বাংলাদেশি দুই হ্যাকার গ্যাংকে কড়া শাস্তি দিল ফেসবুক

মুছে গেল ভুয়া শত শত আইডি ও পেইজ

বাংলাদেশের সংঘবদ্ধ দুটি হ্যাকার গ্রুপের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিল ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এর আগে বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের কিছু কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হলেও এই প্রথম রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে ফেসবুক দুটি হ্যাকার গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালো। শাস্তির অংশ হিসেবে এই দুটি হ্যাকার গ্রুপের বিভিন্ন একাউন্ট ও পেইজ ফেসবুক থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশভিত্তিক সংঘবদ্ধ এই গ্রুপটি দেশে ও বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি একটিভিস্ট, সাংবাদিক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে অপকর্ম চালিয়ে আসছিল।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) এক ব্লগ পোস্টে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক তাদের এক ব্লগপোস্টে জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের আলাদা দুটি হ্যাকার গ্রুপের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেটা শেয়ার করছি আমরা। আমাদের প্লাটফর্ম যেন অপব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য তাদের সক্ষমতা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

এর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর ও গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ থেকে খোলা অনেকগুলো ভুয়া অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেছিল টুইটার ও ফেসবুক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দুটি তখন বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, ‘এগুলোতে বাংলাদেশ সরকারের সমর্থনে বিভিন্ন কনটেন্ট পোস্ট করা হচ্ছিল এবং এর সাথে সরকার-সংশ্লিষ্ট কিছু লোকের সম্পর্ক আছে।’

এদিকে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) ফেসবুক জানিয়েছে, বাংলাদেশের দুটি গ্রুপ একসঙ্গে মিলে হ্যাকিংয়ের কাজগুলো করছিল। এর মধ্যে একটির নাম ডন’স টিম বা ডিফেন্স অব নেশন এবং অন্যটি ক্রাইম রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ফাউন্ডেশন (সিআরএএফ)। ভিয়েতনামের হ্যাকার গ্রুপটির নাম এপিটি-৩২।

অনুসন্ধান চালিয়ে ফেসবুক নিশ্চিত হয়েছে, বাংলাদেশভিত্তিক সংঘবদ্ধ এই গ্রুপটি দেশে ও বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি একটিভিস্ট, সাংবাদিক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে অপকর্ম চালিয়ে থাকে ফেসবুকজুড়ে। শুধু তাই নয়, হ্যাক করা এসব অ্যাকাউন্ট ও পেজ নিজেদের সুবিধার্থে ব্যবহারও করেছে তারা। নিজস্ব তদন্তে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হয়েছে, বাংলাদেশের দুটি প্রতিষ্ঠানের সাথে এই অপকর্মের যোগসূত্র রয়েছে। চিহ্নিত এ দুটি গ্রুপ হল— ডন’স টিম (ডিফেন্স অফ নেশন নামেও পরিচিত) এবং ক্রাইম রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ফাউন্ডেশন (সিআরএএফ)।

ডন’স টিম এবং সিআরএএফ টার্গেট করা ব্যক্তির পোস্টের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ভুয়া রিপোর্ট পাঠিয়ে থাকে শত শত আইডি দিয়ে। এজন্য টার্গেট করা ব্যক্তির পোস্টের বিরুদ্ধে কখনও কপিরাইট লঙ্ঘন, কখনও নগ্নতা, আবার কখনও সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার বানোয়াট অভিযোগ তৈরি ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়। এইসব কাজে তারা শত শত ভুয়া ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে থাকে।

বিশেষ করে জনপ্রিয় ফেসবুক পেইজগুলোর অ্যাডমিনশিপ দখল করতে পারলেই সংঘবদ্ধ এই চক্রটি প্রথমেই বাকি অ্যাডমিনদের পেইজ থেকে সরিয়ে দেয় এবং এরপর পুরো পেইজটি ডিঅ্যাকটিভেটেড (নিস্ক্রিয়) করে দেয়।

ফেসবুক কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হয়েছে, সংঘবদ্ধ এই চক্রটি সচরাচর তিনভাবে ফেসবুক আইডি হ্যাক করে থাকে। প্রথমে ইমেইলে ফেসবুকে লগইনের ভুয়া লিংক পাঠিয়ে, দ্বিতীয়ত কোনো না কোনোভাবে মোবাইল ডিভাইসের দখল নিয়ে এবং তৃতীয়ত ফেসবুক একাউন্ট রিকভারির করার পদ্ধতিগুলোর অপব্যবহার করে।

ফেসবুক বলছে, আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গেও এসব হ্যাকারদের বিষয়ে তথ্য শেয়ার করেছি, যেনো তারাও সতর্ক হতে পারে।

এর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর ও গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ থেকে খোলা অনেকগুলো ভুয়া অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার ও ফেসবুক।

এসব একাউন্ট টুইটারকে তাদের স্বার্থে অপব্যবহারের চেষ্টা করছিল বলে টুইটার ওই সময় এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল। ওই বিবৃতিতে টুইটার জানায়, ‘যেসব একাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে, সেগুলোর কোন কোনটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে হচ্ছে।’

একই সময়ে ভুয়া খবর প্রচারের জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষও বাংলাদেশে তাদের প্ল্যাটফর্মে ছয়টি একাউন্ট এবং নয়টি পেজ বন্ধ করে দেয়। ফেসবুক এক ব্লগপোস্টে জানায়, ‘এগুলোতে বাংলাদেশ সরকারের সমর্থনে বিভিন্ন কনটেন্ট পোস্ট করা হচ্ছিল এবং এর সাথে সরকার-সংশ্লিষ্ট কিছু লোকের সম্পর্ক আছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!