বিচারকদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে কক্সবাজারে ‘সাধারণ আইনজীবীদের’ ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত মানবন্ধনে শতাধিক আইনজীবী অংশগ্রহণ করেন।
গত ১১ মার্চ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হওয়া একটি ভিডিও বক্তব্যে সাইমুম সরওয়ার কমলকে বলতে দেখা যায়, ‘রামুর একজন শিক্ষক জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা হলো। আমি জজ সাহেবের সাথে কথা বলেছি। ঘটনা মিথ্যা, কোনো ঘটনা নাই। জমিজমা নিয়ে গণ্ডগোল, সেখানে কোনো মারামরি ঘটে নাই, কোনো ভিডিও ফুটেজ নাই, সাক্ষী নাই। কিন্তু একজন পেশকার জজ সাহেবকে ম্যানেজ করে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দিয়েছে। আমি বেঁচে থাকতে তাকে জেলে যেতে দেব না। তাকে যদি জেলে যেতে হয়, আমি বেঁচে থাকতে যে জজ সাহেব সেই মিথ্যা মামলা করেছে, তাকে আমি জীবনে ভাত খেতে দেব না। তাকে আমি চাকরি করতে আর দেবো না। এই আমার কথা।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রামুতে শিক্ষকদের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যের একপর্যায়ে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এসব কথা বলেন।
এমন প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সকালে মানববন্ধন করেন আইনজীবীরা।
বক্তারা এ সময় বলেন, একটি প্রকাশ্য সমাবেশে বিচারকের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য আইনের বিরুদ্ধে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন এবং আদালত অবমাননার শামিল। একজন সংসদ সদস্যের মুখে এমন বক্তব্য অত্যন্ত নিন্দনীয়। এই বক্তব্য প্রতাহার করা না হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
মানববন্ধনে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি আমির হোসেন বলেন, ‘সংসদ সদস্য কমলের এমন বক্তব্য কোনভাবে বরদাস্ত করার মত নয়। মানুষের আশা-ভরসার আশ্রয়স্থল হলো আদালত। মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়। স্বাভাবিকভাবে একটি মামলা করায় আদালতের বিরুদ্ধে যদি হুমকি প্রদর্শন করে তা নিন্দনীয়। যারা আইন আদালতে অপদস্থ করতে চায়, বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখা চায় আমরা তাদের বিরুদ্ধে সোচ্ছার থাকবো। তাদের যেকোন ধরনের অপতৎপরতাকে নস্যাৎ করে দেবো।’
দুদকের আইনজীবী আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমরা সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ। একজন সংসদ সদস্য প্রকাশ্য সমাবেশে অশ্লীল ভাষায় আদালতের বিচারককে হুমকি প্রদর্শন করা চরম ধৃষ্টতা। আমরাও আইনের মানুষ। তিনিও আইনপ্রণেতা হিসেবে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে মনে হচ্ছে, আমরা মগের মুল্লুকে বসবাস করছি। বিচারককে ভাত খেতে দেবেন না, চাকরি করতে দেবেন না— এ অধিকার আপনাকে সংবিধান বা সরকার আপনাকে দেয়নি। তাই অচিরেই ক্ষমা চেয়ে এ বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে আমরা আইনজীবীরা আপনার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।’
আইনজীবী রিদুয়ান আলী বলেন, ‘আমরা আজকে এজলাসে না থেকে রাজপথে নেমে এসেছি। একজন সংসদ সদস্য কিভাবে বলতে পারেন বিচারককে তিনি ভাত খেতে দেবেন না। একটি সভ্য দেশে, সভ্য সমাজে এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য সভ্য সমাজ কখনো আশা করতে পারে না। আজকে বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় সেই জায়গায় বিচারকদের বিরুদ্ধে, আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ন্যাক্কারজনক বক্তব্য মেনে নেওয়া যায় না। এ বিষয়ে আইনজীবী পরিষদের পক্ষ থেকে একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস করা হোক।’
মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আবু তাহের, সিনিয়র আইনজীবী নুরুল ইসলাম নুরু, আইনজীবী নুর মোহাম্মদ মামুন, খোরদেশ আলম গুনু বক্তব্য রাখেন।
সিপি