বাইপেপ মেশিনে চট্টগ্রাম দেখছে করোনা চিকিৎসার নতুন দিশা

চট্টগ্রামের দুই সরকারি হাসপাতালে আছে ১৪টি মেশিন

চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। হাসপাতালগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। অবস্থা এবার এমন যে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রায় সকল রোগীকে দিতে হচ্ছে অক্সিজেন সাপোর্ট। করোনা চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা এতদিন ধরে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ও হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাকে গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার কথা বলে আসলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিকল্প হিসেবে নতুন একটি ডিভাইস ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে হাসপাতালগুলো। অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়ার এই ডিভাইসের নাম বাইপেপ মেশিন।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনের কথা উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার ব্যবহার কমিয়ে বাইপেপ-সিপেপ মেশিনের ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে ভাবছেন তারা। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের দুই সরকারি হাসপাতালে সচল রয়েছে মোট ১৪টি বাইপেপ মেশিন। এর মধ্যে আরও ৫০টি বাইপেপ মেশিনের চাহিদাপত্র ঢাকায় পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আগামী সপ্তাহ নাগাদ এসব মেশিন হাতে আসবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বাইপেপ হচ্ছে মূলত প্রাকৃতিক অক্সিজেনকে কাজে লাগিয়ে রোগীকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়ার একটি মেশিন। এই মেশিন ব্যবহার করে রোগীকে মিনিটে ১৫ থেকে ২০ লিটার প্রেসারে অক্সিজেন সরবরাহ করার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ফলে এই মেশিনের ব্যবহার বাড়ানো গেলে প্ল্যান্টের অক্সিজেনের ওপর প্রেসার কমার পাশাপাশি বেশি সংখ্যক রোগীকে সেবা দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন তারা।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড বিষয়ক কোর কমিটির ফোকাল পার্সন ডা. মো. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের এখন ছয়টি বাইপেপ মেশিন আছে। আমরা আরও ৫০টি মেশিনের চাহিদা দিয়েছি।’

কেন হঠাৎ বাইপেপ মেশিন ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন করোনা চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা— এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. সাজ্জাদ বলেন, ‘দেখুন আমাদের মোট দুটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট। মূল সিটের বাইরে বারান্দায়ও আমরা কিছু অক্সিজেন লাইন দিয়েছি। এখন সেখানেও রোগী আছে। এত রোগীকে লিকুইড অক্সিজেন দেওয়ার লজিস্টিকস অ্যারেঞ্জ করা অনেক কঠিন। কিন্তু বাইপেপ দিয়ে মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন দেওয়া যাবে— যেখানে প্ল্যান্টের অক্সিজেন প্রয়োজন হবে না। আর বেশিরভাগ রোগীরই ১৫-২০ লিটারের মধ্যে অক্সিজেন লাগে। ফলে কারও যদি এর বেশি লাগে তাকে হাই ফ্লো দিয়ে অক্সিজেন দেওয়া যাবে। এসব বিবেচনায় এখন বাইপেপ মেশিন নিয়ে ভাবা হচ্ছে।’

এর আগে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার ব্যবহার কমিয়ে বাইপেপ মেশিনের ব্যবহার বাড়ানোর কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেছিলেন, ‘হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা চালানোর ক্ষেত্রে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন কতটা প্রেসার নিতে পারে সেটা নিয়েও অনেক হিসেব আছে। কখনও কখনও এর কারণে অন্য যেসব রোগী আছেন তাদের অক্সিজেন পেতেও সমস্যা হয়। এছড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনেও হাই ফ্লোর ব্যবহার কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন বাইপেপ-সিপেপ ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে ভাবছি।’

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে এই মুহূর্তে মোট ৮টি বাইপেপ মেশিন সচল আছে বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ও হাসপাতালটির ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বী।

এই মেশিনগুলোর একেকটির দাম প্রায় ৭০ হাজার টাকা। শুধু ইলেকট্রিসিটি ব্যবহার করে এই মেশিন দিয়ে একজন রোগীকে প্রকৃতি থেকে প্রতি মিনিটে ১৫-২০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!