বাদলের আসনে লড়তে চান ৯ জন, আলোচনায় সেলিনা-মনজুর-মোছলেম-বাবলু

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) শূন্য আসনে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত না হলেও রাজনীতির মাঠে-চায়ের আড্ডায় এখন আলোচনার বিষয় একটিই— প্রার্থী কারা? ধানের শীষে আবু সুফিয়ানের প্রার্থিতা অনেকটা নিশ্চিত হওয়ায় সবার আগ্রহের কেন্দ্রে এখন নৌকার প্রার্থী। এই আসনের সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদলের উত্তরসূরী হতে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে মনোনয়নের লড়াইয়ে আছেন কয়েকজন তরুণ নেতাও। তবে আলোচনায় আছে, চান্দগাঁও-বোয়ালখালীর বাসিন্দাদের বাইরের সম্ভাব্য হিসেবে আরও তিনজন ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীর নাম। জল্পনা রয়েছে, ওই তিনজনের যে কোনও একজনকে নৌকার প্রার্থী করে চমক দিতে পারে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ৮ আসন থেকে নৌকার প্রার্থী হতে চান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দীন আহমেদ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আবদুচ ছালাম। এছাড়া ‘হেভিওয়েট’ এই তিন প্রার্থীর পাশাপাশি নৌকার প্রার্থী হতে চান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আব্দুল কাদের সুজন, বিজিএমইএর সাবেক সহ সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব ও ব্যারিস্টার কফিল উদ্দীন।

প্রকাশ্যে মনোনয়নের লড়াইয়ে এই ছয়জন থাকলেও গোপনে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন অন্য তিন প্রার্থী। তারা হলেন প্রয়াত মইন উদ্দীন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র নগরীর কাট্টলীর বাসিন্দা শিল্পপতি এম মনজুর আলম ও জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলু। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও শীর্ষ পর্যায়ে জোর আলোচনা আছে, এই তিনজনের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয়জনের যে কোনও একজনের হাতেই উঠতে পারে নৌকার টিকেট! তবে শেষ পর্যন্ত কার হাতে উঠছে নৌকার টিকিট, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড থেকে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত বর্তমানে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রবীণ রাজনীতিক মোছলেম উদ্দীন আহমেদ। পটিয়া থেকে অষ্টম সংসদ নির্বাচন করে হারার পর গত তিন সংসদ নির্বাচনে চান্দগাঁও-বোয়ালখালী আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন চেয়ে আসছিলেন তিনি। তবে বরাবরই তার মনোনয়নে বাধা হয়ে দাঁড়ান জাসদ নেতা মইন উদ্দীন খান বাদল। তবে এবার বাদলের মৃত্যুতে আগামী চার বছরের জন্য একাদশ সংসদে যেতে চান মোছলেম উদ্দীন। সেজন্য পেতে চান নৌকার মনোনয়ন। তার মনোনয়ন দাবি করে চট্টগ্রাম ৮ আসনের বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যে ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়েছেন অনুসারীরা।

কিছুদিন আগে মোছলেম উদ্দীন নিজেও প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তার মনোনয়ন ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এমনকি চট্টগ্রামের একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেও চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও নেতাকে দিয়ে সুপারিশ করিয়েছেন তাকে যেন এবার মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মোছলেম উদ্দীন দেখা করে মনোনয়ন চাইলেও প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে কিছু বলেননি তাকে। বলেছেন, কাজ করে যেতে। প্রধানমন্ত্রী তাকে জানিয়েছেন, সংসদীয় বোর্ডের সভাতেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। নেত্রী মনোনয়নের ব্যাপারে আমাকে কথা দিয়েছেন তা নয়, তবে তিনি আমার প্রতি সদয় আছেন। নেত্রী আমাকে স্নেহ করেন, আমাকে ভালো জানেন। এ কারণে আমি আশাবাদী। নেত্রীর প্রতি আমার আস্থা আছে। আমি তাঁর কর্মী। তিনি আমাকে কোথাও না কোথাও সেট করবেন।’

এই আসনের নৌকার টিকিটের জন্য গত তিন সংসদ নির্বাচন থেকে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি প্রতি সংসদ নির্বাচনের আগে ব্যাপক হারে ব্যানার পোস্টার ছেপে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। এছাড়া চট্টগ্রাম-৮ আসনের রাজনীতিতে তার অনুসারীদেরও দীর্ঘ দিনের দাবি তাকে যেন এমপি পদে মনোনয়ন দিয়ে শেষ বয়সে মূল্যায়ন করা হয়। রেজাউল করিম নিজেও নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

অন্যদিকে সংসদ নির্বাচন আসলেই সরব হয়ে উঠেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আবদুচ ছালাম। এমনকি গত নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে দুই বার আওয়ামী লীগের প্রাথমিক মনোনয়ন পেলেও মহাজোটের স্বার্থে মইন উদ্দীন বাদলের সঙ্গে চূড়ান্তে লড়াইয়ে ছিটকে পড়েন ছালাম। তবে ছালামের মত মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন মোছলেম উদ্দীন ও রেজাউল করিমও।

এ দুজন মূল্যায়িত না হলেও অপেক্ষাকৃত নবীন ছালামকে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। শুধু নিয়োগ নয়, তার হাত দিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় আলোচনায় আসেন আবদুচ ছালাম। নতুন নতুন প্রকল্প নিয়ে যেমন আলোচনায় আসেন ছালাম, তেমনি অনিয়ম ও ফ্লাইওভার ধ্সসহ নানা কারণে বির্তকেরও জন্ম দেন তিনি। এরপর এ বছরের এপ্রিল থেকে সিডিএ চেয়ারম্যান পদ থেকে তার স্থলে নিয়োগ দেওয়া হয় নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষকে। নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ছালাম ও তার অনুসারীরা আশা করছেন তাকে এবার চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবেই নৌকার টিকিট দেওয়া হবে চট্টগ্রাম-৮ আসনে।

এই তিনজনের বাইরেও প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী নেতা ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বোয়ালখালীর বাসিন্দা এসএম আবু তৈয়ব। চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতি ও ছাত্র সংসদে নেতৃত্ব দেওয়া তৈয়বের বড় ভাই এসএম আবুল কালাম বর্তমানে কুয়েতের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনিও অষ্টম সংসদ সংসদ নির্বাচনে চান্দগাঁও-বোয়ালখালী আসন থেকে নির্বাচন করে ধানের শীষের মোরশেদ খানের কাছে হেরেছিলেন। এর আগে গত কয়েকটি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ না দেখালেও এবারের উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে চান ব্যবসায়ী আবু তৈয়ব। তবে তিনিও সব সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ওপর।

তৈয়বের পাশাপাশি মনোনয়নের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবদুল কাদের সুজন। তিনি দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন বলে জানিয়েছেন। গত সংসদ নির্বাচন থেকে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন পেতে নানা প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। যদিও কয়েক মাস আগে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলীয় প্রার্থীর কাছে হেরেছিলেন সুজন। ‘নৌকার বিদ্রোহী’ হিসেবে শাস্তির মুখোমুখি হয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে ক্ষমা পেলেও তার ভাগ্যে মনোনয়ন জুটবে কিনা— এ নিয়ে রয়েছে জোর সন্দেহ।

চট্টগ্রাম নগরীর মোহরার বাসিন্দা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার কফিল উদ্দীনও গত সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশা করে এলাকায় ব্যাপক পোস্টারিং করেন। আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে তার রয়েছে ঘনিষ্ঠতা। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল মামলার আইনজীবী হিসেবে আইনি ভূমিকা রেখে তিনি পরিচিত পান সরকারি মহলে। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনার পর মনোনয়ন না পেলেও এক মাস ধরে নৌকার প্রার্থী মইন উদ্দীন খান বাদলের সঙ্গে প্রচারণায় বিরামহীন কাজ করে পরিচিতি পান ব্যারিস্টার কফিল উদ্দীন। ক্লিন ইমেজের তরুণ এ আইনজীবীও চান নৌকার মনোনয়ন নিয়ে সংসদে যেতে।

তবে এই ছয়জনের বাইরে যে তিনজনের কথা সরকারের শীর্ষ মহলে আলোচনায় রয়েছে তারা কেউই প্রকাশ্যে এ বিষয়ে কথা বলছেন না। উপনির্বাচনে এই আসনে সবচেয়ে আলোচিত নাম তিনবারের নৌকার প্রার্থী সদ্যপ্রয়াত সাংসদ মইন উদ্দীন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার রয়েছে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক ও নিবিড় যোগাযোগ। তাদের মাঝে যে চমৎকার একটা সম্পর্ক রয়েছে সেটি বাদলের ওপর সংসদে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীও সেটা বলেছেন। এছাড়া নানা সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেলিনা খানের যোগাযোগটা অতি সহজেই হতো। এই আসনের অনেক ভোটার এবং বাদলের অনুসারীরাও চাচ্ছেন প্রয়াত সাংসদের দীর্ঘদিনের জীবনসঙ্গী সেলিনা খানকেই তার চেয়ারে বসার সুযোগ দেওয়া হোক। কেননা তিনি বাদলের অনেক অপূর্ণ স্বপ্নের কথা জানেন। অনুসারীরা বলছেন, অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে বাদলপত্নীকেই দরকার। নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্বাচনের আগ্রহ প্রকাশ করে সেলিনা খান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নেত্রীর কাছে সব খবর আছে। সময় হলে সব জানতে পারবেন।’

এদিকে মনোনয়ন লাভের সবচেয়ে সম্ভাবনা রয়েছে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও সাবেক বিএনপি নেতা শিল্পপতি এম মনজুর আলমের। টানা ১৬ বছর আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়েই নিজ এলাকা উত্তর কাট্টলী থেকে নির্বাচিত হন কাউন্সিলর। এরপর আদর্শের বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে দলবদল করে ২০১০ সালের ১৭ জুন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে মেয়রও নির্বাচিত হন। পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন শেষে বিএনপির সমর্থনে দ্বিতীয়বারের মত মেয়র পদে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হন ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল। তবে ভোটের মাঝপথেই ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি রাজনীতি থেকেও সরে আসার ঘোষণা দেন মনজুর আলম। এরপর কয়েক বছর ধরে যোগাযোগ বাড়ান গুরু প্রয়াত মহিউদ্দীন চৌধুরীর পরিবারের সঙ্গে এবং সরকারের শীর্ষ মহলেও। অন্যদিকে আত্মীয়তার সূত্র ধরে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক শিল্পপতির যোগসূত্রে সরকারের শীর্ষ মহলে যোগাযোগ বাড়িয়ে দেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাচ্ছেন— এরকম খবর শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সুনজর তিনি পাননি। তবে সীতাকুণ্ড থেকে নির্বাচন করে সরকারি দলের সাংসদ হন তার ভাতিজা দিদারুল আলম।

তখনই কথা চাউর হয়েছিল তাহলে কি সাবেক মেয়রকে আবার মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়া হবে এবার আওয়ামী লীগ থেকে? সেই আলোচনা কয়েক মাস যেতে না যেতে যখনই হারিয়ে যেতে বসেছে, ঠিক তখনই সামনে আসে চট্টগ্রাম ৮ আসনের উপ নির্বাচন। মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন অনেকটা নির্ভার হওয়ায় মনজুর আলমও চাচ্ছেন এই নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদে যেতে। ইতোমধ্যে সরকারের একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা ও ঘনিষ্ঠ মহলের মাধ্যমে এই বার্তা দলের শীর্ষপর্যায়ে দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে মনজুর আলমের মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ওমরা করতে সৌদি আরব থাকায় মনজুর আলমের মতামত জানা সম্ভব হয়নি।

এই আট জনের বাইরেও মনোনয়নের লড়াইয়ে আলোচনায় রয়েছেন জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলু। প্রধামন্ত্রীর স্নেহভাজন জাপার এ নেতা গত দশম সংসদ নির্বাচনে মহাজোটগতভাবে চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ আসন কোতোয়ালী-বাকলিয়া থেকে নির্বাচন করে সংসদে গেলেও ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে তার ভাগ্যবিপর্যয় ঘটে। জাপা তথা মহাজোটের শীর্ষ ও প্রভাবশালী নেতা হয়েও নিজ আসন কোতোয়ালী তাকে ছাড়তে হয় প্রয়াত মহিউদ্দীন চৌধুরীর পুত্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান নওফেলের কাছে।

সেই নির্বাচনে নওফেল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সরকারের মন্ত্রিসভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী হিসেবে স্থানও পান। যদিও গত সংসদ নির্বাচনে বাবলুকে কক্সবাজার ১ আসনে (রামু-সদর) মনোনয়ন দিলেও সেখানকার স্থানীয় সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমলের অনুসারীদের ‘কলাগাছা’ মার্কা আন্দোলনের মুখে সেখানেও মনোনয়ন টেকাতে ব্যর্থ হন সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দীন বাবলু। এছাড়া চট্টগ্রাম ৮ আসনের মোহরায় বাবলুর নানার বাড়ি এবং চান্দগাঁও আবাসিকের স্থায়ী বাসিন্দা তিনি। যদিও তার জন্মস্থান উত্তর রাউজানে। এসব দিক বিবেচনা করে গত নির্বাচনে তার ত্যাগ ও মহাজোট গঠনে বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাপাকে নির্বাচনে আনতে বাবলুর ভূমিকা থাকা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর গুডবুকে থাকায় তিনি এবার চট্টগ্রাম ৮ আসন থেকে মহাজোটের হয়ে মনোনয়ন পেতে পারেন বলে আলোচনা আছে। জিয়াউদ্দীন বাবলু বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করায় এ বিষয়ে কথা বলতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম ৮ আসনের সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদল মারা যাওয়ায় তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। সংসদ সচিবালয় ইতোমধ্যে বাদলের আসনটি শূন্য ঘোষণা করে ওয়েবসাইট থেকে তার নাম ও ছবি সরিয়ে নিয়েছে। আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যেই যেহেতু উপনির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেই হিসেবেই এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে বাদলের শূন্য আসনে উপনির্বাচন হতে পারে আগামী ৬ জানুয়ারি। মইন উদ্দীন খান বাদল গত ৭ নভেম্বর ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত ২০০৮ সাল থেকে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে ২৮৫/চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেছেন।

ইসি সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম ৮ আসনটি চট্টগ্রাম জেলার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নং ওয়ার্ড এবং বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল ইউনিয়ন, পশ্চিম গোমদন্ডী ইউনিয়ন, পূর্ব গোমদন্ডী ইউনিয়ন, শাকপুরা ইউনিয়ন, সারোয়াতলী ইউনিয়ন, পোপাদিয়া ইউনিয়ন, চরনদ্বীপ ইউনিয়ন, আমুচিয়া ইউনিয়ন ও আহল্লা করলডেঙ্গা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।

চট্টগ্রাম ৮ আসনে মোট ভোটার চার লাখ ৭৫ হাজার ৯৮৮। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ৯২২ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪ জন। এর মধ্যে বোয়ালখালী উপজেলায় ১ লাখ ৬৪ হাজার। কেন্দ্র সংখ্যা ১৮৯ টি।

স্বাধীনতাত্তোর ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে নৌকা প্রতীকে সাংসদ হন আওয়ামী লীগের মরহুম এম কফিল উদ্দিন, দ্বিতীয় সংসদে সিরাজুল ইসলাম, তৃতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির মনজুর মোরশেদ খান, চতুর্থ সংসদে বিএনপির সিরাজুল ইসলাম, পঞ্চম সংসদে বিএনপির সিরাজুল ইসলাম, ৬ষ্ঠ সংসদে জাতীয় পার্টির হয়ে মনজুর মোরশেদ খান, ৭ম ও ৮ম সংসদে বিএনপির মনজুর মোরশেদ খান। এরপর থেকে টানা নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মহাজোটের শরীক জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল সাংসদ নির্বাচিত হন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!