চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অধীনেই প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) নগরীর টাইগারপাসে সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সঙ্গে বিশেষ সাধারণ সভায় মেয়র একথা বলেন।
মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ২০০৩ সালে সিটি কর্পোরেশনের ৪৭ কোটি টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি কেনা হয়। তাই প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি, চট্টগ্রামের জনগণের সম্পত্তি। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে, তাদের সুন্দর শিক্ষাজীবন নিশ্চিতে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় সিটি কর্পোরেশনের অধীনে পরিচালিত হবে। জালিয়াতির মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয় দখল করা হয়েছে। এজন্য প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে দখলমুক্ত করতে আইনের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি, ইউজিসির চেয়ারম্যানকে অবহিত করেছি, আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছি।
মেয়র বলেন, আইনি প্রক্রিয়াতেই প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণে ফিরবে। ভবিষ্যতে কোনো মেয়র বা প্রভাবশালী যাতে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে জবরদখল না করতে পারে, সে ব্যবস্থাও করা হবে। আমরা চাই, প্রথমে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত করে এরপর পর্যায়ক্রমে সংস্কারের কাজ পরিচালনা করবো।
সভায় সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভার্সিটির ভিসি, ট্রেজারার, প্রক্টর পদত্যাগ করার পর শূন্যতা তৈরি হয়েছে। যেহেতু এটা সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে অবস্থিত এবং এর প্রপার্টিগুলো যেহেতু সিটি কর্পোরেশনের টাকায় কেনা হয়েছে এবং আমাদের মেয়র মহোদয় এখানে একজন জনপ্রতিনিধি। আরেকটা বিষয় হচ্ছে; এখানে ছাত্রদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, নাগরিকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এটা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে, সেই প্রেক্ষাপটগুলো বিবেচনা করে আমরা আজকের সভা আহ্বান করেছি।
সভায় সিটি কর্পোরেশনের আইন কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মুরাদ বলেন, আইন বলছে, ইউনিভার্সিটি একটা ট্রাস্টের অধীনে চলবে। কিন্তু আইনে তা থাকলেও বেসিক্যালি একটা অথরিটিতে এটা থাকে। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি নিয়ে হাইকোর্টে দুটি মামলা হয়েছে। সেগুলা হয়েছে মূলত ইউজিসি’র বিভিন্ন চিঠি চ্যালেঞ্জ করে। মালিকানার বিষয়ে কোনো মামলা কিন্তু হাইকোর্টে হয়নি। এটা আরও গ্রেটার অথরিটির বিষয়। একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার পরে ইনিশিয়াল যে পাঁচ কোটি টাকা লগ্নি করতে হয়, জমি দিতে হয় সবকিছুই সিটি কর্পোরেশন দিয়েছে। ২০০৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিতো আমরা কিনেছি। ৫০ লাখ টাকার প্রথম এফডিআরটাও আমাদের। ফেস-বাই-ফেস আমাদের কাছে সেগুলোর নোটিং আছে।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন বলেন, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ক্ষেত্রে আমরা যেটা দেখছি, নর্দমার ওপরে একটা বিল্ডিং, তারপর সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ওপর ক্যাম্পাস। সিএনজি ফিলিং স্টেশন নিজেই একটা বিপজ্জনক জায়গার ওপরে একটা বিল্ডিং করে ক্যাম্পাস পরিচালনা করা হচ্ছে। মেয়রের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা—এমন একটা সিস্টেম করে দিবেন, যেন ভবিষ্যতে কেউ এটাকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করতে না পারে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী মো. আবদুল মান্নান বলেন, অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন, ২০০৩ এর সাত নম্বর ধারা অনুযায়ী প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান ফায়ার সার্ভিস থেকে সেফটি প্ল্যান এপ্রুভাল করাতে হয়। যেহেতু সভায় একজন বক্তা বলেছেন যে, সেটা একটা সিএনজি পেট্রোল পাম্পের ওপরে স্থাপিত, তাই প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি আসলে সেফটি প্ল্যান নিয়েছে কিনা, তা যাচাই করা প্রয়োজন।
সভায় উপস্থিত কমিটির সদস্যবৃন্দ সর্বসম্মতভাবে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অধীনে পরিচালনার প্রস্তাব সমর্থন করেন।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সিটি কর্পোরেশনের সচিব মো. আশরাফুল আমিনসহ বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক অং সুই প্রু মারমা, ডিসি (ট্রাফিক-উত্তর) জয়নুল আবেদীন, ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিষ্ঞু কুমার সরকার, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) মাহমুদুল হোসেন খান, বিটিসিএলের মুখ্য মহাব্যবস্থাপক প্রদীপ দাশ, গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহম্মদ আশিফ ইমরোজ, সিনিয়র সহকারী কমিশনার এসএমএন জামিউল হিকমা, সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী আহম্মদ মঈনুদ্দিন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম, উপ-পরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা মো. আতাউর রহমান, উপ পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, চট্টগ্রাম মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনসহ নগরীর বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ।
আরএ/ডিজে