প্রিয় ‘বড় হুজুর’ আর ফিরবেন না— এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না ছাত্রদের

নোয়াখালী এলাকা থেকে হুজুরকে দেখার জন্য রাতে ১২টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন চাঁটখিলের জামিয়া ওসমানিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আতিকুল্লাহ। মাওলানা আহমদ সফির একান্ত ছাত্র তিনি। শুধু তাই নয়, বায়াত হয়েছেন আহমদ শফির হাতেই।

তিনি বললেন, ‘হুজুরকে তো আর দেখবো না। বিশ্বাস করতে পারছি না হুজুর নেই।’

তাঁর মতো অনেক ভক্ত, ছাত্র শিক্ষক ভোর রাতেই এসে উপস্তিত হয়েছেন হাটহাজারী মাদ্রাসায়। অনেকেই ফজরের নামাজ আদায় করেছেন মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে। সকলে চাওয়াপাওয়া একটিই হুজুরের মরদেহকে এক নজর দেখার। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন, আর স্মৃতি হাতড়াচ্ছেন প্রিয় ওস্তাদের।

নোয়াখালী থেকে আসা মাওলানা আতিকুল্লাহ বলেন, ‘হুজুর আমাদের ওস্তাদ। হুজুরকে হারিয়ে আমার মাথায় যেন আসমান ভেঙ্গে পড়েছে। হুজুরের মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নিতে পারি না।’

কথা হয় নোয়াখালী থেকে আসা হুজুরের আরেক ছাত্র মোহাম্মদ ইলিয়াসেরর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হুজুর মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় আমাদের হাত ধরে বের হতো। হুজুরের সাথে অনেক স্মৃতি। এখন স্মৃতিগুলো কিভাবে ভুলবো। হুজুরের অনেক গুলো বৈশিষ্ট আছে। তিনি সব ছাত্রকে সমানভাবে সমাদর করতেন। আল্লাহওয়ালা, দিনদার পরহেজগার এমন লোক আমি আর দেখিনি।’

মুফতী নেয়ামত উল্লাহ কাসেমী এসেছেন কুমিল্লার সদর থেকে। তিনি কোটবাড়ির সুধন্যপুর মাদ্রাসার শিক্ষক। ২০১২ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস পাস করেছেন। তাকে বোকারী শরীফ পড়াতেন মাওলানা আহমদ শফি।

তিনি বলেন, ‘ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় হোসাইন আহমদ মাদানী যেভাবে পড়াতেন বোখারী শরিফ, ঠিক সে ভাবে বোখারী শরিফ পড়াতেন শফি হুজুর। হুজুরের শিক্ষায় আমরা এখন নিজের পায়ে দাড়িয়েছি। হুজুর থেকে আমরা নৈতিক শিক্ষা পেয়েছি। তিনি আমাদের জন্য আদর্শ। হুজুরের সাথে আমাদের আত্মিক সম্পর্ক। তাই হুজুরের বিদায়ের দিনে না এসে পারি নাই। আমরা কুমিল্লা থেকে একটি প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে ৪ জন এসেছি। রাতে ১১ টায় রওনা হয়েছিলাম। রাত ৩ টায় হাটহাজারী এসে পৌঁছেছি।’

ফেনী জেলার মহীপাল দারুল নাজাত মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আবদুল হক বলেন, ‘ফজরের নামাজ পড়ে রওনা দিয়েছি। আমার ওস্তাদ শফি হুজুর। ১৯৮৮ সালে আমি হুজুরের ছাত্র ছিলাম। পড়ানোর প্রতি অক্লান্ত পরিশ্রম করতে দেখেছি ওনাকে। ছাত্রদের প্রতি খুবই মানবিক ছিলেন তিনি।’

নানুপুর ওবাদিয়া মাদ্রাসা থেকে এসেছেন আবু সাইদ। তিনি বলেন, আমার ইচ্ছা হুজুরকে এক নজর দেখা।

পটিয়া থেকে আসা সিহাব উদ্দিন বলেন, ‘হুজুর ছিলেন একজন ইসলামের ধারক বাহক। তাঁর জানাজায় অংশগ্রহণ করতে পারা ভাগ্যের ব্যাপার। তাই হুজুরের মৃত্যুতে ছুটে এসেছি।’

কক্সবাজারের রামু থেকে এসেছেন মাওলানা আবদুল কাইয়ুম। তিনি বলেন, ‘আমি হুজুরের ভক্ত। তাই হুজুরকে শেষবারের মতো দেখার জন্য ছুটে এসেছি।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!