বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা ফ্লাইওভারে আপত্তি নেই বন্দরের
বন্দরের সামনে সড়কে ফ্লাইওভার করতে মানতে হবে ৬ নির্দেশনা
চট্টগ্রাম নগরীর লালখানবাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের ‘বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা’ পর্যন্ত অংশের এলাইনমেন্টে বাধা নেই বন্দরের।
আমদানি-রপ্তানি ও দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে নির্মাণকালে বন্দরের ট্রাক লরি কাভার্ড ভ্যান চলাচল সচল রাখার জন্য মানতে হবে ৬ নির্দেশনা।
চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সমন্বয় সভা থেকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) মেনে নেয় শর্তগুলো।
সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহানের সভাপতিত্বে বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ড রুমে অনুষ্ঠিত সভায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ এবং বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল এম মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন।
শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের ‘বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা’ কাজের সময় বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম যাতে বিঘ্নিত না হয় সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।
নির্দেশনাসমূহ হল—
১. বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা পর্যন্ত সড়কের অনুমোদিত ডিপিপিতে প্রেরিত নকশা অনুযায়ী মূল রাস্তার মধ্যখানে পিলার স্থাপনের মাধ্যমে ফ্লাইওভার নির্মাণের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।
২. নির্মাণকাজ চলাকালীন রাস্তার দুদিকে দুই পাশ চার লেন ফ্রি রেখে নির্মাণ কাজ করতে হবে— যাতে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত না হয়।
৩. ফ্লাইওভারের যে পাশে কেপিআই এলাকা থাকবে সেই পাশে নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে শব্দ নিরোধক উঁচু ফেন্সিং তৈরি করতে হবে।
৪. নির্মাণকালীন সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর এবং বাংলাদেশ পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সাথে সমন্বয় করতে হবে।
৫. বন্দরের বিদ্যমান গেটসমূহে চলাচলকারী ট্রাক লরি প্রয়োজনে সিপিএআর গেটে সাময়িক শিফট ব্যবস্থা করা হবে।
৬. বন্দরের বিদ্যমান গেটসমূহে যাতে পিলার স্থাপন না হয়, সেজন্য প্রয়োজনে স্প্যানের দূরত্ব সমন্বয় করা হবে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বন্দরের কাজের ক্ষতি না হয় মতো কাজ করবে সিডিএ। ফলে আগের নকশা মতোই কাজ হবে এ প্রকল্পের। তবে কিছু সংযোজন বা বিয়োজন হবে মাত্র। প্রকল্পটি শেষ হলে চট্টগ্রামের উন্নয়ন সকলের চোখে পড়বে।’
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘গৃহীত সিদ্ধান্তের ফলে বন্দরের প্রায় চার একর জমি এবং সাধারণ জনসাধারণের প্রায় আড়াই একর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না। এতে সাধারণ জনগণের স্থাপনা বা ক্ষতিপুরণ দিতে হবে না । ফলে বন্দরের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।’
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম শহরের শিল্পাঞ্চল (ফৌজদারহাট শিল্পাঞ্চল, নাসিরাবাদ শিল্পাঞ্চল, কালুরঘাট শিল্পাঞ্চল) ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ চলছে।
ইতিমধ্যে সল্টগোলা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত পিলার বসানোর কাজ শেষ এবং অর্ধেক এলাকায় গার্ডারও বসানো হয়েছে। এখন কাজ শুরু হবে সল্টগোলা রেলক্রসিং থেকে কাস্টমস পর্যন্ত এলাকায়।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান ।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু বিদ্যমান আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে জমিয়তুল ফালাহ গেটের সামনের অংশ থেকে দুটো উইং দুই দিক দিয়ে চলে যাবে টাইগারপাস পর্যন্ত। সেখান থেকে দুটি উইং এক হয়ে দেওয়ানহাট ওভারপাসের ওপর দিয়ে পতেঙ্গার দিকে চলে যাবে। অপর প্রান্ত বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত থাকছে এবং বর্তমানে সড়ক ও জনপথের ৫ কিলোমিটার রোডের কারণে সেতু পর্যন্ত (প্রায় ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ) মানুষ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবে।’
এ প্রকল্পটি ২০১৭ সালে গ্রহণ করা হলেও কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের জুলাই থেকে। ২০২০ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বন্দরের আপত্তির কারণে কাজের অগ্রগতি হয়নি। ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পে কাজ দেড় বছরে হয়েছে ৩১ শতাংশ। এটি নির্মাণ করছেন যৌথভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-রেনকিন। এ বর্তমানে এ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
এএস/কেএস/সিপি