বার্মিংহামে বাংলাদেশ দল যে হোটেলে আছে, ঠিক সেই পাঁচ তারকা হায়াত রিজেন্সি হোটেলেই উঠেছে টিম ইন্ডিয়া। আগামী ২ জুলাই বার্মিংহামের ঐতিহ্যবাহী এজবাস্টনে মুখোমুখি হবে মাশরাফিবাহিনী আর কোহলির দল। এদিকে মাঠে প্রতিপক্ষ হিসেবে সাক্ষাতের বেশ কদিন আগেই টাইগারদের সাথে দেখা হয়ে যাচ্ছে ভারতীয়দের।
একই হোটেলে থাকায় লবিতে, লিফটে, রেস্টুরেন্ট, সুইমিংপুলে সামনের কটা দিন মাশরাফি, মুশফিক, রিয়াদদের সঙ্গে রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের নিয়মিতই দেখা হবে। এরই মধ্যে হয়েও গেছে। কাল ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফের্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ম্যাচের পর আজ দুপুরে টিম বাসে বার্মিংহামের হায়াত রিজেন্সিতে এসে পৌঁছেছে ভারতীয় দল।
মাঠে প্রবল প্রতিপক্ষ হলেও খেলোয়াড়ি জীবনে প্রতিবেশী দেশের ক্রিকেটারদের সাথে টাইগারদের সখ্য অনেক পুরনো। মাশরাফির সাথে যুবরাজ সিং আর ইরফান পাঠানের বন্ধুত্ব অনেক দিনের, হৃদ্ধতাও বেশ। একই ভাবে সাকিবের সঙ্গেও ভারতীয় ক্রিকেটারদের নিবিড় সম্পর্ক। আইপিএলে নিয়মিত খেলার কারণে সম্পর্কটা আরও গাঢ় হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুরে একই হোটেলে অবস্থানের কারণেই দেখা হয়ে যায় দুই সুপারস্টার মাশরাফি বিন মর্তুজা আর মহেন্দ্র সিং ধোনির। বলেই দেয়া যায় বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফির মত ভারতের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও সাবেক ক্যাপ্টেন ধোনিরও এটা শেষ বিশ্বকাপ। দুজনার সম্পর্কও অনেক দিনের। সেই ২০০৪ সালে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভারত গিয়েছিল বাংলাদেশে। সেই সিরিজেই অভিষেক ঘটে ধোনির। ২০০৪ সালের ২৩ মার্চ চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে এই বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেক ঘটেছিল ভারতীয় ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তির।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের অভিষেকের সেই ম্যাচে এক বল খেলে ০ রানে রানআউট হয়ে গিয়েছিলেন ধোনি। আর ঠিক ৪৮ ঘন্টা পর ২৬ মার্চ ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ১১ বলে ১২ রান করা ধোনিকে আউট করেছিলেন তখনকার এক্সপ্রেস বোলার মাশরাফি। সেই থেকেই দুজনার অনেক সখ্য। মাঝে অনেক সিরিজ, সফর, ২০০৭ থেকে ২০১৫ বিশ্বকাপ আর ২০১৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে গিয়ে হয়তো ধোনি-মাশরাফি বহুবার এক হোটেলেই কাটিয়েছেন। হয়তো, সুুইমিংপুল, হোটেল জিম, লবি আর রেস্টুরেন্টে বসে চা-কফি খেয়েছেন। অনেক গালগল্পও করেছেন।
শুক্রবার দুই অভিজ্ঞ যোদ্ধা হোটেলে দেখা হওয়া মাত্র একজন আরেকজনকে ভালবাসার উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ করলেন। কুশলাদি জানতে চাইলেন একজন আরেকজনের। ভারতের সাবেক ক্যাপ্টেন ধোনি আর বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফির টিম হোটেলে সাক্ষাতের সে মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দী করেছেন বিসিবির ফটো জার্নালিস্ট রতন গোমেজ।
বাংলাদেশ দল ২৫ জুন থেকে আছে ছুটিতে। গত দুদিন দলের প্রতিনিধি হয়ে তবুও সংবাদমাধ্যমের সামনে এসেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ আর সৌম্য সরকার। আজ কেউই এলেন না। দুপুরে মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ বের হলেন জুমার নামাজ পড়তে। সৌম্য সরকার কম্পিউটার বিশ্লেষক শ্রীনিকে নিয়ে গেলেন খেতে। স্পিন কোচ সুনীল যোশি আর পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশও কোথায় যেন ঘুরতে বের হলেন।
টিম হোটেলে আছেনই চার-পাঁচজন ক্রিকেটার। বাকিরা ঘুরছেন নানা জায়গায়। ক্লান্তি দূর করে চনমনে হয়ে ওঠার বিষয় তো আছেই, লম্বা এ ছুটির পেছনে আরও একটা বিষয় কাজ করেছে। যে মাঠে বাংলাদেশ ২ জুলাই ভারতের বিপক্ষে খেলবে, সেখানে ১ জুলাইয়ের আগে আসতেই পারবে না বাংলাদেশ। পরশু এজবাস্টনে যে খেলবে ভারত-ইংল্যান্ড। ৩০ জুন পর্যন্ত মূল ভেন্যু অন্যদের ‘দখলে’ থাকায় বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টকে উৎসাহিত করেছে পাঁচ দিনের ছুটি দিতে। পরশু মূল ভেন্যুর বাইরে অন্য কোনো মাঠে বাংলাদেশ শুরু করবে অনুশীলন।
লম্বা এ ছুটি ভীষণ উপকারে এসেছে মাহমুদউল্লাহর। ক্রাচে ভর করে সাউদাম্পটন হোটেল ছাড়ছেন—এ দৃশ্য ভাইরাল হয়েছিল ফেসবুকে। আজ বেরিয়েছেন ক্রাচ ছাড়াই। পায়ের মাংসপেশিতে যে চোট ছিল সেটি দ্রুতই কাটিয়ে উঠছেন। দুদিন আগেও মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে সম্ভাবনা পঞ্চাশ-পঞ্চাশ ছিল। আজ তাঁকে দেখে মনে হলো খেলার সম্ভাবনা বেড়েছে অনেকখানি । দলের সবাই আশাবাদী, ভারত-ম্যাচে পাওয়া যাবে মাহমুদউল্লাহকে। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি নিজেই খেলতে উন্মুখ ম্যাচটা।
ছুটিটা ভালো সময়েই পেয়েছে বাংলাদেশ।