প্রাইভেট কারে চট্টগ্রামের ৫ স্পট ঘুরে ঘুরে ছিনতাই, গাড়ির নম্বরপ্লেট বদল হয় মুহূর্তেই
রামদা-ছুরিসহ ৫ জন ধরা করোলা প্রাইভেট কারসহ
কখনও প্রাইভেট কার, কখনও বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঁৎ পেতে বসে থাকে তারা। প্রতিদিন বিকেল হলেই নগরীর এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে সতর্ক বিচরণ। রাত যতো গভীর হয়, তৎপরতাও বাড়ে তাদের। সুযোগ বুঝে রাম দা ও টিপ ছোরার ভয় দেখিয়ে পথচারীদের মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করে এই চক্রটি।
এভাবে ছিনতাইকারীদের এই সংঘবদ্ধ দলটি চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর, ডবলমুরিং, আকবরশাহ, লালদিঘীর পাড়, পলোগ্রাউন্ড এলাকায় ছিনতাই করে আসছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য একেক সময় গাড়ির নাম্বারপ্লেটের যে কোনো দুটি সংখ্যার ওপর স্কচটেপ মোড়ানো হাতে লেখা দুটি সংখ্যাও লাগিয়ে দেয় তারা।
সোমবার (৯ জানুয়ারি) কোতোয়ালী থানায় গোপনে খবর আসে, নগরীর পলোগ্রাউন্ড যুবসংঘ ক্লাব সংলগ্ন পাকা রাস্তার ওপর একটি প্রাইভেট কার ও একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বেশ কয়েকজন লোক সন্দেহজনকভাবে অবস্থান নিয়েছে।
সোমবার বিকেল চারটার দিকে কোতোয়ালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান তার সহযোগী পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে গুপ্তচরের দেওয়া তথ্য অনুসারে নেভি ব্লু রঙের একটি করোলা প্রাইভেট কার ও সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা দেখতে পান। পুলিশ সদস্যরা এ সময় সেখানে ৭-৮ জন লোককে একসঙ্গে দেখার পর এগিয়ে যাওয়ামাত্রই ৩ থেকে ৪ জন অজ্ঞাতনামা লোক সিএনজি নিয়ে পালিয়ে যায়।
তবে সন্দেহভাজন চারজনকে করোলা প্রাইভেট কারসহ আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ সদস্যরা। এ সময় প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে একটি রামদা, একটি নাম্বারপ্লেট, গাড়ির নাম্বার প্লেটের সংখ্যা পরিবর্তনের জন্য ব্যবহৃত দুটি সংখ্যায় লিখা স্কচটেপ মোড়ানো কাগজের টুকরা, প্লাস্টিকের বাটযুক্ত একটি পুরাতন স্ক্রু ড্রাইভার, নেভি ব্লু রঙের একটি ট্রাভেল ব্যাগ, একটি টিপ ছোরা ও ফোল্ডিং ছোরা, একটি মোবাইল, লোটো ব্র্যান্ডের মানিব্যাগের ভেতর জাতীয় পরিচয়পত্রের স্মার্ট কার্ড আটক লোকগুলো নিজেরাই বের করে দেয়।
গ্রেপ্তার ওই চারজন হলেন— বাঁশখালী প্রেমবাজার মলার পাড়ার দেলোয়ার হোসেন (২১), রাঙ্গুনিয়ার কোদালা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাজ্জাদ হোসেন (২৪), চকরিয়া ৬নং ওয়ার্ড বেতুয়া বাজারের মো. ফরহাদ প্রকাশ দিদার (২৪), হাটহাজারীর বুড়িশ্চরের আসিফ হোসেন (২১)।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, অভিযান চলাকালে পালানো কয়েকজনের মধ্যে মাহফুজুর রহমান ওরফে আদনান (২৩) এবং সফিউল আজম নয়ন (২৫) ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও দুজন ছিলেন।
এরপর রাতে কোতোয়ালী থানা পুলিশ চাঁন্দগাও ও বহদ্দারহাটসহ মোহরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাহফুজুর রহমান ওরফে আদনানকে গ্রেফতার করে। তবে সেখানে থাকা সফিউল আজম নয়ন (২৫) কৌশলে পালিয়ে যান। মাহফুজুরের বাড়ি হাটহাজারী কুয়াইশ কলেজের পিছনে।
এ ঘটনায় পাঁচজনকে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা হয়েছে।
অভিযান পরিচালনা করেন পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) রুবেল হাওলাদার, এসআই মেহেদী হাসান, মোমিনুল হাসান, মোহাম্মদ ইমরান, মুহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ও সুজন দাশ এবং এএসআই সাইফুল আলম ও রণেশ বড়ুয়া।
গ্রেপ্তার ছিনতাইকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, গত এক মাস ধরে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছিনতাইকারী চক্রটি বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রাইভেট কার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে ঘুরে বেড়ায়। সুযোগ বুঝে রাম দা ও টিপ ছোরার ভয় দেখিয়ে পথচারীদের মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করে তারা।
পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য একেক সময় গাড়ির নাম্বারপ্লেটের যে কোনো দুটি সংখ্যার ওপর স্কচটেপ মোড়ানো হাতে লেখা দুটি সংখ্যা লাগিয়ে দেয়।
সোমবারও (৯ জানুয়ারি) একইভাবে চক্রটি টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড ও সিআরবি হয়ে যাওয়া গাড়ি ও পথচারীদের লক্ষ্য করে ছিনতাই করার পরিকল্পনা নেয়। এর অংশ হিসেবে পলোগ্রাউন্ড থেকে টাইগারপাস মোড়গামী মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী সড়কে পলোগ্রাউন্ড যুবসংঘ ক্লাব সংলগ্ন পাকা রাস্তার ওপর তারা অবস্থান নেয়।
কোতোয়ালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান বলেন, ‘এই চক্রটি গত এক সপ্তাহ ধরে নগরীজুড়ে বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। গভীর রাত পর্যন্ত তারা ডাকাতি করে। নির্জন রাস্তায় শীতের রাতে কাউকে একা পেলেই এরা গাড়ি থেকে নেমে রামদা ও ছুরি ধরে মোবাইল-মানিব্যাগ-টাকাপয়সা যা আছে সব নিয়ে দ্রুত প্রাইভেট কারে করে পালিয়ে চলে যায়। কেউ যাতে গাড়ির নাম্বার শনাক্ত করতে না পারে, সেজন্যে গাড়ির নাম্বারের এক বা দুটি ডিজিট পরিবর্তন করে ফেলে।’
সিপি