বাংলাদেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চীনের চেয়ে দ্রুত!

ভুটানেরও নিচে বাংলাদেশ— ইন্টারনেটের ভয়াবহ চিত্র

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে স্পিডে প্রযুক্তিপ্রেমী দেশ চীনের চেয়ে বাংলাদেশ সেরা! অসম্ভব শোনাচ্ছে? কিন্তু বিশ্বজুড়ে ব্রডব্যান্ড গতির সর্বশেষ পরীক্ষায় এমনটিই দেখা গেছে।

গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের জুন মাসের মধ্যে পরিচালিত এই পরীক্ষায় বাংলাদেশে প্রায় ৫০ হাজার ইউনিক আইপি পরীক্ষা করা হয়েছে এবং দেখা গেছে যে গড় ইন্টারনেট স্পিড ছিল ৩.২ এমবিপিএস। এর বিপরীতে চীনে গড় ইন্টারনেট স্পিড ছিল ২.১ এমবিপিএস।

ইন্টারনেটের গতির এমন ‘অবিশ্বাস্য উন্নতি’র পাশাপাশি বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত এই গবেষণায় বাংলাদেশের ইন্টারনেট সংযোগের বর্তমান পরিস্থিতির এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

গুগলসহ কয়েকটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত এম-ল্যাবের সর্বশেষ রিপোর্টে মোট ২২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৪। এমনকি সিয়েরা লিওন, নাইজেরিয়া এবং মালির মতো অনেক সাব সাহারান দেশেও বাংলাদেশের চেয়ে ইন্টারনেটের গড় গতি বেশি। এই তালিকায় চীনের অবস্থান ২০০ তম।

দক্ষিণ এশিয়াতেও নেপাল (১৫০), ভুটান (১৫৯), মালদ্বীপ (১৪১), শ্রীলঙ্কা (৭২) এবং ভারতের (১০১) কাছে পিছিয়ে বাংলাদেশ।

তালিকায় এমন অধপতন দেখে বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার এই রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না তারা কিভাবে নেপাল এবং ভুটানের নিচে রেখেছে আমাদের?’

তবে তিনি এটাও স্বীকার করেছেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেটের গতি ভালো নয়। মোস্তফা জব্বার বলেন, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগে গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হত না। কিন্তু গত সাত মাস ধরে ইন্টারনেট আমাদের জীবনের একটি প্রধান অংশ হয়ে উঠেছে— শহর ও গ্রামাঞ্চলে।’

তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের শেষ নাগাদ সবগুলো উপজেলাকে ফাইবার অপটিক কেবলের অধীনে সংযুক্ত করার পর গ্রামীণ মানুষ শহুরে মানুষের মত ইন্টারনেটের সমান গতি পাবে।’

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)-এর মহাসচিব এমদাদুল হকও গ্রামপর্যায়ে ইন্টারনেটের গতির খারাপ অবস্থার কথা জানানোর পাশাপাশি এটাও বললেন, ‘তবে সব বিভাগীয় শহরে ভাল ব্রডব্যান্ড স্পিড আছে।’

ইন্টারনেট স্পিড ও গ্রামপর্যায়ে ইন্টারনেট ছড়িতে দিতে তিনি দেশব্যাপী আরও বেশি টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) লাইসেন্স ইস্যু করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বর্তমানে পাঁচটি এনটিটিএন অপারেটর রয়েছে। এর মধ্যে সামিট কমিউনিকেশন এবং ফাইবার অ্যাট হোম ট্রান্সমিশন লাইনের সিংহভাগ ধরে আছে।

আইএসপিএবির সহ-সভাপতি এবং নেক্সট অনলাইন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জুনায়েদ বলেন, ‘র‍্যাংকিং যাই হোক না কেন, মানুষ ভালো ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু উন্নত সেবার জন্য একটি তৃতীয় সাবমেরিন কেবল অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। অন্তত দুটি নতুন লিংক প্রয়োজন। সিঙ্গাপুরের সাথে একটি সরাসরি সাবমেরিন কেবল বিশেষভাবে প্রয়োজন।’

যে তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৪, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতিতে সেই তালিকার প্রথম স্থানটি মধ্য ইউরোপের একটি ক্ষুদ্র দেশ লিশটেনস্টাইনের। দেশটিতে ইন্টারনেটের গড় স্পিড ২৩০ এমবিপিএস— যা ৩ মিনিটের কম সময়ের মধ্যে ৫ গিগাবাইট ফাইল ডাউনলোড করার জন্য যথেষ্ট।

শীর্ষ পাঁচটি দেশের বাকি দেশগুলো হচ্ছে জার্সি, অ্যান্ডোরা, জিব্রাল্টার এবং লুক্সেমবার্গ। এসব দেশে ৫ গিগাবাইটের একটি ফাইল ডাউনলোড করতে সময় লাগে ৩ থেকে ৬ মিনিট। অন্যদিকে তালিকার সর্বশেষ স্থানটি দক্ষিণ সুদানের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। দেশটির গড় ডাউনলোড স্পিড মাত্র ০.৬ এমবিপিএস।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm