ফল ভালো তাই মনও ভালো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী জাবেদের

0

জাবেদ যখন পাড়ার মাঠে খেলতে যেতো তখন আড়ালে লুকিয়ে যেতো বন্ধুরা। জাবেদের কচি মনে গভীর দাগ কাটতো সেই ঘটনা। তার মা এই দৃশ্য দেখে আড়ালে-আবড়ালে মুখ লুকিয়ে কাঁদতেন। তখন সন্তানের দুঃখটা আরও বেড়ে যেতো। সেই থেকে তার প্রতিজ্ঞা- মা’কে হাসাতে না পারি অনন্ত কাঁদতে দিবো না।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী জাবেদ। পুরো নাম আবুল মনসুর জাবেদ। এবার জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুরস্থ সরকারি দৃষ্টি ও বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় থেকে অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৩.৭১ পেয়েছেন। সে আরও ভালো ফল প্রত্যাশা করলেও, তবে এটুকু ফলে সন্তুষ্ট। ফল ভালো তাই মনও ভালো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী জাবেদের।

পটিয়ার ডেঙ্গাপাড়ার আব্দুল সলিম ও রেহানা আক্তার দম্পত্তির তৃতীয় সন্তান জাবেদ। আব্দুল সলিম নিজেও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। পরিবার চলতো জাবেদের বড় বোনের চাকুরির টাকায়। সাথে যুক্ত হতো দাদার পেনশনের কিছু টাকা।

s alam president – mobile

জাবেদের বড় বোন নার্গিস আক্তার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের কর্মকর্তা। তিনি হাল ধরেছেন পিতার সংসারের। জাবেদের বড় ভাই আবুল হোসেন জাহেদ সম্মান তৃতীয় বর্ষ, আরেক ভাই জাওয়াদ হোসেন দশম শ্রেণি এবং আরেক বোন নাজমা আক্তার একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।

জাবেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আমার সংগ্রাম মায়ের অশ্রু মোছা আর নিজের পায়ে দাঁড়ানো। মা এখন আর আমার জন্য কাঁদেন না। দুঃসহ স্মৃতির সেই সময় আমি পিছনে ফেলে আসতে সক্ষম হয়েছি। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মাধ্যমে আমি এগিয়ে যেতে চাই।

জাবেদ চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে সদস্য সমাপ্ত প্রতিবন্ধী টুর্নামেন্টে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। ১৭৩২ পয়েন্টপ্রাপ্ত প্রতিযোগীর সাথে ড্র করেছে সে।

Yakub Group

অন্ধত্ব জয় করা জাবেদ বলেন, পরীক্ষায় সুস্থ শিক্ষার্থীদের চেয়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ২০ মিনিট সময় বেশি দেওয়া হয়। কিন্তু এই সময়েও আমাদের উত্তর লিখে শেষ করা যায় না। যিনি শ্রুতি লেখক থাকেন তিনি প্রশ্ন পড়ে শোনান, আমরা উত্তর দিলে তিনি শুনে শুনে লিখেন। এতে সময় আরও বেশি প্রয়োজন হয়।
তিনি আরও বলেন, জেএসসি পরীক্ষার ফল বাস্তব জীবনে কোনও কাজে আসে না। তবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল আমাদের জীবনের মোড় পরিবর্তনে সহায়ক হবে। তাই প্রতিবন্ধীদের পরীক্ষার সময় আরেকটু বৃদ্ধি করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ বরাবর আমার আবেদন থাকবে।’

একই স্কুল থেকে রওনক জাহান খান জেডিসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৩.৫৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি লোহাগাড়ার আইয়ুব খান ও ফারজানা বেগম দম্পত্তির সন্তান। রওনকের বড় দুই ভাইয়ের একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শাকিল খান এবার এইচএসসি পরীক্ষা পাশ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স পড়ছেন। অপর ভাই পড়ছে যন্ত্রকৌলশ বিষয়ে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং।

এফএম/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!