আস্থা মাল্টিপারপাসে ১০ হাজার টাকা জমা দিলে মিলবে ১ লাখ টাকার ঋণ, ২০ হাজারে ২ লাখ। সঙ্গে থাকবে পরিবারের সদস্যদের জন্য চিকিৎসা ভাতাও—এরকম লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় প্রায় ২৫ লাখ টাকা। পরে ঋণ না পেয়ে ওই অফিসের দুজনকে আটক করে পুলিশে দিলে বেরিয়ে আসে প্রতারণার আসল চিত্র।
শনিবার (১৮ মে) বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন অক্সিজেন কুয়াইশ রোড এলাকার তারেক বিল্ডিংয়ের ৫ম তলা থেকে দু’জনকে আটক করে ভুক্তভোগীরা। পরে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
দু’জন হলেন মেহেদী হাসান সবুজ (৩৫) এবং মো. জাফরুল হাসান খান (২৮)।
এই বিষয়ে বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা বলেন, শনিবার ওই এনজিওর সদস্যদের ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। তবে সদস্যরা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। পরে সদস্যরা ওই এনজিও’র সঙ্গে জড়িত দু’জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। থানায় আনার পর তাদের প্রতারণার পুরো ঘটনা জানতে পারি।
পুলিশ জানায়, গত ১৯ এপ্রিল নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন অক্সিজেন কুয়াইশ রোড এলাকায় আটক ব্যক্তিরা ‘আস্থা মাল্টিপারপাস সার্ভিস লিমিটেড’ নামে একটি বেসরকারি এনজিওর অফিস খোলেন। গত এক মাস ধরে ওই এলাকার শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে গিয়ে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এনজিও’র সদস্য হওয়ার প্রস্তাব দেন। একইসঙ্গে তাদের আরও কয়েকজনকে সদস্য করার কথা বলে।
পরে সদস্য হওয়ার জন্য ভুক্তভোগীরা অফিসে গেলে অভিযুক্তরা তাদের জানায়, এককালীন ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় দিলে সপ্তাহের মধ্যে ১ লাখ টাকা এবং ২০ হাজার সঞ্চয় দিলে ২ লাখ টাকা ঋণ দিবে। এছাড়াও সদস্যদের পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তাদের চিকিৎসা ভাতাসহ নানান সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।
অভিযুক্তদের কথা বিশ্বাস করে ভুক্তভোগীরা প্রত্যেকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে সদস্যপদ নেয়। ভুক্তভোগীরা প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা জামানত দেয়। পরে তাদের একটি সঞ্চয় ও ঋণ বই দেন অভিযুক্তরা। এসময় অভিযুক্তরা সদস্যদের সঞ্চয় ও ঋণ বইয়ে কাজ আছে বলে নিয়ে যায় এবং জানায় ১৮ মে তাদের ঋণ দেওয়া হবে।
সেই অনুযায়ী, শনিবার সকালে ওই এনজিও অফিসে গেলে তালাবদ্ধ দেখতে পায় ভুক্তভোগীরা। পরে ভুক্তভোগীরা জানতে পারেন, অভিযুক্তরা ঋণ দেবেন বলে এ রকম অনেকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে। ঋণের টাকা না দেওয়ায় মেহেদী হাসান সবুজ এবং মো. জাফরুল হাসান খানকে আটক করে ভুক্তভোগীরা থানায় নিয়ে গেছে। তবে এ ঘটনায় আরও দুই অভিযুক্ত পলাতক রয়েছে।
এ ঘটনায় বায়েজিদ থানায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন সদস্য তাদের বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার প্রেক্ষিতে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ জনের কাছ থেকে সদস্য ফিসহ বিভিন্ন কারণে জামানত হিসাবে টাকা নেয়। পরে আটকদের দেখানো মতে অফিস থেকে ১২৭টি সঞ্চয় ও ঋণ বই এবং ৫৭৬টি সদস্য আবেদন ফরম জব্দ করা হয়।
বিএস/ডিজে