বারবার সংঘর্ষ তবুও শালিসে মেটানো হয় মাছের ফাঁড়ের দ্বন্দ্ব

আনোয়ারায় দুপক্ষের সংঘর্ষে জেলে নিহত

দখল ও সংঘর্ষে বারবার হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও শালিসে সমাধান করা হয় আনোয়ারার উপকূলীয় এলাকার মাছধরাকেন্দ্রিক বিবাদগুলো। সাগরে মাছ ধরার জায়গা (ফাঁড়ি) দখল নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় গত রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) এক জেলে নিহত হয়। ওই ঘটনায় একজনকে আটক করা হলেও উভয়পক্ষের কেউই এখনও মামলা দায়ের করেনি। তবে স্থানীয়রা বলছে আনোয়ারার উপকূলীয় অঞ্চলে এমন সংঘর্ষের ঘটনা একেবারেই নতুন নয়। সাগরের মাছ ধরা ও মাছ বিক্রির স্থান নিয়ে বারেবারে সংঘর্ষ ও বারেবারে সালিশি সমাধান হয় সেখানে।

ঘটনাসূত্রে জানা যায়, আনোয়ারার উপকূলীয় অঞ্চল রায়পুরের উত্তর পরুয়াপাড়া এলাকার ঈদগাঁ ঘাটে আবদুর রশিদ নামের এক ব্যক্তির বোট নিয়ে মাছ ধরতে যান জেলে মো. আবদুল কাদের। ওই সময়ে মাছ ধরার ফাঁড় দখল নিয়ে রশিদ ও তাহেরের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত ও পাড়ে এসে জেলে আবদুল কাদেরের (৪১) মৃত্যু হয়। জেলে আবদুল কাদের উত্তর পরুয়াপাড়া তাহের মাঝি বাড়ির মৃত বশির আহমদের ছেলে।

সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, পরুয়াপাড়া এলাকার ঈদগাঁ ঘাট ও বাতিঘর ঘাটে বঙ্গোপসাগরের মাছ ধরার ফাঁড় দখল নিয়ে রশিদ ও তাহেরের লোকজন ছাড়াও আরও একটি সিন্ডিকেটের নেতারা এ বিরোধের সাথে জড়িত। তার জেরেই রোববার সাগরে এমন হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে নিহত জেলের পরিবার বলছে, সাগরে নৌকা নিয়ে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বাঁশের তীব্র আঘাতে আহত হলে পাড়ে আসার পর তার মৃত্যু হয়েছে।আবদুল কাদেরের। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এমন আঘাত করা হয়। আনোয়ারা থানা পুলিশ হত্যার অভিযোগে একই এলাকার উত্তর পরুয়াপাড়া পাইকের বাড়ির মৃত ছৈয়দ নুরুরের পুত্র মোহাম্মদ তাহের (৩৫) কে আটক করে।

নিহতের ছোট ভাই আবদুর রশিদ বলেন, ‘আমার ভাই একজন প্রবাসী। কয়েক মাস আগে বিদেশ থেকে আসছে। সে আমার বোটে সাগরে মাছ ধরতে যায়। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বঙ্গোপসাগরের ইলিশ মাছের ফাঁড় নিয়ে কথাকাটাকাটি হয় তাহেরের সাথে। এক পর্যায়ে তাহের তাকে বাঁশ দিয়ে তাকে আঘাত করে। আহত অবস্থায় সে পাড়ে এসে মারা যায়। আমরা মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) নিয়ে যাওয়া হয় তার ময়নাতদন্তের জন্য। ’

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মৌলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, ‘পরুয়াপাড়া ঘাট ও বাতিঘর ঘাটের ফাঁড় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় একে অপরে সাথে বিরোধ চলে আসছে। সেদিনও আবদুল কাদের মাছ ধরতে গেলে তাহের ও রশিদের লোকজন সাগরে ফাঁড় দখল নিয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে বলে শুনেছি। পরে জানতে পারি আবদুল কাদের মারা গিয়েছে। ’

রায়পুর ইউনিয়ন মৎস্যজীবি সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ছমদ বলেন, ‘ফাঁড় নিয়ে কিছু দন্দ্ব চলছে মাঝিদের মধ্যে। মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশে কয়েকটি সমাধানও করা হয়েছে। জেলেদের মধ্যে মারামারি ঘটনা ঘটেছে সেটা জেনেছি। আবদুল কাদের স্ট্রোক করে মারা গেছে। আমি আর কিছু জানি না। ’

নিহতের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৫০) বলেন, আমার স্বামী দুই মাস হচ্ছে বিদেশ থেকে আসছে। সংসারের কারণের উনি বোটে যান মাছ ধরার জন্য। কিন্তু এসব বিরোধ সম্পর্কে তিনি জানতে না। আজ তাদের বিরোধের বলি হলেন আমার স্বামী। আমরা এটার বিচার চাই।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জেলে আবদুর রহিম (৩০) বলেন, ‘আমি পুরো ঘটনা দেখেছি কিন্তু আমার মাঝির নির্দেশ ছাড়া আমি কিছু বলতে পারব না। ’ অপর বোটে থাকা মাঝি মোহাম্মদ হারুন (৩৭) বলেন, ‘আমরা অন্য বোটে মাছ ধরছিলাম। সাগরে দেখছি দুই বোটের মধ্যে মারামারি হচ্ছে সেটাই দেখেছি আর কিছু না।’

এ বিষয়ে জানতে আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ দুলাল মাহমুদ বলেন, ‘এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কেউ অভিযোগ বা মামলা করেনি। কেউ যদি মামলা বা অভিযোগ করেন তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুরতহালে নিহত আবদুল কাদেরের শরীরে বড় কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের রির্পোট আসলে জানা যাবে কি কারণে মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘ঘটনার পর সন্দেহজনক একজনকে আটক করা হয়েছে।’

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!