এর আগেও অন্তত দুবার ঘূর্ণিঝড়ের প্রবল আঘাত ঠেকিয়েছে সুন্দরবন। এবারও ঘূর্ণিঝড় বুলবুলকে প্রায় একাই ঠেকিয়ে দিয়েছে সুন্দরবনের অতন্দ্র প্রহরী গাছপালাগুলো। এতে বাংলাদেশ বড় ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেলেও আঘাত ঠেকাতে গিয়ে সুন্দরবন হয়ে গেছে প্রায় লণ্ডভণ্ড।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাত থেকে অনেকাংশে ঠেকিয়ে দিয়েছিল সুন্দরবন একাই। ওই দুটি ঘূর্ণিঝড় যতোটা প্রবলভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল, সুন্দরবনের গাছপালাগুলো প্রাণপণ লড়ে দুবারই সিডর ও আইলাকে অনেকটাই দুর্বল করে দিয়েছিল।
এবারও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে ধেয়ে এসে বাংলাদেশে ঢোকার মুখে শুরুতেই বাধা পায় সুন্দরবনে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল রাত নয়টার দিকে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশ সাগরদ্বীপে আঘাত করে। ঘূর্ণিঝড়টি প্রথম বাধার মুখে পড়ে সেখানে। এরপর যখন খুলনায় সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ঢোকে, সেখানেও সুন্দরবনের গাছপালাগুলো প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এতে ‘বুলবুলের’ কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ কমে আসে ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটারে। সেই সঙ্গে জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতাও কমে যায় অনেকটাই। বাংলাদেশের স্থলভাগে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ যখন প্রবেশ করে, তখন সেটি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবেশবিদ ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘একমাত্র সুন্দরবনই পারবে ঘূর্ণিঝড়ের গতি কমাতে। গত কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় যেমন আইলা ও সিডরের মত বড় ঘূর্ণিঝড় থেকে একমাত্র সুন্দরবনই রক্ষা করতে পেরেছে। এখনও পর্যন্ত সুন্দরবনে ওই ধ্বংসের চিহ্ন দেখা যায়। আর ঘূর্ণিঝড়ের গতির ক্ষমতা যতই বেশি হোক, স্থলভাগে আসলে তার গতি ক্রমেই কমতে থাকে যার কারণ হচ্ছে স্থলভাগে গতি বাধা পায়। বুলবুলের গতিপথ ছিল সুন্দরবনের দিকে। বুলবুল সুন্দরবনে আঘাত হানলেও প্রচুর পরিমাণ গাছ থাকার কারণে শক্তি হারিয়ে ফেলে।’
তিনি বলেন, গত ১০০ বছরে বঙ্গোপসাগরে ৫০৮টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। এর ১৭ শতাংশ আঘাত হানে বাংলাদেশে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে যত ঝড় বয়ে গেছে, প্রতিবারই মানুষের জীবন ও সম্পদকে অনেকাংশে রক্ষা করেছে সুন্দরবন।’
সিপি/এইচটি