বাজার আবার আগুন, পেঁয়াজ পচানো কি দাম বাড়াতে?

বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও এক সপ্তাহের মধ্যে হঠাৎ দাম বেড়ে গেছে। বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকা সত্ত্বেও দাম বাড়তি হওয়ায় বিষয়কে সিন্ডিকেটের কারসাজি বলে মন্তব্য করেছেন বাজার পর্যবেক্ষকরা। এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, পেঁয়াজ পচে যাওয়ায় আবারো দাম বেড়েছে। কিছুদিনেই দাম স্থিতিশীল অবস্থায় আসবে।

ক্রেতারা বলছেন, অর্থনীতির সূত্রে বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যায়। কিন্তু পেঁয়াজের ক্ষেত্রে বিপরীত প্রবাহ লক্ষ্য করা গেলো। বাজারে পেঁয়াজও আছে দামও বাড়ছে। পেঁয়াজ সংকটের কারণে চট্টগ্রামে ৪৫টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছিল ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি। আবার কার্গো বিমানযোগেও আমদানি করা পেঁয়াজ। এতে বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে যায়। কিন্তু সপ্তাহ যেতে না যেতেই তা আবার দাম বাড়লো পাইকারিতে।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, কার্গো বিমানযোগে আমদানির কারণে কিছুটা কমে আসা পেঁয়াজের দাম আবারো বেড়েছে। এক সপ্তাহ স্থির থেকে আবারো অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার।

এদিকে, দুদিনের ব্যবধানে নানা অজুহাতে ইতোমধ্যে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০-৩০ টাকা। খুচরা বাজারে ৪দিন আগেও ১৩০-১৬০ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ সোমবার বিক্রি হয় ১৭০-১৮০ টাকায়। দামের এ উত্থান-পতনে সাধারণ ক্রেতারা হিমশিম খাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা সেই পুরনো সুর বাজিয়ে চলেছেন— ‘সরবরাহ কম’। তাদের দাবি, বিভিন্ন মাধ্যমে কয়েক দফায় আমদানি করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আর মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের বড় একটি অংশ পচে যাচ্ছে। এর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দাম বাড়িয়েছে আমদানিকারকরা।

পেঁয়াজ সংকটের কারণে চট্টগ্রামে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি। গত দুইদিন চট্টগ্রাম নগরের কোথাও টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি। নগরের ৬ স্পটে মাত্র ১৩ টন পেঁয়াজ বিক্রি করেছে টিসিবি।

টিসিবি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক প্রধান জামাল উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, বাজারে সরবরাহ ঘাটতি ও দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারের উদ্যোগে ৪৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে টিসিবি। কিন্তু সংকটের কারণে চট্টগ্রামে আপাতত বিক্রি বন্ধ রয়েছে। আমরা সংগ্রহ করছি। আশা করছি শিগগিরই আবারো চট্টগ্রামে ৪৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করতে পারব।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে খোলাবাজারে পেয়াজ বিক্রি করার জন্য সরকারিভাবে পেঁয়াজ সরবরাহ করতে হবে। আমাদের কাছে ঢাকা থেকে পেঁয়াজ পাঠানো হয়নি। তাই আমরা বিক্রি করতে পারিনি। তবে পেঁয়াজের নতুন চালান খালাস হবে কাল বা পরশু। তখন আমরা বিক্রি করতে পারবো।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গতকাল দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৭০-১৯০ টাকা কেজি দরে। মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৭০-১৮০ টাকা, মিশরের পেঁয়াজ ১৪০-১৫০ টাকায়, চায়নার পেঁয়াজ ১০০-১২০ টাকায়, পাকিস্তান থেকে বিমানযোগে আসা পেঁয়াজ ১৭০ টাকা, ইন্ডিয়া থেকে আসা পেঁয়াজ ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। তবে আমদানি করা পেঁয়াজ আরো বেশি পরিমাণে আসার পর দাম কমতে পারে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বাজারে নতুন পেঁয়াজের সরবরাহও দিনদিন বাড়ছে। তবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না।

কয়েকজন দোকানি জানান, দামের অস্থিরতার কারণে কিছু দোকানি লোকসানের ভয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না। আবার অনেক দোকানি জরিমানার ভয়ে পেঁয়াজ তুলছেন না। কোনো কোনো খুচরা ব্যবসায়ী দোকানে রাখছেন স্বল্প পরিমাণ পেঁয়াজ।

খুচরা বাজারে গত বৃহস্পতিবার কেজিপ্রতি ১৩০-১৫০ টাকা বিক্রি হলেও সোমবার এ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০০-২২০ টাকায়।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ বাজারে ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকায় বাজারের উত্থান-পতনে হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আজমীর ভাণ্ডারের এটিএম শামসুদ্দোহা খোকন বলেন, বাজারে পেঁয়াজের সংকট রয়েছে। আমদানি করা পেঁয়াজ আরো বেশি পরিমাণে আসার পর দাম কমতে পারে। কয়েকদিন পর নতুন দেশি পেঁয়াজও বাজারে চলে আসবে। তখন দাম অবশ্যই কমবে।

গত ২০ নভেম্বর সন্ধ্যায় পাকিস্তানের করাচি থেকে কার্গো উড়োজাহাজে করে ৮২ টনের পেঁয়াজের প্রথম চালান আসে। এর আমদানিকারক ঢাকার শাদ এন্টারপ্রাইজ। পেঁয়াজের সংকট কাটাতে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রেখেছে দেশের বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ। এ প্রতিষ্ঠানটি মোট ৫৮ হাজার ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানি করছে। তার মধ্যে মাত্র প্রায় ২০০টন পেঁয়াজ দেশে এসে পৌঁছেছে। ইতোমধ্যে ১০টি কার্গো উড়োজাহাজ বুকিং নিশ্চিত করা হয়েছে।

এএস/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!