চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে শুরু থেকেই প্রবল অনাগ্রহ ছিল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের। তবে গতকাল নিজের অবস্থান থেকে খানিকটা সরেও এসেছেন তিনি। কদিন অপেক্ষা করা কথা বললেও এখন পর্যন্ত নির্বাচন করে ফেলার বিষয়ে অনেকটা একমত নির্বাচন কমিশনসহ (ইসি) চসিক নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
করোনা ঝুঁকি এড়াতে সরকার যেখানে জনসমাগম এড়ানোর নির্দেশ দিচ্ছে সেখানে চসিক নির্বাচন চট্টগ্রামে করোনা ছড়িয়ে দেওয়ায় চরম ক্ষতিকর ভূমিকা রাখতে পারে— এই আশঙ্কার কথা গত কয়েকদিন ধরেই চট্টগ্রামের স্থানীয় এলাকাবাসী বলছিলেন। কাল এই আশঙ্কার পালে নতুন করে হাওয়া দিলেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন। তিনি চট্টগ্রাম করোনার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকার কথা বলার পর নির্বাচনের বন্ধের দাবি উঠেছে আরও প্রবলভাবে।
তবে এই দাবিকে খুব একটা আমলে নিতে চাইছেন না চসিক নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন কমিশনের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটি বাস্তবায়নে আমরা প্রস্তুত। তবে আমার মতামত যদি জানতে চান তাহলে বলবো আমরা সচেতনতা বাড়িয়ে নির্বাচন করে ফেলতে চাই।’
চট্টগ্রামে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনার বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত পরিবেশ ভাল আছে। আমরা প্রার্থীদের বলেছি জনসমাগম না করে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে প্রচারণা চালাতে। তারা সেটা করবেন বলেছেন।’
‘সিইসি স্যারের সাথে আমার সকালে কথা হলো। তিনি আমার কাছে জানতে চেয়েছেন এখানকার পরিস্থিতি কী? আমি উনাকে বলেছি প্রার্থীদের কেউই এখন পর্যন্ত নির্বাচন বন্ধের জন্য বলেননি। এখানকার পরিস্থিতিও ভাল। আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়া শেষ। নির্বাচন করে ফেলাই উচিত।’
এদিকে শুরু থেকে নির্বাচন পেছানোর দাবি করে আসা বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনও এখন আর চান না নির্বাচন স্থগিত হোক। এই প্রসঙ্গে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘২৬ মার্চ থেকে টানা ছুটির কারণে কেউ বাড়িঘরে বা বেড়াতে গেলে তারা আর ভোট দিতে আসতে উৎসাহী হবে না। সেজন্য ২৯ মার্চের পরিবর্তে ৩১ মার্চ ভোটগ্রহণের জন্য বলেছিলাম। তার মানে করোনাভাইরাসের কারণে নির্বাচন পেছাতে হবে এমনটা নয়।’
এই বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রার্থী হিসেবে তিনি হয়তো বলছেন না। কিন্তু সিভিল সার্জন যা বললেন তারপর নির্বাচন কমিশনের উচিত নির্বাচন স্থগিত করা। স্বাস্থ্য নিরাপত্তা কিংবা প্রাণের চেয়ে তো ভোট বড় হতে পারে না।’
তবে সিভিল সার্জনের এই কথায় ভিন্ন মানে খুঁজছে অনেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর আওয়ামী লীগের একজন নেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘একটি বিশেষ মহলের স্বার্থে ভোট পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এই কারণেই কায়দা করে চট্টগ্রাম করোনার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে আছে এমনটা বলিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
নির্বাচন সম্পন্ন করার বিষয়ে নিজেদের দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়ে হাসানুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমরা নিয়মিত করোনা সচেতনতা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের যারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন তাদের চেকআপ করিয়ে নিব। প্রয়োজনে ডাক্তারও প্রস্তুত রাখবো। আমরা দ্বিগুণ উৎসাহে আমাদের কাজ করে যাচ্ছি।’
এআরটি/সিপি