী মো. সেলিম (৩৩) নিজেই ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়ে থানায় প্রতারণার মামলা দায়ের করেছিলেন। ওই মামলার বাদি ছিলেন কোম্পানির হেড অব এইচআর অ্যান্ড অ্যাডমিন মো. সালে নুর ওরফে সাজ্জাদ (৪৪)। তিনি গত ৬ এপ্রিল কর্ণফুলী থানায় মামলা দায়ের করেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, অফিস সহকারী পদে কর্মরত সেলিম গত ৩ ও ৫ এপ্রিল এলপিজি বিক্রির ১৩ লাখ ৪৯ হাজার ৬৮০ টাকা বিভিন্ন পরিবেশকের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন। এরপর ৫ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান বিন হাবিবকে ফোন করে জানান, টাকা ছিনতাই হয়ে গেছে।
কিন্তু ঘটনাটি যাচাই করতে গিয়ে কর্তৃপক্ষ দেখতে পায় ছিনতাইয়ের কোনো বাস্তবতা নেই। সন্দেহ গড়ে ওঠে সেলিমের বিরুদ্ধে। এক পর্যায়ে সেলিম স্বীকার করেন, টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে তিনি ছিনতাইয়ের গল্প সাজিয়েছিলেন এবং পরে টাকা ফেরতের আশ্বাসও দেন।
তবে স্থানীয়দের সক্রিয় হস্তক্ষেপে পুলিশ তদন্তে গতি আনে। তখনই বেরিয়ে আসে, ঘটনাটি সাজানো নয়—বাস্তবেই ছিনতাই হয়েছে। তদন্তে জানা যায়, ছিনতাইয়ের ঘটনায় অন্তত ৪–৫ জন অংশ নিয়েছিল এবং তারা ঘটনার পরপরই টাকা ভাগাভাগি করে কক্সবাজারে বেড়াতে যান। এখনও কয়েকজন কক্সবাজারে অবস্থান করছেন বলেও পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানার ওসি মুহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘১৩ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় আরিফ ও নিলয় দাশকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’
জেজে/ডিজে