ফের বেপরোয়া পেকুয়ার চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর, ২ ইউপি সদস্যকে মারধর-অপহরণ

কক্সবাজারের পেকুয়ায় ফের বেপরোয়া হয়ে ওঠেছেন এককালের প্রতাপশালী ডাকাত সর্দার ও বর্তমানে রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর। তার নেতৃত্বে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকে ইউপি সদস্য আজম উদ্দিন আজু ও নেজাম উদ্দিন নেজুকে প্রচণ্ড মারধর করে। পরে ইউপি সদস্য নেজুকে অপহরণ করে ইউনিয়নের বদিউদ্দিন পাড়ায় নিয়ে যায়। তবে পুলিশি অভিযানের মুখে ইউপি সদস্য নেজুকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর।

শনিবার (১৬ মে) দুপুর ২টার দিকে রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

নেজাম উদ্দিন নেজু রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং আহত অপর ইউপি সদস্য আজম উদ্দিন আজু ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য। পেকুয়া থানা পুলিশ দুইজনকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাজাখালী ইউপির প্যালেন চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া, ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন আনু ও মনজুর আলম বলেন, শনিবার সকালে ইউপি সচিব সকল ইউপি সদস্যদের ফোন দিয়ে কার্যালয়ে উপস্থিত হতে বলেন। ইউপি সদস্যদের গত ২৭ মাস ধরে বন্ধ থাকা সম্মানি ভাতা দিতে বৈঠকটি ডাকা হয়েছিল। আমাদের সঙ্গে আলাপের পর ইউপি সচিব সিদ্ধান্ত জানতে চেয়ারম্যানের বাড়িতে যান। ওখান থেকে ইউপি সচিব ফিরে আসার আগেই চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর ও তার অনুগত সন্ত্রাসীরা দুটি অটোরিকশাযোগে ইউপি কার্যালয়ে হাজির হন। ওই সময় তার শরীরে লুঙ্গি ছাড়া আর কিছুই ছিল না। একপর্যায়ে সকল ইউপি সদস্যদের ভেতর থেকে আজম উদ্দিন আজুকে টেনে নিয়ে মারধর শুরু করে। ইউপি সদস্য আজু কৌশলে চেয়ারম্যানের কবল থেকে ছুটে এসে পালানোর পর নেজাম উদ্দিন নেজুকে মারধর শুরু করে। আমরা সবাই এ ঘটনায় হতবাক হয়ে পড়ি। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান ইউপি সদস্য নেজুকে মারধর করতে করতে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে বদিউদ্দিন পাড়ার দিকে চলে যান। সেখানে নিয়ে যাওয়ার খবরটি আমরা তাৎক্ষণিকভাবে পেকুয়া থানার ওসি কামরুল আজমকে অবগত করি। থানা থেকে ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান একদল পুলিশ নিয়ে এসে অপহৃত ইউপি সদস্য নেজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করেন।

আহত ইউপি সদস্য আজম উদ্দিন আজু বলেন, চেয়ারম্যান তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে কার্যালয়ে এসে প্রথমে আমাকে মারধর করে। আমি পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও নেজু মেম্বারকে মারধর করার পর অপহরণ করে নিয়েও যায়। বদিউদ্দিন পাড়ায় নিয়ে তাকে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়।

ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য নেজাম উদ্দিন নেজু বলেন, আমাদের সম্মানি ভাতা বন্ধ ২৭ মাস ধরে। আজকে সব ইউপি সদস্যকে ভাতা দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে যায় সচিব নবিউল ইসলাম। আমরা যখন ইউপি কার্যালয়ে অবস্থান করি তখন চেয়ারম্যান ছিল না। সচিব আমাদের সাথে আলাপ করে চেয়ারম্যানের বাড়িতে যান। সেখানে তিনি চেয়ারম্যানকে কি বলছেন, না বলছেন আমরা জানি না। চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে অস্ত্র সজ্জিত হয়ে ইউপি কার্যালয়ে উপস্থিত হন। মেম্বার আজুকে মারধর শুরু করলে আত্মরক্ষার্থে তিনি পালিয়ে যান। পরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আমাকে তাদের গাড়িতে তুলে নেয়। গাড়িতে মারধর করতে করতে বদিউদ্দিন পাড়ায় একটি পরিত্যাক্ত বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে আটকে রেখে আমার পুরো শরীরে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। আমাকে মারধরে এনাম, আন্টুসহ ১৫ জনের মত চিহ্নিত সন্ত্রাসী উপস্থিত ছিল। পরে পুলিশ আসার খবর পেয়ে সচিবের গাড়িতে আমাকে ইউপি কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু পথিমধ্যে পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে।

এদিকে ইউপি সচিব নবিউল ইসলাম ও চেয়ারম্যান ছৈয়দ নুর এবিষয়ে বক্তব্য দিতে অপরাগত প্রকাশ করেছেন।

পেকুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, অপহৃত নেজু মেম্বারকে চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

পেকুয়া থানার ওসি কামরুল আজম বলেন, খবর পাওয়ার সাথে সাথে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে অপহৃত ইউপি সদস্যকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!