বাংলাদেশে করোনাভাইরাস রূপ বদলাচ্ছে অবিশ্বাস্য গতিতে
সংক্রমণ বেশি হচ্ছে ‘জি৬১৪’ ভ্যারিয়েন্টের অধিপত্যে
করোনাভাইরাসের রূপ সারা বিশ্বে একরকম, অন্যদিকে বাংলাদেশে সেই রূপ একেবারেই আলাদা। দেশে অনেকটা অবিশ্বাস্য গতিতে রূপ বদলাচ্ছে করোনাভাইরাস। ফলে বিশ্বে যেখানে করোনাভাইরাসের রূপান্তরের হার ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ, বাংলাদেশে সেখানে এই রূপান্তরের হার অনেকটা দ্বিগুণ— ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ।
সবমিলিয়ে করোনাভাইরাস বাংলাদেশে এমনভাবে রূপ বদলাচ্ছে— ভবিষ্যতে এই ভাইরাসের চরিত্র কেমন হবে কিংবা এটি শক্তিশালী রূপে আবির্ভূত হবে কিনা— এ নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেছে বাংলাদেশের জিন গবেষকরাও।
রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির গবেষক দল করোনাভাইরাসের নমুনা বিশ্লেষণে পাওয়া তথ্যউপাত্ত তুলে ধরে জানিয়েছে, করোনাভাইরাসে মোট ২৮টি প্রোটিন থাকে। এর মধ্যে বাহকের ওপর মূল আঘাতটি আসে স্পাইক প্রোটিনের মাধ্যমে।
গবেষকরা করোনাভাইরাসের নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, স্পাইক প্রোটিনে ৬১৪ তম অবস্থানে অ্যাসপার্টিক এসিডের পরিবর্তন হয়ে গ্লাইসিন হয়েছে। এতে ‘জি৬১৪’ নম্বর ভ্যারিয়েন্টটি শতভাগ ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করেছে। মূলত এই আধিপত্য ছাড়াও নিওক্লিওটাইডে মিউটেশন, মিউটেশনের হার এবং চারটি মিউটেশন বারবার ঘুরেফিরে সক্রিয় থাকার কারণে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ধারণার চেয়েও বেশি মানুষকে সংক্রমিত করছে।
জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির গবেষকেরা বলছেন, বিশ্বে মোট ৬ ধরনের করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ২৬৩টি করোনাভাইরাস বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা ৪ ধরনের করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছেন। এগুলো হচ্ছে— ২৪৩টি জিআর ক্লেড, ১৬টি জিএইচ ক্লেড, ৩টি জি ক্লেড এবং ১টি ও ক্লেড । এগুলোই বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য দায়ী বলে নিশ্চিত করছেন গবেষকরা।
বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত ৩২৫টি করোনাভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য বের করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬৩টি করোনাভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য বের করেছেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির গবেষক দল।
দীর্ঘ বিশ্লেষণের পর তারা দেখেছেন, দেশের করোনা ভাইরাসগুলোর জিনোমিক পর্যায়ে ৭৩৭টি পয়েন্টে রূপান্তর (মিউটেশন) হয়েছে। এর মধ্যে অ্যামিনো এসিড পর্যায়ে ৩৫৮ নন-সিনোনিমাস অ্যামিনো এসিডে প্রতিস্থাপন ঘটেছে। অন্যদিকে স্পাইক প্রোটিনের জিনে ১০৩টি নিওক্লিটাইড রূপান্তরের (মিউটেশন) মধ্যে ৫৩টি নন-সিনোনিমাস অ্যামিনো এসিডে প্রতিস্থাপন ঘটেছে। এর মধ্যে পাঁচটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র— যা বিশ্বের আর কোথাও পাওয়া যায়নি।
সিপি