পরিবারের প্রায় সবাই বিদেশে চলে যাওয়ার পর এবার চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ, তার স্ত্রী, সন্তান, ভাইসহ ১৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। একইভাবে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। এই দুজনও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পরপরই দেশ ছেড়েছেন। সাইফুল আলম মাসুদ ও সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এই দুটি আদেশ দেন।
আদালতে দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যেকোনো সময় এরা দেশত্যাগ করতে পারেন বলে দুদক জানতে পেরেছে। এ জন্য তাঁদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়।
চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। একইভাবে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার করে বহু বাড়ি ক্রয়সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।
সাইফুল আলম মাসুদ ছাড়াও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া তার পরিবারের অন্যরা হলেন— স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলম, সাইফুল আলমের ভাই মোহাম্মদ আবদুল্লাহ হাসান, ভাই ওসমান গনি, ওসমানের স্ত্রী ফারজানা বেগম, ভাই আবদুস সামাদ, সামাদের স্ত্রী শাহানা ফেরদৌস, ভাই রাশেদুল আলম, ভাই সহিদুল আলম, ভাই মোরশেদুল আলম এবং এস আলমের পূর্বপরিচিত মিসকাত আহমেদ।
দুদকের আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে গত বছরের ৪ আগস্ট ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার ‘এস আলম’স আলাদিন’স ল্যাম্প’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে প্রকাশিত সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সাইপ্রাস ও অন্যান্য দেশে ১০০ কোটি ডলার পাচারের অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে দুদক।
অনুসন্ধানকালে জানা যায়, সাইফুল আলম মাসুদ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যেকোনো সময় দেশ–বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন। এতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ না করা গেলে অভিযোগ প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে পড়বে। পরে আদালত শুনানি নিয়ে সাইফুল আলমসহ অন্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন।
এদিকে একই আদালতে দুদকের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে, সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারসহ অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে। দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাইফুজ্জামান বিদেশে অর্থ পাচার করে নিজ নামে, পরিবারের সদস্যদের নামে যুক্তরাজ্যে ৩৫০টি বাড়ি কিনেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিনি বাড়ি কিনেছেন ২২৮টি। আর যুক্তরাষ্ট্রে নয়টিসহ অন্যান্য দেশেও তিনি বাড়ি কিনেছেন। এর বাইরে অবৈধভাবে দেশেও তিনি সম্পদ অর্জন করেছেন বলে জানা যায়।
সাইফুজ্জামানের দুর্নীতি ও অর্থ পাচার নিয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর কাতারভিত্তিক আল-জাজিরা ‘দ্য মিনিস্টার্স মিলিয়নস’ শিরোনামের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, সাইফুজ্জামান শুধু যুক্তরাজ্যেই ৩৬০টি বাড়ির মালিক। এর বেশির ভাগই বার্কলি গ্রুপের মতো শীর্ষস্থানীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা। বাড়িগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য ৩২ কোটি ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮২৪ কোটি টাকার বেশি। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র ও দুবাইয়েও তার সম্পদ রয়েছে।
সিপি