বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘বিচারক স্বল্পতা নিরসনে আমি সরকারের সঙ্গে কথা বলব। যদি প্রতিবছর ২০০ জন করে সহকারী জজ নিয়োগ দেওয়া যায়, বিচারক সংকট সমস্যাটা অনেকটা লাঘব হবে। খুব তাড়াতাড়ি না হলেও ধীরে ধীরে হবে।’
বৃহস্পতিবার (১৭ মে) রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জেলা আইনজীবী সমিতির নতুন কমিটির অভিষেক ২০২৪ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর ১০০ জন বিচারক নিয়োগ দিই। বাংলাদেশের মানুষের তুলনায় বিচারকের স্বল্পতা আছে। এখানে অনেকগুলো কোর্ট। কোনো কোর্ট খালি থাকা ঠিক না। সারাদেশে আমাদের ১৩২টি কোর্টে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ করতে হয়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
চট্টগ্রামের আইনজীবী ও বিচারকদের গুরত্বপূর্ণ মতামতকে বিবেচনায় নিয়ে বিচার বিভাগের জন্য দীর্ঘমেয়াদি জুডিসিয়াল প্ল্যান প্রস্তুত করতে চান বিচারপতি ওবায়েদুল হাসান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মামলার জট হ্রাসকরণ, বিচার বিভাগীয় দুর্নীতি নির্মূলকরণ, বিচার কাযক্রমে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিচার সভার মান উন্নয়নসহ বিচার বিভাগের আধুনিকায়নে যদি কোনো পরামর্শ থেকে থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে কমিটির মাধ্যমে লিখিতভাবে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কাছে পাঠাবেন।’
চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনে আইনজীবীদের দাবির প্রসঙ্গ তুলে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘গতবার আইনজীবী বিজয়া সম্মিলনে অনুষ্ঠানে এসে বলেছিলাম, চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন এতদিনেও কেন হয়নি, তা দেখব বলেছিলাম। আজও বলছি বিষয়টি বিবেচনা করবো, চিন্তা করে দেখবো।’
তিনি বলেন, ‘আমার পূর্বসূরীরাও চট্টগ্রামে এসেছেন। তাদেরকেও সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের কথা বলা হয়েছিল। দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও কেন সার্কিট বেঞ্চ হয়নি, সেটির আসল কারণ উদঘাটন করতে হবে। আদৌ সার্কিট বেঞ্চের প্রয়োজন আছে কি-না, তাও দেখতে হবে।’
ভারতের আন্দামান, ‘জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চ রয়েছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত চারজন বিচারপতিকে আন্দামান ও জলপাইগুড়িতে পাঠাবো। তারা দেখে আসবেন।’
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘উচ্চ আদালতে বিচারকাজ পরিচালনায় আমাদেরও খুব হিমশিম খেতে হয়। আমাদের অনেক কাজ করতে হয়। সারাদিন কাজ করি। সবচেয়ে বেশি মামলা বাংলাদেশে নিষ্পত্তি হয়।’
তিনি বলেন, ‘১৯৮২ সালে সরকার কুমিল্লা, সিলেট, যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল, ঢাকাতে স্থায়ী বেঞ্চ করেছিল। এখন চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ করা হলে অপর পাঁচটি জেলাও চাইবে।’
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি, বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি জে বি এম হাসান, বিচারপতি মাহমুদুল হক, চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভুঞা, চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ বেগম জেবুননেছা।
আরও উপস্থিত ছিলেন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সহিদুল ইসলাম, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রবিউল আলম, জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী ও ও মহানগর পিপি আব্দুর আব্দুর রশিদ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক।