বিদ্রোহের দূর্গে চিড়, চট্টগ্রাম সিটির ভোটযুদ্ধে দ্বিতীয় ‘আত্মসমর্পণ’ বিমর্ষ এরশাদের

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের সাজানো দূর্গে চিড় ধরতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে। এলাকায় জনপ্রিয়তা ও প্রভাব থাকার পরও সদ্য সাবেক কাউন্সিলরদের অনেকে এবার দলের মনোনয়ন পাননি। এই সংখ্যা একডজনেরও বেশি। দলের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে এদের অনেকেই এবার ভোটযুদ্ধে নামার প্রস্তুতি সেরেছেন। যে কোনো মূল্যে নির্বাচন করবেন— এমন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে এদের প্রায় সবাই নির্বাচনী মাঠও অনেকটা গুছিয়ে আনেন। তবে দলের ভেতরের চাপ, শীর্ষ নেতাদের আশ্বাসের পাশাপাশি প্রশাসনের চাপের মুখে অনেকেই ‘আত্মসমর্পণ’ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

সবশেষ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নির্বাচন থেকে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী এসএম এরশাদ উল্লাহ। দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে এবারের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি।

মহানগর আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ যারা রয়েছেন তাদের সবাইকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য ‘কনভিন্স’ করার চেষ্টা করছেন তিনি। আগামী কয়েকদিনে আরও কয়েকজন নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে এই সূত্র।

বিদ্রোহের দূর্গে চিড়, চট্টগ্রাম সিটির ভোটযুদ্ধে দ্বিতীয় ‘আত্মসমর্পণ’ বিমর্ষ এরশাদের 1

শনিবার (৯ জানুয়ারি) নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছেন ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী এসএম এরশাদ উল্লাহ। দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে এবারের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হন তিনি। এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হলেন আবদুস সবুর লিটন। নির্বাচন কমিশন অফিসে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আইনি সুযোগ না থাকায় লিখিতভাবে বিষয়টি সকলকে জানাচ্ছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন এরশাদ উল্ল্যাহ।

মনোনয়নবঞ্চিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে এরশাদ উল্লাহ প্রথম জন— যিনি দলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন। তবে বিদ্রোহীর তকমা পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। এর আগে বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নুরুল আলমকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান আরেক ‘বিদ্রোহী’ আব্দুল মান্নান

এদিকে সদ্য সরে দাঁড়ানো এরশাদ দলের কাছে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম ও রামপুরের দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী লিটনকে বিজয়ী করতে সামনের দিনগুলোতে কাজ করবেন।

এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন আব্দুস সবুর লিটন। তিনি ২০১০ সালের চসিক নির্বাচনে রামপুরের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এরশাদ স্থানীয় রাজনীতিতে আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তারই পরামর্শে মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকার মধ্যস্থতায় নির্বাচন থেকে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন এরশাদ।

এর অংশ হিসেবে শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) রাতে দেলোয়ার হোসেন খোকার বাসায় এরশাদ ও লিটনকে নিয়ে বৈঠক করেন হালিশহর থানা ও রামপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা। সেখানেই এরশাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। পরে শনিবার রাতে এরশাদের বাসায় এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়।

এরশাদের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে দেলোয়ার হোসেন খোকা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এরশাদ দলের ত্যাগী কর্মী। বয়সে আমাদের জুনিয়র তবে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। লিটনও আমাদের সাথে রাজনীতি করেছে। দুজনের সাথেই আমার সম্পর্ক আছে। আমি দুজনের সাথে আলাপ করে মহানগর আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার বিষয়টি এগিয়ে নিয়েছি। এরশাদ খুব ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm