বাংলাদেশ-ফিলিস্তিন ম্যাচ দিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টের ষষ্ঠ আসরের পর্দা উঠেছে ১৫ জানুয়ারি। দর্শকহীন ফাঁকা গ্যালারিতে প্রথম ম্যাচেই ফিলিস্তিনের কাছে ২-০ গোলে হোঁচট খেয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। মাঠের পারফরম্যান্স যেমন হতাশ করেছে সমর্থক থেকে ফুটবল বোদ্ধাদের; তেমনি মাঠের বাইরে কার্মকান্ডও।
মানহীন দল এনে আগেই টুর্নামেন্টের জৌলুস নষ্ট করেছে; তার ওপর জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা বলে মানুষকে বোকা বানিয়েছেন বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। টুর্নামেন্টের সাদামাটা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছে; প্রচার-প্রচারণা থেকে র্যালি আয়োজন সবখানেই অবহেলার ছাপ ছিল সুস্পষ্ট। খেলা মাঠে গড়ালেও নেই তেমন আলোড়ন। পুরো ব্যাপারটায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ভূমিকা নিয়ে হতাশ অনেকেই। তাদেরই একজন বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও বাংলাদেশ ফুটবল ক্লাবস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন।
শনিবার রাজধানীর মহাখালীতে নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘দেখুন, এরইমধ্যে মুজিব বর্ষের কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে। আমরা সবাই জানি বঙ্গবন্ধু শুধু একটি নামই নয়, গোটা বিশ্বের কাছেই একটি ইনস্টিটিউশন। সেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর কাউন্টডাউন শুরুর পর ফুটবল ফেডারেশনের প্রথম টুর্নামেন্ট হচ্ছে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল। এই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের কোনোরকম প্রচার-প্রচারণা নেই বললেই চলে। দায়সারা গোছের একটা র্যালি করেছে। আমরা আশা করেছিলাম সেখানেও অন্তত বাংলাদেশের যে ক্লাবগুলো আছে, যারা ফুটবল ফেডারেশনের এফিলিয়েটেড, বাংলাদেশ জেলা-বিভাগ যেটা আছে সবাইকে যুক্ত করা উচিত ছিল। সংগঠক-সাবেক ফুটবলারদের যুক্ত করা উচিত ছিল। সেটা কিন্তু আমরা দেখিনি।’
একই সঙ্গে টুর্নামেন্টের মান নিয়েও প্রশ্ন তুললেন রুহুল আমিন। যিনি একইসঙ্গে বাংলাদেশ ফুটবল ক্লাব’স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। তিনি জানালেন, ‘টুর্নামেন্টের মান নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশেষ এই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বিশ্বের নামকরা যে দলগুলোর আসা উচিত ছিল, সাউথ-ইস্ট এশিয়াতেও যারা ভালো দল ছিল তাদের আমন্ত্রণ জানালে ভালো হতো। আমাদের পাশের দেশ ভারতকেও আমরা আমন্ত্রণ জানাতে পারতাম। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, জাপান ও কোরিয়া ছিল। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশও ছিল, সেই দলগুলোকে যদি আনতে পারতাম তাহলে ভালো হতো। আর সেটা করতে পারলেই বঙ্গবন্ধুর নামে শতবার্ষিকীর এই টুর্নামেন্টটা সত্যিকারের মর্যাদা পেত। কিন্তু সেটা হয়নি বলেই ম্লান হয়ে গেছে। এই টুর্নামেন্ট আয়োজনে যুক্ত বাফুফের যে কর্মকর্তারা, অন্য যারা সরাসরি টুর্নামেন্টের সঙ্গে জড়িত আমার মনে হয় কোথাও কোনো একটা ঝামেলা হয়েছে। না হলে বঙ্গবন্ধুর নামে আয়োজিত এই টুর্নামেন্ট কেন এতোটা সাদামাটাভাবে শুরু হবে?’
বঙ্গবন্ধুর নামে আয়োজিত বিশেষ বিপিএল শেষ হয়েছে একদিন আগেই। যে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনীতে ছিলেন বলিউড তারকারা। ফাইনাল ম্যাচেও উপচে উঠেছিল গ্যালারি, এই প্রসঙ্গটা টেনে এনে তরফদার রুহুল আমিন বলছিলেন, ‘আপনারা ক্রিকেট বোর্ডের আয়োজনে বঙ্গবন্ধু বিপিএল দেখলেন, কতোটা জমজমাটভাবে হলো। বিষয়টা এমনই হতে হবে। বঙ্গবন্ধুর নামে বলে কথা। ফুটবলের আয়োজনটা দেখুন কোনো প্রচার-প্রচারণা নেই। যে দলগুলোকে নিয়ে আসা হলো-সেই দলগুলো বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে পরিচিত নয়। মরিশাসের কথাই ধরুন-তাদের দলে সতের-ষোল বছর বয়সী ফুটবলার রয়েছেন। কোনো রকমভাবে দল গড়ে তারা এসেছে।
সবচেয়ে ভালো দল নিয়ে এসেছে ফিলিস্তিন। যদিও তারা অনূর্ধ্ব-২৩ দল নিয়ে এসেছে। অবশ্য জাতীয় দলের ৬/৭ জন আছে। সিসেলস নামের একটা দেশ এসেছে যাদের র্যাঙ্কি দুইশ। আমাদের থেকে নিচে। একইসঙ্গে ওদের দল নিয়েও কোনো ধারণা নেই। বুরুন্ডি নামে একটা দল আছে। আফ্রিকায় খেলে। এই যে দল নির্বাচন, এটাতেই ব্যাপক সমস্যা হয়েছে। এটা কী ইচ্ছাকৃতভাবে তড়িগড়ি করে বঙ্গবন্ধুর নামে টুর্নামেন্ট করে ট্রফিটা বাংলাদেশে রাখার জন্য করা হয়েছে নাকি কী উদ্দেশ্যে করা হয়েছে এটা কিন্তু এখন জিজ্ঞাসার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরো বিষয়টায় আমরা হতাশ হয়েছি।’
বঙ্গবন্ধুর নামে আয়োজিত এই টুর্নামেন্টে বাফুফে সবাইকে যুক্ত না করার অভিযোগ এনে তিনি আরও বলেন, ‘সবাইকে যুক্ত করা উচিত ছিল। আমরা যারা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট করেছি, তাদের সঙ্গে রাখলে ভালো কিছু হতো। বঙ্গবন্ধুর শতবার্ষিকীতে প্রথম টুর্নামেন্ট, এই টুর্নামেন্টের গুরুত্ব অনেক বেশি সেটা মাথায় রেখেই কাজটা করা উচিত ছিল।’