ফ্লেচারের সেঞ্চুরিতে খুলনাকে থামিয়ে সিলেটের প্রথম জয়

খুলনা টাইগার্স আর সিলেট থান্ডার, দুই দল বিপরীত মেরুতে। খুলনা টাইগার্সের যেখানে টানা তিন জয়, সিলেট থান্ডার সেখানে এখনো জয়ের মুখ দেখেনি। হেরেছে টানা চারটি ম্যাচ। এই দু’দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে তাই খুলনা টাইগার্সকে ফেবারিট মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে শনিবার সবাইকে চমকে দিলো সিলেট থান্ডার। আসলে চমকে দেয়ার কাজটি করেছেন ফ্লেচার ও জনসন। ব্যাটকে খুনে তরবারি বানিয়ে মাত্র ৩৭ বলে ৯০ রানে পৌঁছে যাওয়া জনসন বিপিএলের প্রথম সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে থেমে গেলেও থামেননি ফ্লেচার। ইনিংস ওপেন করতে নেমে এসেছেন পুরো ২০ ওভার খেলে। আর তাতে সিলেটের স্কোর গিয়ে দাঁড়ালো বিপিএল ইতিহাসের চতুর্থ সর্বোচ্চ চূড়ায়, ২৩২ রানে। খুলনা ভালো ফর্মে থাকলেও এতোবড় পাহাড় পাড়ি দিতে পারেনি, থেমে যায় ১৫২ রানে। নিজেরা প্রথম হারের স্বাদ পেলেও সিলেট পেয়ে যায় আসরের প্রথম জয়, তাও ৮০ রানের বড় ব্যবধানে।

ম্যাচ জয়ের আসল কাজ সিলেট থান্ডার সেরে ফেলেছিল ব্যাটিং পর্বেই। ২৩২ রানকে টি-টোয়েন্টিতে জয়ী টার্গেট না ভাবার কোনো কারণই নেই! আন্দ্রে ফ্লেচার ও চার্লস জনসনের অনবদ্য ব্যাটিংয়ের সুবাদে সিলেট থান্ডার গড়ে ২৩২ রান। চলতি টুর্নামেন্টের প্রথম সেঞ্চুরির কৃতিত্ব দেখান আন্দ্রে ফ্লেচার। সিলেটের ওপেনার ৫৭ বলে ১১ বাউন্ডারি ও ৫ ছক্কায় ১০৩ রানে অপরাজিত থাকেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ব্যাটসম্যান।

বিপিএলের শুরু থেকেই সিলেট রান করতে পারে না, এমন একটি অভিযোগের তীর ছিল। তাই এদিন শুরু থেকেই বিশাল স্কোর গড়ার দিকে মনোযোগ দেয় সিলেট। ইনিংসের প্রথম ওভারেই ওপেনার আব্দুল মজিদকে হারায় তারা। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১১.৪ ওভারে ফ্লেচার ও জনসন ১৫১ রানের বিশাল রান যোগাড় করেন। আন্দ্রে ফ্লেচারের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে সিলেটের সংগ্রহ দুশো ছাড়িয়ে যায়। তবে ফ্লেচারের চেয়ে জনসনের ব্যাটে তাণ্ডব ছিল বেশি। মাত্র ২৫ বলে ফিফটি করা জনসন ১১ চার আর ৫ ছয়ে করেন ৯০ রান।

বিপিএলের প্রথম সেঞ্চুরি ফ্লেচারের
মুশফিকুর রহীম হতে পারতেন এবারের বিপিএলের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান। কিন্তু তিনি থেমে গিয়েছিলেন ৯৬ রানে। আজ খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে সিলেট থান্ডারের ব্যাটসম্যান জনসন চার্লসও প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হতে পারতেন। কিন্তু তিনিও আউট হয়ে গেলেন ৯০ রানে। অবশেষে এবারের বঙ্গবন্ধু বিপিএল প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে গেলো। ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান আন্দ্রে ফ্লেচারই হয়ে গেলেন এবারের বিপিএলের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান।

খুলনা তাদের ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট হারায়। আফগানিস্তানের ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ গোল্ডেন ডাক মারেন। কিন্তু অপর ওপেনার সাঈফ হাসানকে সঙ্গে নিয়ে দারুণ ফর্মে থাকা খুলনার ওয়ান ডাউন ব্যাটসম্যান রাইলি রুশো রান তাড়ার চ্যালেঞ্জটা নেন। মাত্র ৩০ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পান রুশো। ৪ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায় আসে তার এই হাফ-সেঞ্চুরি। বঙ্গবন্ধু বিপিএলে চার ম্যাচে এটি তার তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি!

তবে হাফ-সেঞ্চুরির পরপরই নাভিন-উল-হকের লো ফুলটসে আরেকটি ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ তুলে ফিরেন রুশো। স্কোরবোর্ডে রানের বিপুল চাহিদা দেখে শামসুর রহমান প্রতিটি বলেই চালিয়ে খেলতে গিয়ে আউট হলেন। দলের স্কোরবোর্ডে ১০০ রান উঠার পর মুশফিক রহিমও ফিরে এলেন।

শেষের দিকে ২০ বলে ৪৪ রান করে রোবি ফ্রাইলিঙ্ক একাই লড়াই করলেন। কিন্তু আস্কিং রান রেট ক্রমশ এতো বেশি উচ্চতায় গিয়ে পৌঁছাল যে সেখান থেকে ম্যাচ জেতা খুলনার জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ইনজুরির কারণে খুলনার শেষ ব্যাটসম্যান শফিউল ইসলাম ব্যাট করতে নামেননি। ১৫ ওভারে খুলনার স্কোর ছিল ৬ উইকেটে ১২৮ রান। ম্যাচ জিততে শেষ পাঁচ ওভারে তাদের প্রয়োজন দাঁড়ায় ১০৬ রান। ওভার প্রতি চাই তখন প্রায় ২১ রান!

অসম্ভব সেই টার্গেটের ধারে কাছেও পৌঁছাতে পারেনি খুলনা টাইগার্স। টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারের পর খুলনা টাইগার্সের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন বলছিলেন-‘এই হার এখন নিশ্চয়ই আমাদের ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলবে!’

ব্যাটিং স্বর্গে টসে জিতেও আগে ব্যাটিংয়ের সুযোগটা কেন নিলেন না খুলনার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম- সেটাও একটা প্রশ্ন। রান তাড়া করে আগের তিনটি ম্যাচ জেতার অভ্যাসের জন্যই সম্ভবত এই সিদ্ধান্ত নেন মুশফিক।

কিন্তু একই সিদ্ধান্ত ক্রিকেটে প্রতিদিনই খাটে না!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট থান্ডার: ২৩২/৫ (২০ ওভারে, ফ্লেচার ১০৩*, জনসন ৯০; ফ্রাইলিঙ্ক ২/৩৭)।
খুলনা টাইগার্স: ১৫২/১০ (১৮.৩ ওভারে, রুশো ৫২, মুশফিক ১২, ফ্রাইলিঙ্ক ৪৪; সান্টোকি ৩/৩৭, মনির হোসেন ২/৩১ ও এবাদত ২/১৭)।
ফল: সিলেট থান্ডার ৮০ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: আন্দ্রে ফ্লেচার।

ksrm