বাতাসের বিষ ঠেকাবে চুয়েটের ‘ইকো ট্রান্সফর্মার’

সাড়ে তিন হাজার স্টার্টআপকে পেছনে ফেলে শীর্ষ ৩০-এ

দূষণের বিষে যখন বাতাসের মুমূর্ষু অবস্থা, তখন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণ উদ্ভাবক তাক লাগিয়ে দিলেন ‘ইকো ট্রান্সফর্মার’ নামের নতুন এক অটোমেটেড ডিভাইস উদ্ভাবন করে। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্যোগে ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত আইডিয়াথন প্রতিযোগিতায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার স্টার্টআপকে পেছনে ফেলে শীর্ষ ৩০-এ স্থান করে করে নেয় পরিবেশ দূষণ কমানোর লক্ষ্য নিয়ে তৈরি এই ‘ইকো ট্রান্সফর্মার’। এই ডিভাইসটি বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান সরিয়ে নিয়ে বাতাসকে দূষণ থেকে মুক্ত করবে।

বায়ুদূষণের কারণে গত বছর সারা বিশ্বে প্রায় সাত মিলিয়ন মানুষ মারা গেছে। দিনে দিনে বায়ুদূষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। ক্রমাগত এই দূষণে পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে যে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে সবচেয়ে বড় শিকারটি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বায়ুর এই ক্রমাগত দূষণের সমাধান কী হতে পারে সেই ভাবনা থেকেই জন্ম হয় সম্পূর্ণ নতুন একটি ডিভাইসের। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হাল্ট প্রাইজে প্রথমবারের মতো এই উদ্ভাবনটি নিয়ে অংশ নেয় টিম ‘মডেলিয়ান স্ট্রাইকারস’। টিমটির সদস্যরা হলেন চুয়েটের মেকাট্রনিকস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের আসিফ আলম এবং ইলেকট্রনিকস এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের সৈয়দ নাকীবুল ইসলাম।

প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে সেবারই সেমিফাইনালে ওঠে টিমটি। তাত্ত্বিক গবেষণা থেকে বাস্তবায়নের দিকের যাত্রাটিকে সহজতর করে দেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকাট্রনিকস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক হুমায়ুন কবির। তার নির্দেশনায় প্রাথমিক গঠনগত রূপ পায় ‘ইকো ট্রান্সফরমার’। এভাবেই ধীরে ধীরে এগোতে থাকে ট্রান্সফরমারটির গঠন, বিজনেস মডেল ও প্রদর্শনী।

হুমায়ুন কবির জানান, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইকো ট্রান্সফরমার একটি অনবদ্য আবিষ্কার। গ্রিনহাউজ গ্যাসের রিসাইক্লিং পরিবেশকে যেমন বিষাক্ত গ্যাসমুক্ত করবে, তেমনি এই রিসাইকেলে পাওয়া সালফিউরিক ও কার্বনিক এসিড দেশের কারখানার প্রয়োজনীয় এসিডও যোগান দিতে পারবে। এর বাস্তবায়ন ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে অদূর ভবিষ্যতে এটি পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখার অন্যতম নির্ভরযোগ্য অটোমেটেড ডিভাইস হয়ে উঠবে।’

ট্রান্সফরমারটির গঠন

ট্রান্সফরমারটির ভিত্তি নির্মিত হয়েছে মূলত আটটি পৃথক চেম্বারে। যার মধ্যে প্রথমটি হবে অপেক্ষাকৃত বৃহত্তর। তাতে বিশেষায়িত বয়লার স্থাপন করা হবে। এছাড়া বিশেষ কিছু প্রভাবকের মাধ্যমে প্রভাবিত হবে অন্তঃস্থ বিক্রিয়া। তবে চারপাশের ফ্রেম দেবে আ্যালুমিনিয়াম শিট। ভেতরের বয়লার ও আনুষঙ্গিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রগুলো চলবে সরাসরি এসি কারেন্ট অথবা ব্যাটারি ব্যবহারের মাধ্যমে।

কোথায় ব্যবহার হবে

এই ট্রান্সফরমারটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো সর্বত্র এর ব্যবহার উপযোগিতা। বায়ু দূষণ যেখানে থাকবে, সেখানেই অদূর ভবিষ্যতে ট্রান্সফর্মার বসানোর উপযুক্ত মডেল সরবরাহ করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে উদ্ভাবক দলটি। কলকারখানা কিংবা ইটভাটায় সংযোজনের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করারও আশাবাদ জানালেন তারা।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী

ইকো ট্রান্সফরমার নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে চুয়েটের মেকাট্রনিকস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের আসিফ আলম জানান, ‘আমরা শুধু এখানেই থেমে নেই। বরং একটি নির্দিষ্ট জায়গার বায়ুকে পরিশোধন করার মতো সম্পূর্ণ অটোমেটেড নতুন ডিভাইস আবিষ্কারে মনোযোগ দিচ্ছি। আমাদের ট্রান্সফরমারটির নতুন ভার্সনে নির্দিষ্ট স্থানে এটি রাখলে সেখানকার বায়ু থেকে দূষিত সব উপাদান ছেঁকে সেখানকার বায়ুকে দূষণমুক্ত করে দেওয়ার বৈশিষ্ট্য সংযোজন করা হবে এবং এ নিয়ে প্রয়োজনীয় গবেষণাও চালিয়ে যাচ্ছি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm