বাংলার ‘কঠিন’ প্রশ্নে এসএসসির শুরুতেই ঘাবড়ে গেল চট্টগ্রাম বোর্ডের শিক্ষার্থীরা
উত্তরপত্র মূল্যায়ন নিয়ে এক্সপার্টের সিদ্ধান্ত শনিবার
প্রশ্নপত্র ‘কঠিন’ হওয়ায় পরীক্ষার শুরুতেই উদ্বেগে পড়ে গেছে চট্টগ্রাম বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। প্রশ্নপত্রের সৃজনশীল অংশের চেয়ে নৈর্ব্যক্তিক অংশ বেশ ‘কঠিন’ হয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর একাধিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা। তবে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্র নিয়ে শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) প্রশ্ন বিষয়ে এক্সপার্টরা আসার পর উত্তরপত্র মূল্যায়ন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জানা গেছে, ঢাকা শিক্ষাবোর্ডসহ দেশের বাকি সব বোর্ডেই বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্র হয়েছে অনেকটাই ‘সহজ’। ব্যতিক্রম শুধু চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। দীর্ঘদিন ক্লাশব্যবস্থা থেকে অনেকটাই দূরে থাকা এসব শিক্ষার্থীর অনুমানেই আসেনি যে, প্রশ্নপত্র এমন ‘কঠিন’ হবে। তারা বলছে, প্রশ্নপত্রের সৃজনশীল অংশের চেয়ে নৈর্ব্যক্তিক অংশ অনেকটা কঠিন হয়েছে। এমন অবস্থায় পরীক্ষার মূল্যায়ন নিয়েই ভীত হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও।
একদিকে করোনা পরিস্থিতি ও অন্যদিকে বন্যার কারণে দীর্ঘদিন আটকে থাকার বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা।
গত ফেব্রুয়ারিতেই এসএসসি পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। পরে সেই পরীক্ষা পিছিয়ে ১৯ জুন শুরু করে ৬ জুলাই শেষ করার কথা জানানো হয়। কিন্তু জুনের মাঝামাঝিতে সিলেটসহ কয়েকটি জেলায় ভয়াবহ বন্যার কারণে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। অবশেষে তারও প্রায় তিন মাস পর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হল এসএসসি পরীক্ষা।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবার ১ হাজার ৯২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ২১৩টি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় ১২৫টি কেন্দ্রে অংশ নিচ্ছে ১ লাখ ৫ হাজার ৯২০ জন শিক্ষার্থী। অন্যদিকে কক্সবাজারের ২৯টি কেন্দ্রে ২৩ হাজার ৪৩১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বেরুনোর পর এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তাদের বেশিরভাগই বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্র দেখে হকচকিয়ে গেছে শুরুতেই। দীর্ঘদিন ক্লাশব্যবস্থা থেকে দূরে থাকা এসব শিক্ষার্থীর অনুমানেই আসেনি যে, প্রশ্নপত্র এমন কঠিন হবে। সিকউ ঠিক থাকলেও সমস্যা হয়েছে বহুনির্বাচনী প্রশ্নে। ক্লাশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরাও বলছে, প্রশ্ন এবার খুবই জটিল হয়েছে। তবে লিখিত অংশ ঠিকই আছে।
ক্ষোভের সুরে একজন অভিভাবক বলেন, ‘করোনা ও বন্যাসহ শিক্ষার্থীরা যে একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে, এই শিক্ষার্থীরা যে দীর্ঘ সময় ধরে ক্লাশ থেকে দূরে ছিল— প্রশ্নপত্র প্রণয়নের সময় এ বিষয়গুলোই মাথায় রাখা হয়নি।’
এবার বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্ন ঠিক কতটা কঠিন হয়েছে তার প্রমাণ মিলছে শিক্ষার্থীই শুধু নয়, শিক্ষকদের মুখ থেকেও। ক্লাশের মেধাবী শিক্ষার্থীরাও বলছে, তাদের নিজেদের জন্যও ওই সব প্রশ্নের সমাধান কষ্টসাধ্য ছিল এবং প্রশ্ন আসলেই কঠিন ছিল।
বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে নগরীর একটি স্বনামধন্য স্কুলের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, ‘প্রথম পত্রের এমসিকিউ বা বহুনির্বাচনী অংশটি এবার খুবই কঠিন হয়েছে। প্রশ্ন নির্বাচনে রেশিও বা অনুপাতে সামঞ্জস্য রাখার যে একটি বাধ্যবাধকতা আছে, সেটা উপেক্ষা করা হয়েছে চট্টগ্রাম বোর্ডে। যেমন জ্ঞানমূলক, অনুধাবন ও দক্ষতামূলক প্রশ্নের সমন্বয় রাখার রীতি থাকলেও এবার বাংলা বিষয়ের প্রশ্নপত্রে দেখা গেছে, জ্ঞানমূলক প্রশ্নের চেয়ে অনুধাবনমূলক প্রশ্ন রাখা হয়েছে মাত্রাতিরিক্ত।’
ওই শিক্ষক বলেন, ‘আমি ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে পরীক্ষা দেওয়া পূর্ব পরিচিত কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপ করে দেখেছি, প্রশ্নপত্র পেয়ে তাদের বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু চট্টগ্রামে যে স্কুলেই খোঁজ নিয়েছি, সব পরীক্ষার্থীই একবাক্যে বলেছে প্রশ্নপত্র ছিল ধারণাতীত কঠিন।’
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চট্টগ্রামের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন,‘আমাদের বোর্ডের প্রশ্ন আমরা করি না। লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ হয় কোন প্রশ্নে পরীক্ষা হবে। শিক্ষার্থীদের ভাগ্যে এটাই ছিল। তবে বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্র নিয়ে আগামী শনিবারে প্রশ্ন বিষয়ে এক্সপার্টরা আসবেন।’
‘প্রশ্ন এক্সপার্টরা যদি মনে করেন বাংলা প্রশ্ন কঠিন হয়েছে তাহলে, উত্তরপত্র মূল্যায়নের সময় শিক্ষকদের প্রতি সেটি নিয়ে নির্দেশনা থাকবে। যাতে করে শিক্ষার্থীদের কোন ক্ষতি না হয় সেটি আমরা নিশ্চিত করবো।’
সিপি