বঙ্গোপসাগরের জাহাজ থেকে রহস্যময় সংকেত, বাঘ-রাখালের খেলায় ফাঁসছে ‘এলিনা-২’

মাদার ভেসেল এমভি এলিনা-২ বিপদে পড়েছে গভীর সমুদ্রে। বিপদের সংকেত পেয়ে ছুটে গেল নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ড। এভাবে তিন দিনে তিনবার ‘বিপদ’ আসে এলিনা-২ জাহাজের ওপর। তিনবারই বাংলাদেশ নৌবাহিনী ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয় নৌবাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু তিনবারই বিভ্রান্ত হন দেশের সমুদ্র নিরাপত্তায় জড়িত নৌবাহিনীর দল ও কোস্টগার্ড কর্মীরা। জাহাজটি উদ্ধার ও নিরাপত্তার সব ধরনের আয়োজন করে ওই জাহাজকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে গেলেও ঘটনাস্থলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটার লক্ষণই দেখা যায়নি। তাহলে কেন তিন তিনবার বিপদ সংকেত? এর পেছনে কী রহস্য— তার কোনো জবাব মেলেনি।

এই ঘটনায় এবার নড়েচড়ে বসেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। অনেকটা ‘বাঘ আর রাখালের’ পুরনো গল্পের মতোই এমভি এলিনা-২ থেকে এ ধরনের রহস্যময় ঘটনা পর ওই জাহাজ ও জাহাজের লোকাল এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

তিন তিনবার বিপদ সংকেত পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ওই জাহাজের ক্যাপ্টেন ‘ভুল’ হয়েছে বা ‘ভুলে যন্ত্রে চাপ পড়েছে’ বলে জানায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে।

কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মতে, একটি জাহাজ সমুদ্রের মধ্যে বিপদে পড়ার সংকেত দেওয়া ভুল হতে পারে না। এটা মেনে নেওয়ার মতো নয়। তাও তিন দফায়। ভুল একবার কিংবা দুইবার হয়, কিন্তু তিনবার ভুল হওয়া তো মেনে নেওয়ার মতো নয়।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, গভীর সমুদ্রে একটি জাহাজ যখন বিপদে পড়ে তখন সম্ভাব্য সব বিপদের কথা মাথায় রেখে উদ্ধার কাজে এগিয়ে যেতে হয়। তিন বারই এগিয়ে গিয়ে কিছু না পাওয়া— এটা নৌবাহিনী ও বন্দর কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করার মতো। ভুল তিনবার হতে পারে ন। তাই এমভি এলিনা-২ জাহাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এমভি এলিনা-২ একটি বাল্ক ক্যারিয়ার কার্গো। পানামা পতাকাবাহী এই জাহাজটি তৈরি হয়েছিল ২০০৬ সালে। সাড়ে ৮ মিটার ড্রাফট ও ২২৫ মিটার লম্বা জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট জেব্রা শিপিং লিমিটেড।

জানা গেছে, ওই জাহাজটি সিঙ্গাপুর থেকে ৫০ হাজার টন সিমেন্ট ক্লিংকার নিয়ে গত ১২ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ১৬ ডিসেম্বর এটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে আসে। সেখান থেকে ৩১ হাজার টন পণ্য খালাস করা হয়। বাকি ১৯ টন খালাসের কথা মংলা বন্দরে।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে থাকাকালে ২৩ ডিসেম্বর একবার, ২৬ ডিসেম্বর একবার এবং সবশেষ ২৭ ডিসেম্বর আউটার থেকে রওনা হয়ে মংলা বন্দরের যাওয়ার পথে সেন্টমার্টিন উপকূলে আরেকবার বিপদ সংকেত দেওয়া হয় জাহাজটি থেকে। বিপদ সংকেত পেয়ে প্রতিবারই ছুটে যায় বাংলাদেশের নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড টিম। কিন্তু প্রতিবারই ঘটনাস্থলে গিয়ে কোনো দুর্ঘটনার লক্ষণও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমোডর মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান (বিএন) চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এমভি এলিনা-২ জাহাজ থেকে তিনবার ‘ডিসট্রেস সিগন্যাল’ এসেছে। এর জবাবে আমাদের উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে। কিন্তু কোন ঘটনা ছাড়া এ ধরনের সিগন্যাল বিভ্রান্তির সামিল। তাই বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ওই জাহাজের শিপিং এজেন্টকেও। তবে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে যদি এ ‘ডিসট্রেস সিগন্যাল’ পড়ে তাহলে অন্য কথা।’

চট্টগ্রাম বন্দরের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘তিন দিনে তিনবার বিপদ সংকেত এসেছে এমভি এলিনা-২ থেকে। এটি যান্ত্রিক ক্রটির কারণে হয়েছে বা ভুল হয়েছে বলে জাহাজের ক্যাপ্টেন জানিয়েছে। কিন্তু ভুল হলেও সংকেত পাওয়া মাত্র ছুটে গিয়েছিল আমাদের নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড। এখন জাহাজটি মংলা বন্দরে চলে গেছে। জাহাজটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট জেব্রা শিপিং লিমিটেডকে জবাব চেয়ে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এমভি এলিনা-২ এর বাংলাদেশের শিপিং এজেন্ট জেব্রা শিপিং লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আজাদ বলেন, ‘বন্দর কর্তৃপক্ষের কোনো চিঠি আমরা এখনও পাইনি। আমাদের মাদার ভেসেল এমভি এলিনা-২ বর্তমানে মংলা বন্দরে রয়েছে। জাহাজ কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়নি বিপদ সংকেত দেওয়ার কথাটি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!