বঙ্গবন্ধু বিপিএলে গেইল আসছেন না!

এ পর্যন্ত বিপিএলের যতোগুলো আসর হয়েছে প্রতিটিতেই কোন না কোন বিতর্ক সঙ্গী ছিল। তাতে করে অনেকেই তো বাংলাদেশে প্রিমিয়ার লিগকে বিতর্ক প্রিমিয়ার লিগ বলেও ব্যঙ্গ করেন। এবারের আসরের ঠিক পূর্বমুহূর্তে বিপিএল কমিটি আগের সব ফরম্যাট বাতিল করে নিজেদের উদ্যোগেই বিপিএল আয়োজন করছে। আসছে বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এবারের বিপিএলের নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু বিপিএল। থাকছেনা কোন মালিক, অর্থাৎ সবগুলো দলের মালিকই বিসিবি। বিসিবির পরিচালকদের বিভিন্ন দলে ভাগ করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। একটু সময় নিয়ে দিন কয়েক আগে বিসিবি আয়োজন করে খেলোয়াড়দের নিলামও। সোমবার প্রকাশ করা হয় এবারের আসরের পূর্ণাঙ্গ সূচি। এসব দেখে মনে হয়েছিল যাক, এবার অন্তত ভিন্ন ফরম্যাটে হলেও বিতর্কহীন বিপিএলের আয়োজন হতে যাচ্ছে। কিন্তু বিপিএলের ভাগ্যে মনে হয় বিতর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

লটারিতে বিদেশি ক্রিকেটার তালিকায় প্রথম সুযোগ পেতেই চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স টি-টোয়েন্টির স্বঘোষিত ‘দ্য ইউনিভার্স বস’ ক্রিস গেইলকে দলে টেনে নেয়। লটারির সেই মুহূর্তে বিজয়ীর হাসিতে ছিলেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের এবারের অধিপতিরা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বিপিএল শুরুর আগেই তাদের সেই হাসি উড়ে গেছে। ক্রিস গেইল এখন তাদের জন্য আশ্বাস নয়; বরং দুঃশ্চিন্তার অন্য নাম! বিপিএলে প্রতিবার পারফরম্যান্স দিয়ে ক্রিকেট মোদিদের চমকে দেন ক্রিস গেইল। তবে এবার খেলা শুরুর আগেই তিনি যে আরও বড় ‘খেল’ দেখালেন! বুধবার হঠাৎ করেই ক্রিস গেইল এক ঘোষণায় জানিয়েছেন- ‘আমি জানি না সামনের দিনে আমার সামনে কোন ক্রিকেট অপেক্ষা করছে। দেখলাম কিভাবে আমার নাম বিপিএলে চলে গেল! দেখা গেল আমি একটা দলের ড্রাফটেও চলে গেলাম, অথচ আমি কিছুই জানলাম না। কিভাবে এসব হলো!’

অর্থাৎ ক্রিস গেইল দাবি করছেন তার অনুমতি না নিয়েই তার নাম বিপিএলের লটারিতে তোলা হয়েছে। তাকে একটা দল ড্রাফটে রেখেও দিয়েছে! দক্ষিণ আফ্রিকায় ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টিতে টানা বাজে পারফরম্যান্সের পর সামনের সময়টা গেইল কিভাবে কাটাবেন সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বিপিএল নিয়ে এই মন্তব্য করেন। -তাহলে পরিস্থিতি কি দাঁড়ালো?

গেইলের কাছ থেকে যথাযথ অনুমতি না নিয়েই কি তার এজেন্ট এবারের বিপিএল ড্রাফটে নামটা পাঠিয়েছিল? এদিকে বঙ্গবন্ধু বিপিএলে গেইলকে দলে টানা চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের দলীয় পরিচালক ও বিসিবির পরিচালক জালাল ইউনুস সাফ জানিয়েছেন- ‘আমরা ড্রাফটের প্রথম সুযোগেই গেইলকে দলে নিয়েছি। তাকে রেখেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছি। এখন সে যদি না আসে তাহলে তো আমরা বড় সমস্যায় পড়ব। তাকে দলে নেওয়ার পর আমরা তো তার সঙ্গে আর্থিক বিষয়াদি নিয়েও আলোচনা করেছি। কিন্তু পেছনের কয়েক দিন ধরে তার কোনো সাড়া শব্দ আমরা পাচ্ছি না। আর এখন শুনছি সে এসব বলছে! বুঝতে পারছি না সমস্যাটা কোথায়?’

গেইলের এই গোলমেলে মন্তব্য প্রসঙ্গে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামুদ্দিন সুজন সাংবাদিকদের জানান- ‘এসব ক্ষেত্রে আমরা মানসম্মত প্রক্রিয়াই গ্রহণ করে থাকি। যখন কোনো খেলোয়াড় বা তার এজেন্ট আগ্রহ দেখায় তখন তার নাম তালিকাবদ্ধ করা হয়। এটা একটা সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যেই হয়ে থাকে। এখন গেইল সম্পর্কে এমন তথ্য জানার পর আমরা সেই প্রক্রিয়াটা পুনরায় পরীক্ষা করেছি। দেখা গেছে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই তার নাম ড্রাফটে তোলা হয়ে ছিল।’

যদি প্রক্রিয়াটা ঠিকই হয়ে থাকে তাহলে গেইল আকস্মিক কেন এমন মন্তব্য করলেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে বিসিবিও। সিইও জানান-‘প্লেয়ার্স এজেন্টের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি। আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে।’ বিসিবি সব ঠিক হয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিচ্ছে। তবে টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই ক্রিস গেইলের এমন বেফাঁস মন্তব্য নিশ্চয়ই বিপিএলের সুনাম বাড়াচ্ছে না- সেটা নিশ্চিত!

অথচ, দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ এমজানসি সুপার লিগের (এমএসএল) মাঝপথ থেকেই হঠাৎ নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন গেইল। এমনকি আগামী মাসেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভারত সফরে তিনি থাকতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডকে। বলেছেন, চলতি বছরের বাকি কয়টা দিন তিনি বিশ্রাম নিতে চান এবং ২০২০ সালে একেবারে ফ্রেশ মন-মানসিকতা নিয়ে আবারও ফিরে আসতে চান বাইশ গজে। ইএসপিএন ক্রিকইনফো রিপোর্ট করেছে, শুধু ভারত সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলেই নয়, গেইল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগেও তিনি খেলবেন না। ওই সময়ই বিপিএলের ড্রাফটে নিজের নাম থাকা এবং একটি দল কর্তৃক তাকে দলভুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন গেইল। এ সময় তিনি যারপরনাই বিস্ময় প্রকাশ করেন।

গেইল বলেন, ‘আমি বিগ ব্যাশেও এবার খেলবো না। আমি নিশ্চিত নই, সামনে কেমন ক্রিকেট আমার জন্য অপেক্ষা করছে। এছাড়া আমি জানিই না বিপিএলে কিভাবে আমার নাম নথিভুক্ত হলো। আমি অবাক হচ্ছি এই ভেবে যে, টুর্নামেন্টের একটা দল আমাকে নিয়ে নিল অথচ আমার কাছে কোনও খবরই নেই।’ অর্থাৎ, এই কথা দিয়ে গেইল বুঝিয়ে দিলেন, এবারের বিপিএলে আর তাকে পাচ্ছে না চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। গেইলের বিশ্রাম শেষ করে মাঠে ফিরতে ফিরতে, ততদিনে বিপিএল শেষ হয়ে যাবে।

গেইল না থাকলে বিপিএলের জৌলুশ এমনিতেই অনেকখানি কমে যাবে। কারণ, এমনিতেই এবার নেই স্মিথ-ওয়ার্নার। ওয়াটসন আসছেন না। ভারতীয়দের তো বিপিএলে আসা হয় না। অন্য অনেক বড় বড় তারকাকেও পাওয়া যাচ্ছে না এবারের বিপিএলে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!