২০১২ সালের বিধিমালা বাতিল করে নতুন বিধিমালা প্রণয়ন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ বিধিমালায় ‘যাত্রী’ বলতে বিদেশ থেকে আসা কোনো যাত্রীকে বোঝানো হয়েছে। সবার সুবিধার্থে নতুন বিধিমালাটি তুলে ধরা হলো-
আকাশ এবং জলপথের যাত্রী
১. কোনো যাত্রী কর্তৃক আমদানিকৃত যুক্তিসংগত পরিমাণের খাদ্যদ্রব্য, পরিধেয়, গৃহস্থালি বা অন্যবিধ ব্যক্তিগত সামগ্রী, যার প্রতিটি আইটেমের ওজন ১৫ কেজির বেশি হবে না।
২. আকাশ এবং জলপথে আসা ১২ বছর বা তার বেশি বয়সের যাত্রীর সঙ্গে আনা হাতব্যাগ, কেবিনব্যাগ বা অন্য উপায়ে আনা মোট ৬৫ কেজি ওজনের অতিরিক্ত নয়, এমন ব্যাগেজ সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়া খালাসযোগ্য হবে।
৩. ব্যাগেজের অতিরিক্ত অনূর্ধ্ব ৩৫ কেজি ওজনের আনা পরিধেয় বস্ত্র, ব্যক্তিগত ব্যবহার্য সামগ্রী, বই, সাময়িকী এবং পড়াশোনার সামগ্রী সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়া খালাসযোগ্য হবে।
৪. ১২ বছরের কম বয়সের যাত্রীর ক্ষেত্রে অনধিক ৪০ (চল্লিশ) কেজি ওজনের একটি কার্টন, ব্যাগ বা বস্তায় আনা ব্যক্তিগত ব্যাগেজ সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়া খালাসযোগ্য হবে। তবে এ সুবিধা ছাড়া অন্য কোনো সুবিধা ১২ বছরের কম বয়সের যাত্রীর ক্ষেত্রে হবে না।
৫. ওই ব্যাগেজ খালাসের সময় ঘোষণাপত্রের একটি অনুলিপি সংশ্লিষ্ট কাস্টমস কর্মকর্তার কাছে দাখিল করতে হবে।
৬. একজন যাত্রী দুইটি মোবাইল ফোন সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়া এবং উল্লিখিত পণ্যের প্রত্যেকটির একটি করে তফসিলে উল্লিখিত শুল্ক ও কর পরিশোধ সাপেক্ষে আমদানি করতে পারবেন।
৭. একজন বিদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী ১ লিটার পর্যন্ত মদ বা মদ্য জাতীয় পানীয় যেমন স্পিরিট, বিয়ার, ইত্যাদি সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়া আমদানি করতে পারবেন।
৮. কোনো যাত্রী তফসিল-২ এবং তফসিল-৩ এ উল্লিখিত পণ্য বিদেশ থেকে সঙ্গে না নিয়ে এলে তফসিল-৪ এ বিধৃত ফরমে উল্লেখক্রমে তা বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সিটি সেলস সেন্টার থেকে যাত্রী আসার ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ক্রয় করতে পারবেন।
৯. একজন যাত্রী তার পেশাগত কাজে ব্যবহার্য এবং সহজে বহনযোগ্য যন্ত্রপাতি সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়া আমদানি করতে পারবেন।
১০. একজন যাত্রী অনধিক ১০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালংকার বা ২০০ গ্রাম ওজনের রৌপ্যের অলংকার (এক ধরনের অলংকার ১২টির বেশি হবে না) সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়া আমদানি করতে পারবেন।
১১. একজন যাত্রী বিদেশ থেকে দেশে আসার সময় অনধিক ২৩৪ গ্রাম (২০ তোলা) ওজনের স্বর্ণবার বা স্বর্ণপিণ্ড অথবা ২৩৪ গ্রাম (২০ তোলা) ওজনের রৌপ্যবার বা রৌপ্যপিণ্ড সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ সাপেক্ষে আমদানি করতে পারবেন।
অসুস্থ, পঙ্গু ও বৃদ্ধ যাত্রী
আকাশপথ, জলপথ বা স্থলপথে আগত একজন অসুস্থ, পঙ্গু অথবা বৃদ্ধ যাত্রীর ব্যবহার্য চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও হুইল চেয়ার সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়া খালাস করা যাবে।
গ্রীন এবং রেড চ্যানেল ব্যবহার
১. কোনো যাত্রী শুল্ক ও কর আরোপযোগ্য পণ্য বহন না করলে তিনি বিমানবন্দরের গ্রীন চ্যানেল (যদি থাকে) ব্যবহার করতে পারবেন।
২. গ্রীন চ্যানেল অতিক্রমকারী সর্বোচ্চ ৫% যাত্রীর ব্যাগেজ দৈবচয়নের ভিত্তিতে কাস্টমস কর্মকর্তা কর্তৃক স্ক্যানিং ও পরীক্ষা করা যাবে।
৩. উপ-বিধি (১) ও (২) এ যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো কাস্টমস কর্মকর্তা, যুক্তিসঙ্গত সন্দেহবশত গ্রীন চ্যানেল অতিক্রমকারী যে কোনো যাত্রীর ব্যাগেজ স্ক্যানিং ও পরীক্ষা করতে পারবেন।
কাস্টমস ঘোষণাপত্রের বিধান
১. বিদেশ থেকে আগত সব যাত্রীকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে তফসিল-১ এ বর্ণিত ফরম পূরণ করে ব্যাগেজ ঘোষণা দিতে হবে।
২. যাত্রীর সঙ্গে আনা হয়নি এমন ব্যাগেজের ক্ষেত্রে কাস্টমস হল বা কাস্টমস এলাকা ত্যাগ করার আগেই যাত্রী কর্তৃক কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে তফসিল-১ এ বর্ণিত ফরম পূরণ করে ব্যাগেজ ঘোষণা দিতে হবে।
৩. ভুলবশত অথবা অন্য কোনো অনিবার্য কারণে উপ-বিধি (১) ও উপ-বিধি (২) এর বিধান অনুযায়ী কোনো যাত্রী কর্তৃক ঘোষণা প্রদান করা সম্ভব না হলে আগমনের ৭ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার অব কাস্টমসের নিচে নন এমন কাস্টমস কর্মকর্তার কাছে তফসিল-১ এ বর্ণিত ফরম পূরণ করে তিনি ব্যাগেজ ঘোষণা দিতে পারবেন।
৪. একজন যাত্রী ১ পঞ্জিকা বছরে মাত্র ১ বার আনঅ্যাকোম্পানিড ব্যাগেজ আনতে পারবেন।
মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে
এ বিধিমালায় যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বাংলাদেশি নাগরিক বিদেশে মারা গেলে তার ব্যাগেজ সব ধরনের শুল্ক ও কর প্রদান থেকে অব্যাহতি পাবে।
বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে
এ বিধিমালার অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো যাত্রী তফসিল-২ এবং তফসিল-৩ এ উল্লেখিত পণ্যের অতিরিক্ত বা ভিন্ন কোনো পণ্য (আমদানি নীতি আদেশ বা অন্য কোনো আইনের আওতায় নিয়ন্ত্রিত বা নিষিদ্ধ পণ্য ব্যতীত) আমদানি করলে প্রধান আমদানি ও রফতানি নিয়ন্ত্রকের ছাড়পত্র উপস্থাপন সাপেক্ষে, ন্যায়-নির্ণয়নপূর্বক প্রদেয় সমুদয় শুল্ক-কর, অর্থদণ্ড ও জরিমানা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, পরিশোধ সাপেক্ষে খালাস করতে পারবেন।