বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি হত্যা, সনাতনী পেশাজীবী ফোরামের নিন্দা

এক সপ্তাহের ব্যবধানের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে দুই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে সাধারণ সনাতনী পেশাজীবী ফোরাম (সাসপেফো)। এক বিবৃতিতে তারা ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক গুলি করে মানুষ মারার ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ভারতের আহ্বান জানায় এবং নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানায়।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে এসব কথা জানায় সাধারণ সনাতনী পেশাজীবী ফোরাম।

সংগঠনের বিবৃতিতে অপরাধী সন্দেহে সীমান্তে এলোপাতাড়িভাবে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করা, আহতসহ লাশ হস্তান্তরে বিলম্ব করা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করারও তীব্র সমালোচনা করা হয়।

সেই সঙ্গে সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়, ভারত সরকার যাতে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে, বিচারবহির্ভূত হত্যায় বিএসএফ সদস্যদের মধ্যে যারা প্রত্যক্ষ এ ঘটনায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়। অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত এবং নিহতের পরিবারকে যেন ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ১৩ বছরের কিশোরী স্বর্ণা দাস নিহত হন।

কিশোরী স্বর্ণা ও তার মা সঞ্জিতা রানী দাস ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে থাকা বড় ভাইকে দেখতে রোববার রাতে কুলাউড়ার লালারচক সীমান্ত এলাকায় একটি দালালচক্রের মাধ্যমে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে। ত্রিপুরা রাজ্যের ইরানি থানার কালেরকান্দি সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে পৌঁছালে বিএসএফ এলোপাতাড়ি গুলি চালালে স্বর্ণা নিহত হয়। এতে তার মা সঞ্জিতা রানীসহ আরও কয়েকজন আহত হন।

পরদিন ২ সেপ্টেম্বর রাতে বিষয়টি জানাজানি হলে বিএসএফ ও বিজিবির পতাকা বৈঠকের পরে লাশ বাংলাদেশে হস্তান্তর করা হয়। পরে ভারতীয় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হয় স্বর্ণা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যের গুলিতে নিহত হয়েছে।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভোরে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে জয়ন্ত কুমার সিংহ নামের এক বাংলাদেশি কিশোরের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় ওই কিশোরের বাবাসহ দুজন আহত হয়েছেন। আর নিহতের মৃতদেহ বিএসএফ নিয়ে গেছে বলে জানায় পুলিশ।

সোমবার ভোররাতে উপজেলার ধনতলা ইউনিয়নের কান্তিভিটা সীমান্তের ৩৯৩ নম্বর পিলার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে৷

নিহত জয়ন্ত কুমার সিংহ (১৫) বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ফকির ভিঠা গ্রামের মহাদেব কুমার সিংহের ছেলে।

এ ঘটনায় মহাদেব ছাড়াও আহত হয়েছেন নিটালডোবা গ্রামের দরবার আলীর ছেলে বাংঠু মোহাম্মাদ।

জানা গেছে, ওই তিন বাংলাদেশি ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল। তাদের দেখতে পেয়ে ডিঙ্গাপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা গুলি করে। এতে কিশোর জয়ন্ত মারা যায়। আর গুলিবিদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন মহাদেব ও বাংঠু।

সাধারণ সনাতনী পেশাজীবী ফোরামের পক্ষে বিবৃতিটি দেন দেবাশীষ মল্লিক সীমান্ত, অভিজিৎ সরকার ও অভিজিৎ কুণ্ডু। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ১৯৭২-২০২৩ সময়কালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ১ হাজার ৯২৩টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আন্তর্জাতিক সীমান্তে এসব নৃশংস মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে এবং ভুক্তভোগীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করা যেতে পারে।

একইসঙ্গে আমরা মনে করি, সরকারের উচিত কারা ঝুঁকি নিয়ে কাঁটা তারের বেড়া পার হচ্ছে এবং কেন হচ্ছে? এর পেছনে কারণ কি? বিজিবি সদস্যরাই-বা কেন এদের আগে উদ্ধার করতে পারছে না—এসব প্রশ্নের উত্তর বের করা।

বিবৃতিতে গত ৪ সেপ্টেম্বর খুলনার সোনাডাঙা এলাকায় ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটূক্তিমূলক পোস্ট করার অভিযোগে উৎসব মন্ডল নামের এক কলেজ শিক্ষার্থীকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানানো হয়।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, যে বা যারা অন্য ধর্ম ও তার অনুসারীদের হেয় করে, আঘাত দেয় বা কটূক্তি করে, তারা নিতান্তই নিজস্ব বিকৃত চিন্তা-ভাবনা থেকেই করে। উৎসব মন্ডলের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কিন্তু সেক্ষেত্রে তাকে বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনানুযায়ী বিচারের আওতায় এনে উপযুক্ত প্রমাণসহ অপরাধ প্রমাণ করে এবং উপযুক্ত সংশোধনের পথ দেখানো উচিত বলে আমরা মনে করি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm