বিদ্রোহী না দল— মনোনয়ন ঝড়ে পিছু হটছে কে, শেষ উত্তর বিকেল ৪টায়
হুঙ্কার-শাসানিতেও অনঢ় বেশিরভাগ বিদ্রোহী
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে শীর্ষ নেতাদের সিদ্ধান্তহীনতা চরম পৌঁছেছে। যদিও শীর্ষ সব নেতা এর মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিষয়ে কড়া নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন। তবুও হাল ছাড়ছেন না বিদ্রোহীরা। নেতাদের চাপের মুখে কেউ কেউ নির্বাচনের বিষয়ে নমনীয়তা দেখালেও যেকোন মূল্যে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর অনেকে। এর মধ্যে ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে কাউন্সিলর বিদ্রোহীদের নিয়ে যে বর্ধিত সভা হওয়ার কথা ছিল সেটি স্থগিত হয়েছে ঠিক, কিন্তু ওবায়দুল কাদেরের সিদ্ধান্তের দিকেই শেষ মুহূর্তেও তাকিয়ে আছেন অনেকে।
বিদ্রোহী কাউন্সিলরদের বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা নির্বাচন করবেন। বিদ্রোহীদের প্রত্যাহার করতে হবে। কেউ যদি এই সিদ্ধান্ত না মানে তার ব্যাপারে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে শনিবার (৭ মার্চ) সন্ধ্যায় এক সমাবেশে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও বিদ্রোহীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও বলেছেন বিদ্রোহী প্রার্থীদের কোন দায়দায়িত্ব নেবেন না তিনি।
এর মধ্যে শনিবার রাতে বেশকিছু বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীকে আরও একবার নিজের বাসায় ডেকে কঠোরভাবে শাসিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। সেখানে একইভাবে তিনি বিদ্রোহীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পরামর্শ দেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে নগরীর নন্দনকাননে মোশাররফের বাসায় এই বৈঠক চলে রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত চলা ওই বৈঠকে যোগ দেন বেশকিছু কাউন্সিলর প্রার্থী। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ১৫ থেকে ২০ জন বিদ্রোহী কাউন্সিলর ওই বৈঠকে যোগ দেন। সেখানে কয়েকজন প্রার্থী নিজেদের ক্ষোভের বিষয়ে বলতে চাইলে তাদের থামিয়ে দেন মোশাররফ। বলেন, ‘যদি ক্ষোভ থাকে, তোমাদের যা ইচ্ছা করতে পার। আমি কিন্তু দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না।’ ওই সময় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে ৯০ শতাংশ বিদ্রোহী প্রার্থীই সেখানে যাননি।
নেতাদের এমন কঠোর অবস্থানের কথা শুনে শেষ মুহূর্তে এসে বিপাকে পড়েছেন দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে নামা প্রার্থীরা। তাদের কেউ কেউ বলছেন দলের সাধারণ সম্পাদকের সিদ্ধান্ত জেনে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। আবার কেউ বলছেন দল যা-ই বলুক তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়াই আছে।
২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডের আব্দুল কাদের বলেন, ‘উনাদের সিদ্ধান্তটা উনাদের, আমরাও সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি আমরা নির্বাচন করবো। এখানে ভুলভ্রান্তি আছে উনারাও জানেন। এখানে আমরা ৫ বছর কাজ করেছি। ৩৭ বছর তো রাজনীতিতেই ছিলাম। সরকারের যেমন উন্নয়নের ধারাবাহিকতা দরকার আছে, আমাদেরও তেমন ধারাবাহিকতার বিষয় আছে। জনগণ চায় আমি নির্বাচন করি। কপালে যাই আছে হবে। আমি নির্বাচন করবো।’
অন্যদিকে ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়ার আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমরা একেবারেই সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণসহ নেতাদের জানিয়েছি মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে। উনারা উনাদের কথা বলেছেন। সবাই নির্বাচন না করতে বলছেন। আমাদের দাবি থাকবে সাধারণ সম্পাদক এসে আমাদের অভিযোগগুলো প্রধানমন্ত্রীকে জানাক। প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হলেও আমরা সান্ত্বনা পাব। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না।’
অন্যদিকে ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোর্শেদ আকতার চৌধুরী বলেন, ‘আমি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি প্রধানমন্ত্রী বরাবর। মোশাররফ ভাইসহ মহানগরের নেতৃবৃন্দকেও জানিয়েছি। আমি এর কোন জবাব পাইনি। এলাকার ভোটাররা চায় নির্বাচন করি। নির্বাচন তো করতে হবে।’
ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব বর্তমানে ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে আছেন। সেখান থেকে গত রাতে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপে জানিয়েছেন, ‘প্রার্থিতা আমি প্রত্যাহার করবো না।’ আন্দরকিল্লা-চকবাজার-দেওয়ান বাজার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আনজুমান আরা বেগমও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন না বলে জানিয়েছেন ইতিমধ্যে।
অন্যদিকে লালখান বাজার ওয়ার্ডের বিদ্রোহী প্রার্থী দিদারুল আলম মাসুম, জামালখান ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কিষাণ চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন দলীয় চাপের মুখে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে শনিবার (৭ মার্চ) বিকালেই ৩৭ নং উত্তর-মধ্য হালিশহর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর শফিউল আলম চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস থেকে তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। গত রাতে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘হুমকি ধমকিতে আমার স্বাভাবিক জীবন বিপন্ন। কাউন্সিলর হতে গিয়ে মারামারি করবো নাকি? তাই সরে দাঁড়ালাম। তবে এলাকার মানুষের ভালোবাসা মনে থাকবে আজীবন।’
এদিকে আওয়ামী লীগের একজন নেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, বিদ্রোহী কাউন্সিলরদের সাথে বর্ধিত সভা একেবারে বাতিল না করে ভিন্ন আঙ্গিকে হলেও করা যায় কিনা এই বিষয়ে কথা বলতে শনিবার (৭ মার্চ) সন্ধ্যার পর ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বাসভবনে যান নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। সেখানে তিনি প্রায় দুই ঘন্টা অবস্থান করেন। নগর আওয়ামী লীগের সেই সূত্র বলছে, রোববার (৮ মার্চ) বিকেল তিনটার দিকে কেসিদে রোডের অস্থায়ী কার্যালয়ে নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের থাকার সম্ভাবনা নেই। তবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনসহ শীর্ষ নেতারা।
এআরটি/সিপি