বাঁশখালীতে অবৈধ বালু উত্তোলনে পাহাড় যাচ্ছে ধসে, ঝুঁকিতে ৪০ হাজার পরিবার

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর জঙ্গল পুঁইছড়ি এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে এক ব্যক্তি। ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে ওই ব্যক্তি নির্ধারিত এলাকার বাইরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নির্বিচারে বালু তোলায় পুঁইছড়ির দুই কিলোমিটার এলাকার পাহাড় ধসে পড়ছে। এতে ওই এলাকার বসবাসরত প্রায় ৪০ হাজার পরিবার রয়েছে আতঙ্কে।

এছাড়া পুঁইছড়ি বালুমহালের নাম দিয়ে আরও বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট ৪-৫টি পয়েন্টে মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলছে। এতে বালুর পানি ও স্তুপে জমি ভরাট হয়ে পথে বসছে শতাধিক কৃষক।

অভিযুক্ত ইজারাদার হলেন কুতুব উদ্দিন। তিনি বাঁশখালী উপজেলার পূর্ব পুঁইছড়ি এলাকার মৃত সিদ্দিক আহমদের পুত্র। তার সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য তোফাজ্জল হোসেন। তিনি একই এলাকার মৃত সুজায়েত আলীর পুত্র।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১ বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত জঙ্গল পুঁইছড়ি এলাকায় ইজারাদার কুতুব উদ্দিন এন্টারপ্রাইজকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়। দরপত্রের ১৮টি শর্তের মধ্যে ১২ নম্বরে উল্লেখ ছিল বালুমহালের আয়তন হ্রাস ও বৃদ্ধি বা ক্ষতি সাধন এবং জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না—এমনকি বেলচা ও টুকড়ির ব্যবহার করে বালু উত্তোলনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বালুর পানি ও স্তুপে জমি ভরাট হয়ে পথে বসছে শতাধিক কৃষক।বালুর পানি ও স্তুপে জমি ভরাট হয়ে পথে বসছে শতাধিক কৃষক।
বালুর পানি ও স্তুপে জমি ভরাট হয়ে পথে বসছে শতাধিক কৃষক।

কিন্তু দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে ইজারায় পাওয়া ৬২০ দাগসহ আরও দেড় কিলোমিটার পূর্বে গিয়ে মঞ্জুরুল আলম নামের এক ব্যক্তির পারিবারিক সূত্রে প্রাপ্ত জায়গার বিএস নম্বর ১২৪৬, ১২৪৭, ১২৫১ ও ১২৫৫ দাগের ৪ দশমিক ২০ একর থেকে বালু উত্তোলন করছেন ইজারাদার কুতুব উদ্দিন। গত সাড়ে ৫ মাস ধরে এভাবে শর্ত লঙ্ঘন করে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন চলছে।

জানা গেছে, ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করায় পুঁইছড়ির দুই কিলোমিটার জুড়ে পাহাড় ক্ষয়ে পড়েছে। সেখানে বসবাসরত প্রায় ৪০ হাজার পরিবার প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। বালু পানিতে ভরাট হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রায় শতাধিক কৃষক।

এ বিষয়ে মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী বলেন, কুতুব উদ্দিন নামে এক ইজারাদার জোর করে অবৈধভাবে আমার জায়গায় বালু উত্তোলন করছে গত ৫ মাস ধরে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ ও নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু সপ্তাহ গেলেও বালু উত্তোলন বন্ধের উদ্যোগ নিচ্ছে না উপজেলা প্রশাসন।

পুঁইছড়ি ইউনিয়নের মেম্বার (পূর্ব) ফজল কবীর এ প্রসঙ্গে বলেন, কুতুব উদ্দিন তার ইজারার জায়গা ছেড়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় বালু উত্তোলনের কারণে পাহাড়ধস সহ স্থানীয় কৃষকের চাষাবাদ নষ্ট হচ্ছে।

বালুর পানি ও স্তুপে জমি ভরাট হয়ে পথে বসছে শতাধিক কৃষক।
বালুর পানি ও স্তুপে জমি ভরাট হয়ে পথে বসছে শতাধিক কৃষক।

অন্যদিকে ইজারাদার কুতুব উদ্দিন অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘বালু উত্তোলন শুধু আমি না, আরও অনেকেই এ কাজ করছে। আমাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুমোদন দিয়েছেন। তাই বালু উত্তোলন করছি।’

এ বিষয়ে বাঁশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল উদ্দিন বলেন, ‘বালু উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছেন ইউএনও। এক্ষেত্রে ইজারার বিষয়ে ঠিকাদার যদি আইন লঙ্ঘন করেন, তাহলে তার ব্যবস্থা নেবেন উপজেলা বা জেলা প্রশাসন। কিন্তু সেখানে বালু উত্তোলন নিয়ে যদি কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) মু. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ বলেন, চলতি ১ বৈশাখ থেকে ৩০ চৈত্র পর্যন্ত বাঁশখালী উপজেলা পুঁইছড়ি মৌজার বিএস খতিয়ান নম্বর ১ এর বিএস ৬২০ দাগের দশমিক ৬০ একর জমিতে কুতুব উদ্দিন এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানকে বালু উত্তোলন করার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্ত ওই ইজারাদার নির্দিষ্ট স্থানের বদলে ব্যক্তিমালিকানার জায়গায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় তা বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নদী দখল করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm