বাদলের আসনে মোছলেম উদ্দিনের হাতেই নৌকা!

চট্টগ্রাম-৮ আসনের (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) উপনির্বাচনে মনোনয়ন দৌঁড়ে অনেকটাই অপ্রতিরোধ্য দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। তিনি এ আসনে এবার নৌকার টিকিট পেতে যাচ্ছেন। বিষয়টি আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। মোছলেম উদ্দীন শুধু বঙ্গবন্ধুর কর্মী হিসেবেই নয়, এ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সবার চেয়েও বয়োজ্যেষ্ঠ ও ত্যাগী নেতা।

উপনির্বাচনে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, প্রয়াত এমপি মইন উদ্দিন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান বাদলসহ অনেকেই আলোচনায় থাকলেও নৌকার টিকিট পেতে যাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মোছলেম উদ্দীন আহমেদ।

তিনি ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ১৯৭২ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে যুবলীগ হয়ে দীর্ঘ বছর প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর সাথে সাধারণ হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের। বাবুর মৃত্যুর পর মোছলেম উদ্দিন আহমেদ গত ৭ বছর ধরে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

সম্প্রতি নিজের মনোনয়ন লাভের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সাথে আলাপকালে প্রবীণ এ নেতা বলেছেন, ‘আমি বাসদ করিনি, জাসদ করিনি, আব্দুর রাজ্জাকের বাকশাল করিনি। আজীবন আওয়ামী লীগ করেছি। মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কারাভোগ করেছি। আমার বাড়িঘর ভাংচুর হয়েছে। চট্টগ্রামের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে থেকে কাজ করেছি। আমি রাষ্ট্রদূত হতে চাইনি, ব্যাংকের পরিচালক হতে চাইনি, হতে চাইনি সিডিএর চেয়ারম্যান। পটিয়া থেকে আমাকে যখন মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল তখন দলের দুঃসময় ছিল। তাই আমি মনে করি আমাকে একটিবার সুযোগ দেওয়া উচিত।’

মোছলেম উদ্দিনকে মনোনয়ন দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এসএম সেলিম বলেছেন, ‘প্রয়াত সাংসদ মইন উদ্দীন খান বাদল যোগ্য নেতা হলেও জাসদের নেতা হওয়ায় তৃণমূলে জনভিত্তি না থাকায় অন্য জেলার মতো উন্নয়ন করতে পারেননি। কিন্তু মোছলেম উদ্দীনের সাথে পুরো বোয়ালখালীর তৃণমূল নেতাকর্মী থেকে শুরু করে উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা আছেন। তাকে দিয়েই এলাকার উন্নয়ন হবে বলে শেষ বয়সে নৌকার দাবিদার তিনিই।’

দক্ষিণ জেলা যুবলীগের প্রভাবশালী সদস্য কুতুব উদ্দীন শাহ ইমন বলেন, ‘পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামের মুরব্বী মোছলেম ভাইকে মনোনয়ন দেওয়া এখন সময়ের দাবি। উনার শেষ বয়সে এসে রাজনৈতিক স্বীকৃতি দরকার। উনার অবদান আওয়ামী লীগে অনেক। তাই অবদানের ক্ষুদ্র প্রতিদান হিসেবেই আমরা চাইব নেত্রী উনাকে মূল্যায়ন করুক।’

মইনউদ্দীন খান বাদল গত ৭ নভেম্বর ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত ২০০৮ সাল থেকে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে ২৮৫/চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেন।

চট্টগ্রাম-৮ আসনের সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইনউদ্দীন খান বাদল মারা যাওয়ায় তার আসনটি ইতিমধ্যে শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। সংসদ সচিবালয় বাদলের আসনটি শূন্য ঘোষণা করে ওয়েবসাইট থেকে তার নাম ও ছবি সরিয়ে নিয়েছে। আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যেই যখন উপনির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেই হিসেবেই এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপনির্বাচন হতে পারে আগামী ১৩ জানুয়ারি। প্রথমবারের মতো এই আসনে ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। এমনই প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে আগামী ১৩ জানুয়ারি উপনির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই ওই আসনে তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে।

ইসি সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম ৮ আসনটি চট্টগ্রাম জেলার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৩, ৪, ৫, ৬ ও নং ওয়ার্ড এবং বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল ইউনিয়ন, পশ্চিম গোমদন্ডী ইউনিয়ন, পূর্ব গোমদন্ডী ইউনিয়ন, শাকপুরা ইউনিয়ন, সারোয়াতলী ইউনিয়ন, পোপাদিয়া ইউনিয়ন, চরনদ্বীপ ইউনিয়ন, আমুচিয়া ইউনিয়ন ও আহল্লা করলডেঙ্গা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।

চট্টগ্রাম ৮ আসনে মোট ভোটার চার লাখ ৭৫ হাজার ৯৮৮। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ৯২২ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪ জন। বোয়ালখালী উপজেলায় ভোটার ১ লাখ ৬৪ হাজার। কেন্দ্র সংখ্যা ১৮৯টি।

জানা যায়, স্বাধীনতাত্তোর ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে নৌকা প্রতীকে সাংসদ হন আওয়ামী লীগের মরহুম এম কফিল উদ্দিন, দ্বিতীয় সংসদে সিরাজুল ইসলাম, তৃতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির মনজুর মোরশেদ খান, চতুর্থ সংসদে বিএনপির সিরাজুল ইসলাম, পঞ্চম সংসদে বিএনপির সিরাজুল ইসলাম, ৬ষ্ঠ সংসদে জাতীয় পার্টির হয়ে মনজুর মোরশেদ খান, ৭ম সংসদ, ৮ম সংসদে বিএনপির মনজুর মোরশেদ খান এরপর থেকে টানা নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মহাজোটের শরীক জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল সাংসদ হন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!