২০০৮ সালের আজকের এই দিনে (১৮ আগস্ট, ২০০৮) শ্রীলঙ্কার ডাম্বুলায় একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশ্ব ক্রিকেটে কোহলি নামক অধ্যায়ের। ইনিংসের সূচনা করতে নেমে সে ম্যাচে বিরাট কোহলি আউট হন ২২ বলে ১২ রান করে, ভারতও ম্যাচটি হেরে যায় ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে। কথায় আছে, সকালের সূর্য সবসময় সারাদিনের আভাস দেয় না- এ কথাটি পরবর্তী ১১ বছরে হারে হারে প্রমাণ করেছেন ভারতের ব্যাটিং জিনিয়াস। সময়ের পথ ধরে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। হয়ে উঠেছেন ভারত ও বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান।
সেই বিরাট কোহলি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখলেন ১১ বছরে। ক্যারিয়ারের প্রথম একবছর কোনও সেঞ্চুরির দেখা না মিললেও এখন বিশ্বের নাম্বার ওয়ান ব্যাটসম্যান। বলা হচ্ছে শচীন টেন্ডুলকারের সব রেকর্ড একদিন তারই হবে! ক্যারিয়ারের বিশেষ এই দিনে কোহলি রয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। সেখান থেকেই ভক্তদের উদ্দেশ্যে বিশেষ বার্তা দিলেন তিনি। সোমবার আবেগঘন সেই বার্তায় ছিল সবার জন্য উপদেশও!
টুইটারে বিরাট কোহলি লিখেছেন, ‘টিনেজ হিসেবে ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু। এরপর ১১ বছরে ঈশ্বর আমাকে যা আশীর্বাদ দিয়েছেন তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি! তোমরা সঠিক পথ খুঁজে নাও। তোমরা তোমাদের স্বপ্ন তাড়া করার শক্তি সঞ্চয় করো!’
যদিও ক্যারিয়ারের শুরুটা তেমন ভাল ছিল না তার। প্রথম বছর সেঞ্চুরির দেখা পাননি। ২০০৯ ইডেন গার্ডেনে এসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম শতরান আসে কোহলির ব্যাট থেকে। এরপর শুধুই এগিয়ে গেছেন তিনি। ২০১১ থেকে দাপট শুরু। তারপর ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রতি ক্যালেন্ডার ইয়ারে ১ হাজারের বেশি রান তুলেছেন তিনি। মাঝে অবশ্য ২০১৫, ২০১৬ সালে ছন্দপতন হয়েছিল। এরইমধ্যে করে ফেলেছেন ৪৩ ওয়ানডে সেঞ্চুরি। আর ৭টি করলেই পেছনে ফেলবেন লিজেন্ড শচীন টেন্ডুলকারকে!
ভারতের হয়ে ৭৭ টেস্ট খেলে করেছেন ৬৬১৩ রান। ২৩৯ ওয়ানডেতে ১১৫২০ আর ৭০ টি-টুয়েন্টিতে তুলেছেন ২৩৬৯ রান। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে খেলেছেন ৩৮৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তার মধ্যে ৪২৬ ইনিংসে ব্যাট করে ৫৬.৬৩ গড়ে ২০৫০২ রান করেছেন তিনি। চলতি শতকে ২০ হাজারের অধিক আন্তর্জাতিক রান করা একমাত্র ক্রিকেটারই কোহলি।
এ রান করার পথে ৬৮টি সেঞ্চুরির সঙ্গে ৯৫টি হাফসেঞ্চুরি রয়েছে কোহলির ঝুলিতে। তার খেলা ৩৮৬ ম্যাচের মধ্যে ২২৭টিতেই জিতেছে ভারত। সেসব জেতা ম্যাচের মধ্যে ৫৩টিতেই আবার সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন দিল্লির এ ব্যাটসম্যান। এছাড়া সব মিলিয়ে ভারতের জয়ের ম্যাচে ৪৬টি সেঞ্চুরি ও ৫৯টি হাফসেঞ্চুরি রয়েছে কোহলির।
এদিকে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানকে সম্মান জানানো হচ্ছে। তার কীর্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দিল্লির বিখ্যাত ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামের একটি স্ট্যান্ড কোহলির নামে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি জেলা ক্রিকেট সংস্থা। ১২ সেপ্টেম্বর এই ‘বিরাট কোহলি স্ট্যান্ড’ উদ্বোধন করা হবে।
বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ের শেষ কথাই যেন ভারতীয় ব্যাটিং জিনিয়াস বিরাট কোহলি। ধারাবাহিক ব্যাটিং ও একের পর এক ম্যাচজয়ী পারফরম্যান্সে নিজেকে সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের কাতারে নিয়ে যাচ্ছেন ভারতের বর্তমান অধিনায়ক।
পুরো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে তার চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি রয়েছে কেবল দুজনের। ভারতীয় ব্যাটিং ঈশ্বর শচিন টেন্ডুলকার অবসরে যাওয়ার আগে করেছেন সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি এবং অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং করেছেন ৭১টি সেঞ্চুরি।
শুধু সেঞ্চুরি সংখ্যায় নয়, নিজের ব্যাটিংশৈলী দিয়ে অজস্র সব রেকর্ড গড়েছেন কোহলি। বিশেষ করে ওয়ানডে ক্রিকেটে তার ধারে কাছেও নেই কোনো ব্যাটসম্যান। শুধু ওয়ানডেই নয়, তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই প্রায় পঞ্চাশ গড় নিয়ে খেলে যাচ্ছেন বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এ ব্যাটসম্যান।