প্রশাসনের নাকের ডগায় চকরিয়া-পেকুয়া মহাসড়কে চলছে সিএনজি

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলতি মাসের ৮ তারিখ কক্সবাজার জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। এই লকডাউনের আওতায় চলে আসে চকরিয়া উপজেলা। এরপর থেকে চকরিয়া উপজেলায় অপ্রয়োজনীয়ভাবে মানুষের চলাচল এবং গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

কিন্তু গণপরিবহণ বন্ধের সুযোগ নিয়ে সড়ক-মহাসড়কে প্রতিনিয়ত ধাপিয়ে বেড়াচ্ছে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও ইজিবাইক। এতে এক জায়গার মানুষ অন্য জায়গায় যাচ্ছে হরহামেশা। তাই অটোরিক্সা চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল।

এদিকে, ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের আওতায় ১০৩টি উপজেলা রয়েছে। এসব উপজেলার মধ্যে চকরিয়া এখন করোনা আক্রান্তের দিক দিয়ে শীর্ষে। চকরিয়ায় গত এক মাসে প্রায় ৬০ জন করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে মাত্র ৯ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। বাকিরা এখনো চিকিৎসাধীন। এরমধ্যে প্রতিদিন বাড়ছে করোনা আক্রান্তর সংখ্যা।

চকরিয়ার সচেতন মহল মনে করছেন, চকরিয়ায় করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইলে প্রশাসনকে হার্ডলাইনে যেতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক এবং বাঁশখালী-আনোয়ারা-চকরিয়া সড়কের একাধিক পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট রয়েছে। কিন্তু যাত্রীদের জরুরি সেবার কথা বলে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে সিএনজি চালকরা তাদের গাড়ি চালাচ্ছে।

ওইসব চালকরা প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যাত্রী আনা-নেয়ার কাজ করে যাচ্ছে। এতে করে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুুষ আসছে চকরিয়ায়। ফলে আতঙ্ক কাজ করছে সাধারণ মানুষদের মাঝে।

চকরিয়ার জাহেদুল নামের এক সিএনজি চালক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, গাড়ি চালাতে না পারলে খাবো কোথা থেকে। একদিন রোজগার না করলে সংসার চালাতে কষ্ট হয়ে যায়। খাবার সংকট না থাকলে রাস্তায় বের হতাম না।

তিনি আরো বলেন, মূলত চকরিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে বাঁশখালী-আনোয়ারা হয়ে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ব্রিজের আগ পর্যন্ত যায়। সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক চেকপোস্ট রয়েছে। যাত্রীদের আনা-নেওয়া করতে ওইসব চেকপোস্টে বিভিন্ন মিথ্যা কথা বলতে হয়।

টিটু সুশীল নামের এক স্কুল শিক্ষক বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। সরকার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। মানুষ যাতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে না পারে সেজন্য জরুরি সেবার গাড়ি ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখেছেন। সেজন্য আইনশৃক্সখলা বাহিনী বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু এতো চেকপোস্ট আর সরকারের নিষেধাজ্ঞার পরও এসব সিএনজি কীভাবে চলছে বুঝতে পারছিনা।

সরেজমিনে দেখা যায়, চকরিয়া থেকে যেসব সিএনজি পেকুয়া-বাঁশখালী হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত চলাচল করে তার মূল লিংকরোড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে উপজেলার বরইতলী-মগনামা রোডটি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বানিয়ারছড়া স্টেশন হয়ে পুরাতন মগনামা রোড। বানিয়ারছড়া স্টেশনের একটু উত্তরে পুলিশ ফাঁড়ি থাকায় সিএনজি-টমটম বরইতলী নতুন রাস্তারমাথার রোডটি পরিহার করতে বাধ্য হচ্ছে। এটি নিয়ে কথা হয় এম মামুনুল হক নামের বরইতলীর একজন অধ্যক্ষের সাথে। তিনি জানান, বিষয়টি আমরা লকডাউনের পর থেকে লক্ষ্য করে আসছি। চকরিয়া থেকে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জেলা উপজেলায় যাওয়ার নিরাপদ করিডোর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বানিয়ারছড়া-মগনামা রোডটি। বিষয়টি আমরা সামাজিকভাবে ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে অবহিত করলেও তিনি অদ্যবধি কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেননি।

চকরিয়ার চিরিঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ির আইসি ইন্সপেক্টর আনিসুর রহমান বলেন, আমাদের সাধ্যমতো কাজ করছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে আসা পণ্যবাহী গাড়িকে ড্রাইভার-চালকের বাইরে কেউ থাকলে তাদের নামিয়ে দেয়া হচ্ছে।

এছাড়া সিএনজি-টমটম কোন অবস্থাতেই মহাসড়কে উঠতে দেয়া হচ্ছেনা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সিএনজি-টমটম জব্দ করা হয়েছে।

সিএনজি চলাচলের ব্যাপারে জানতে চাইলে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, পেকুয়া সীমান্ত দিয়ে কোন ধরনের সিএনজি-টমটম চলাচল করার সুযোগ নেই। আমরা এটা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছি। শুধুমাত্র মুমূর্ষ রোগী ছাড়া কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছেনা। সাধারণ মানুষরা বিকল্প সড়ক দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচল করছে।

এসএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!