বড় সাজ্জাদের অস্ত্রে ছোট সাজ্জাদের ট্রিগার: চট্টগ্রামের জোড়া খুনে ভয়াল বাস্তবতা

চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ায় সংঘটিত চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। পুলিশ জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করেছিল নগর পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খান ওরফে বড় সাজ্জাদ। অস্ত্রটি তিনি ‘উপহার’ হিসেবে দিয়েছিলেন তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছোট সাজ্জাদকে। ছোট সাজ্জাদ গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই অস্ত্রটি একাধিকবার হাতবদল হয়। সন্ত্রাসী বড় সাজ্জাদ ওরফে সাজ্জাদ হোসেন খান দীর্ঘদিন ধরে দুবাই ও ভারতে পলাতক রয়েছেন।

বাকলিয়ায় সংঘটিত চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের ঘটনায় সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে ছোট সাজ্জাদের সহযোগী বেলালকে গুলি ছুঁড়তে দেখা গেছে।
বাকলিয়ায় সংঘটিত চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের ঘটনায় সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে ছোট সাজ্জাদের সহযোগী বেলালকে গুলি ছুঁড়তে দেখা গেছে।

জোড়া খুনের ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মার্চ রাতে। এ ঘটনায় সাত দিনের রিমান্ডে থাকা ছোট সাজ্জাদ জিজ্ঞাসাবাদে এই তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) দক্ষিণ জোনের উপকমিশনার মো. আলমগীর হোসেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছি। উদ্ধার করা হয়েছে খুনে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও পোশাক। অভিযুক্ত মো. সজীব আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।’

তবে এখনও উদ্ধার হয়নি খুনের অস্ত্র। এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে উপকমিশনার বলেন, “বড় সাজ্জাদ অস্ত্রটি ‘উপহার’ হিসেবে ছোট সাজ্জাদকে দিয়েছিলেন। এটি একাধিকবার হাতবদল হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই উদ্ধার অভিযান চালাতে সময় লাগছে।”

সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় মোট ১৩ জন, যাদের ছয়টি মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে দেখা গেছে। তিনটি মোটরসাইকেল ছিল ব্যাকআপে। হত্যায় ব্যবহৃত হয়েছে উন্নতমানের ৯ এমএম পিস্তল ও শটগান।

সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন জানান, গত ১৩ এপ্রিল আদালত ছোট সাজ্জাদের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। তার বিরুদ্ধে মোট আটটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, যার মধ্যে পাঁচটি চান্দগাঁও, একটি বায়েজিদ ও দুটি হাটহাজারী থানায়।

ছোট সাজ্জাদকে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয় গত ১৫ মার্চ ঢাকার বসুন্ধরা সিটি শপিং মল থেকে। তাহসীন হত্যা মামলায় তিনি তখন মুখ না খুললেও এবার জেরার মুখে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।

ছোট সাজ্জাদের বাড়ি হাটহাজারীর শিকারপুর এলাকায়। তার বিরুদ্ধে অন্তত ১৬টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে পাঁচটি খুনের মামলা। তার স্ত্রী শারমীন আক্তার তামান্না গ্রেপ্তারের পর ফেসবুকে ‘টাকা দিয়ে স্বামীকে ছাড়িয়ে আনবেন’ বলে পোস্ট দিয়ে বিতর্কে আসেন।

এই জোড়া খুনের ঘটনায় নিহত বখতিয়ার হোসেন মানিকের মা ফিরোজা বেগম ১ এপ্রিল বাকলিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী তামান্নাকে হুকুমদাতা এবং হাছান, ইমন, খোরশেদ ও বোরহানকে সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

পুলিশ জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে অপর সন্ত্রাসী সারোয়ারের বিরোধ ছিল। সাজ্জাদের গ্রেপ্তারের পর তার অনুসারীরাই এ হামলা চালায় বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

ছোট সাজ্জাদ, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বড় সাজ্জাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। গত বছর চাঁদা না পেয়ে চট্টগ্রাম নগরীর কালারপুল এলাকায় গুলি চালিয়ে ৬০ জন শ্রমিককে ভয় দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

পুলিশ আরও জানায়, গত ৫ জুলাই, ২৭ অক্টোবর ও ২৯ আগস্ট চট্টগ্রামে আরও তিনটি খুনে সরাসরি যুক্ত ছিল সাজ্জাদ বাহিনী। সবশেষ ২১ সেপ্টেম্বর মাইক্রোবাস থেকে নেমে ব্যবসায়ী তাহসীনকে গুলি করে হত্যা করে তারা। পরে গ্রেপ্তারের চেষ্টায় পুলিশের ওপরও গুলি চালিয়ে পালায় সাজ্জাদ। এরপর ফেসবুক লাইভে বায়েজিদ থানার ওসি-কে হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসে সে।

জেজে/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm