বাওয়া স্কুলের সামনের রাস্তায় গাড়ির দখলদারি, যানজট প্রতিদিনই

বুধবার দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ মহিলা সমিতির (বাওয়া) স্কুলের সামনে দেখা যায়, দামপাড়া পুলিশ লাইনের বাওয়া স্কুলের সড়কে পার্কিং করা সারি সারি গাড়ি। এর মধ্যে রয়েছে প্রাইভেট কার, পাজেরো, মাইক্রো, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা। শিক্ষার্থীরা কেউ গাড়িতে উঠছে, আবার অনেকে স্কুলে আসছে। সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশায়ও অনেকে আসা যাওয়া করে। এক শিফটের ছুটি হলেই অন্য শিফটের ক্লাস শুরু হয়। এ সময় সড়কে যানবাহনের চাপ তৈরি হয়ে যানজট দুর্বিসহ অবস্থার সৃষ্টি হয়।

অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, দুপুরের দিকে চট্টগ্রাম নগরীর গরীবুল্লাহ শাহ মাজার সড়ক, ওয়াসা থেকে জিইসি সড়ক ও পল্টন মোড়ে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয় বাংলাদেশ মহিলা সমিতির (বাওয়া) স্কুলের কারণে। বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও পার্কিং স্পেস ও শিক্ষার্থীদের জন্য কোন বাসের ব্যবস্থা করেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে দুই শিফটে মিলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। মর্নিং শিফট শুরু হয় সকাল ৭ টায় শেষ হয় পৌনে ১২টায়, আবার সাড়ে ১২টা থেকে ডে শিফট ক্লাস শুরু হয়। বাংলাদেশ মহিলা সমিতি (বাওয়া) স্কুল শুরু ও ছুটির ৩০ মিনিট আগে থেকে স্কুলের সামনের সড়কে গাড়ি আসা শুরু হয়। ধীরে ধীরে তা কোথাও দুই লেন, আবার কোথাও তিন লেন পর্যন্ত হয়ে সড়কের ওপর পার্কিং করে। সড়কের ওপর দাড়িয়ে শিক্ষার্থীরা গাড়িতে ওঠানামা করে। এ সময় সড়ক সংকুচিত হয়ে যানচলাচলের গতি কমে যানজটের সৃষ্টি হয়। এটি বাওয়া স্কুলের সামনে বছরের পর বছর ধরে চলে আসা নৈমিত্তিক যানজটের চিত্র।

এ কারণে গরীবুল্লাহ শাহ মাজার, জিইসির হোটেল পেনিনসুলার সামনের রাস্তা থেকে জিইসি মোড় পর্যন্ত, অন্যদিকে পল্টন মোড় ও ওয়াসার রাস্তা পর্যন্ত দীর্ঘ হয় এ যানজট। এছাড়াও সড়কের ওপর শিক্ষার্থীরা গাড়িতে ওঠানামার সময় প্রায়ই ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় ২ জন সার্জেন্টসহ ৮ জন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য যানজট নিরসনে কাজ করলেও সড়কের উপর গাড়ির পার্কিংয়ের কারণে তাদেরও করার কিছু থাকে না।

যানজটে আটকেপড়া মানুষের সাথে আলাপকালে জানা যায়, স্কুলের কারণে অনেক গাড়ি পার্ক করা থাকে, তার ওপর অনেক গাড়ি আড়াআড়িভাবে দাঁড় করিয়ে রাখেন। সরাতে বললে অযথাই তর্কে জড়িয়ে পড়ে। স্কুলের পাশে থাকা মাঠ সারা বছর মেলার জন্য ভাড়া দেওয়া হলেও সেখানে কোন গাড়ি পার্কিং হয় না। নেই কোন স্কুলবাস সার্ভিসও। স্কুল শিক্ষার্থীদের চাপে সৃষ্ট যানজটের দুর্ভোগ শুধু সয়ে যেতে হচ্ছে।

যানজটে আটকেপড়া সাজেদ চৌধুরী বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে সড়কে উপর গাড়ি পার্কিং করে প্রতিদিন মানুষের দুর্ভোগের সৃষ্টি করলেও এর কোন প্রতিকার নেই। স্কুলের নিজস্ব বাস ও পার্কিং স্পেস না করলে সংকট দূর হবে না।’

নাসিমা খানম নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘স্কুল ছুটির পর শিক্ষার্থীর চাপে সড়কে যানজট লেগে যায়। শিক্ষার্থীদের বহন করতে আসা গাড়ির কারণে যানজট আরো তীব্র হয়। গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা না করলে এ সমস্যার সমাধান হবে না।’

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) এসএম মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘বাওয়া স্কুল ছুটির পর সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিনের এ সমস্যা নিরসনে স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে বসে স্কুল বাস সার্ভিস চালু, পাশের খালি মাঠ ব্যবহার, শিফট পরিবর্তন বিষয়ে আলাপ করব। স্কুলের তো কিছু দায়িত্ব রয়েছে। আমরা এ সমস্যা নিরসনের জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি।’

প্রসঙ্গত, নগরীর যানজট নিরসনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সেটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের বহনে প্রতিষ্ঠান বাস ব্যবহার না করায় নগরীতে যত্রতত্র পাইভেট কার পার্কিং, সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশার চাপে সড়কে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। বিশেষত, স্কুল ছুটির সময়ে এ যানজট ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। এ সময় ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে।

সিএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!