ফেরত আসতে বাধ্য ১২৫ বাংলাদেশিকে করোনার ভয়ে নামতে দেয়নি ইতালি

ইতালির রোমের ফিউমিসিনো বিমানবন্দরে অবতরণকারী কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিমান থেকে নামতে না দিয়ে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে ১২৫ জন বাংলাদেশিকে। বুধবার (৮ জুলাই) দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে এসব যাত্রী রোমের ফিউমিচিনো এয়ারপোর্টে অবতরণ করেন। তবে করোনা আতঙ্কে শেষ পর্যন্ত এসব যাত্রীকে বিমান থেকে নামতে দেওয়া হয়নি। তবে কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটটিতে থাকা অন্যান্য দেশের ৮০ যাত্রীর নামার অনুমতি মিলেছে। বিমানবন্দরে তাদের করোনার নমুনা পরীক্ষা শেষে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশিদের মধ্যে কেবল একজন অসুস্থ নারী যাত্রীকে ইতালি প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। অবতরণের কয়েক ঘণ্টা পর বিকাল ৫টার দিকে একই বিমানে দোহা হয়ে ঢাকা ফেরত পাঠানো হয় যাত্রীদের।

কয়েকজন ইতালি প্রবাসী জানান, সম্প্রতি দুটি ফ্লাইটে ইতালিতে প্রবেশ করে বেশকয়েকজন বাংলাদেশি। এদের মধ্যে কয়েকজনের শরীরে করোনা ধরা পড়ে। যাদের করোনা শনাক্ত হয় তাদের ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকান নির্দেশ দেয় ইতালি সরকার। কিন্তু কয়েকজন করোনা আক্রান্ত বাঙালি তা অমান্য করে সুপার মার্কেটে ঘুরতে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাদের গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।। এরপর থেকেই বাংলাদেশির উপর ক্ষেপে যান ইতালি সরকার।

কেন ফেরত পাঠানো হলো এ সম্পর্কে রোমের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান শিকদার গণমাধ্যমকে জানান, বিমান অবতরণের পরপরই ঘটনা অবহিত হই এবং ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণনালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করি। আমাদের জানানো হয়, বাংলাদেশ থেকে ফেরা কয়েকজন যাত্রীর করোনার রিপোর্ট ছিল না। কিন্তু তাদের দৃশ্যত অসুস্থ মনে হচ্ছে। এ থেকে অন্য যাত্রীদের মাঝেও ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হয়। পাশাপাশি মঙ্গলবার ইতালির স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের নাগরিকদের ইতালি প্রবেশের সিদ্ধান্ত এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে। সেটিকেও বাংলাদেশের যাত্রীদের ইতালি প্রবেশ না করতে দেওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে, ইতালির রোম থেকে প্রবাসী খোরশেদুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ১২৫ বাংলাদেশিকে নিয়ে দোহা থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিমান ইতালির রোমের ফিউমিসিনো বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। বিমান থেকে যাত্রীদের নামতে দেওয়া হচ্ছে না। যাত্রীরা এখনও বিমানেই অবস্থান করছেন।

এর আগে গত সপ্তাহে অন্য একটি ফ্লাইটের ২৭৪ জন যাত্রীর মধ্যে ৩৯ জন বাংলাদেশি আরোহীর শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশের সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয় ইতালি।

এদিকে এখন ইতালির প্রশাসন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কড়া নজরদারিতে রয়েছেন বাংলাদেশিরা। ঢাকা থেকে ফেরা প্রতি ৮ জনের মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হচ্ছে। গত তিন সপ্তাহে নতুন করে ৭৫ বাংলাদেশি সংক্রমিত হয়েছেন। এরমধ্যে গত একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯ বাংলাদেশি।

শুধুমাত্র বাংলাদেশিদের করোনা পরীক্ষায় ইতালির রাজধানী রোমে একাধিক বুথ খোলা হয়েছে। বিনামূল্যে এসব বুথে ইতালিয়ান ২৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী নমুনা পরীক্ষা করবে। তবে আশার খবর হচ্ছে, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত গত ১৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোনো বাংলাদেশি প্রবাসীর করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি।

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক, আগামী এক সপ্তাহ ঢাকা থেকে ইতালিগামী সব ফ্লাইট সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

এদিকে আগামী শুক্রবার ইতালির স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশটিতে অবস্থিত মুসলিমদের জুমার নামাজ বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে।

এএস/এএইচ/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!