বর্ণিল আয়োজনে চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমী পালন
চট্টগ্রামে বর্ণিল আয়োজনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব জন্মাষ্টমী উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এতে চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা কয়েক হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) নগরীর আন্দরকিল্লার মোড় থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন ভারতের সহকারী হাই কমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী। প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান।
উপস্থিত ছিলেন পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি দে, প্রাক্তন সভাপতি দেবাশীষ পালিত, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. চন্দন তালুকদার, কার্যকরী সভাপতি ডা. মনোতোষ ধর, সহ-সভাপতি সাধন ধর, সহ-সভাপতি ও মহাশোভাযাত্রা উপ-পরিষদের আহ্বায়ক অলক দাশ, লায়ন দুলাল চন্দ্র দে, পরেশ চন্দ্র চৌধুরী, মহাশোভাযাত্রা উপ-পরিষদের সদস্য সচিব লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক লায়ন তপন কান্তি দাশ, এস প্রকাশ পাল প্রমুখ।
শোভাযাত্রায় অংশ নিতে নগর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকে ট্রাক, মিনিট্রাক, পিকআপ, লরি নিয়ে ভক্তরা আন্দরকিল্লা, মোমিন রোডসহ আশপাশের এলাকায় জড়ো হন। শ্রীকৃষ্ণ ধ্বনিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা।
ভক্তরা কৃষ্ণের রথ, রাধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তি, কংসের জেলখানাসহ শ্রীকৃষ্ণের জীবনের নানা অংশের আদলে সেজে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকেও র্যালি যোগ দেয় শোভাযাত্রায়।
শোভাযাত্রা ঘিরে নগরের কয়েকটি সড়কের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে নগর পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগ। গুডস হিল ক্রসিং, জামাল খান, এনায়েত বাজার, ফিশারি ঘাট, সিটি কলেজ মোড়, লাভ লেইন, আমতলা, তিনপুল সহ র্যালির যাত্রাপথের সকল সড়কে যানবাহন চলাচল সকাল ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত আংশিক বন্ধ রাখা হয়।
শোভাযাত্রার বিভিন্ন গাড়িতে শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনার সাজে সজ্জিত হয়ে আসেন ভক্তরা। শোভাযাত্রাটি আন্দরকিল্লা মোড় থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।
উদ্বোধনী বক্তব্যে চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জি বলেন, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের জন্য মানবপ্রেম প্রচারের উদ্দেশে সাড়ে ৫ হাজার বছর আগে ভগবান শ্রীকৃঞ্চের আর্বিভাব হয়েছিল। শ্রীকৃঞ্চের আদর্শ ধারণ করতে পারলেই হানাহানিমুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলা সম্ভব।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা প্রাণ দিয়েছেন, আমি তাদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। ভারতীয় বাহিনীর অনেকে যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন, এটা আমাদের জন্য গর্ব।
‘স্বাধীনতার পর গত ৪৮ বছরে বাংলাদেশের অনেক অর্জন আছে। বাংলাদেশ অর্থনীতিতে প্রভূত উন্নতি করে এখন মধ্যম আয়ের দেশ হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই উন্নতিতে ভারত খুবই খুশি। ভারত সবসময় বাংলাদেশের পাশে ছিল। বর্তমানেও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে’ বলেন অনিন্দ্য ব্যানার্জী
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, জাতির জনকের নেতৃত্বে যুদ্ধ করে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতি সেই দেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমরা মুক্তিযুদ্ধে সামিল হয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-খ্রিস্টান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক হয়েছিল, এবারও সেভাবে এদেশের সকল বাঙালি মিলে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উন্নত বাংলাদেশ আমরা গড়বো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালে। আজ ৪৭ বছর পার হয়ে আমাদের অনেক উন্নয়ন, অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আবার অনেক কিছু করারও আছে। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সকলের প্রতি সহমর্মিতা নিয়েই যাতে আমরা বাংলাদেশ গড়তে পারি। উন্নয়নের পথে শেখ হাসিনার যাত্রায় যেন সবাই শামিল হতে পারি।
শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সহ-সভাপতি অলক দাশ। বক্তব্য দেন জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি বিমল কান্তি দে, সাবেক সভাপতি ও রাউজান পৌরসভার মেয়র দেবাশীষ পালিত, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার।
উদ্বোধন শেষে শুরু হয় শোভাযাত্রা। এতে শ্রীকৃঞ্চসহ বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি নিয়ে অংশ নেন নারীপুরুষ ও শিশু। ঢোলবাদ্য বাজিয়ে, নেচে-গেয়ে তারা এসময় আনন্দ প্রকাশ করেন।
জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ এ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এছাড়া জন্মাষ্টমী উপলক্ষে নগরীর জে এম সেন হলে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রক্তদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচীরও আয়োজন করা হয়েছে।
এইচটি/এএইচ