চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল চত্বরে যানজট বিরাট সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। হাসপাতালের গোলচত্বর বা বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগের সামনে এবং পূর্ব-পশ্চিম গেটের ভিতরে যান চলাচল হাসপাতালের নিয়ম বহির্ভূত। কিন্তু অনিয়মই এখানে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের প্রতিটি গেটের ভিতরে রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মোটর বাইক ইত্যাদি হাঁটার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। এরমধ্যেও কিছু কিছু গাড়ি চলাচল করছে। তবে গাড়ি পার্কিং বা চলাচলের কারণে বহির্বিভাগের সামনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। বর্তমানে এই যানজট আগের চেয়ে আরো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রোগী বা রোগীর স্বজনদের গাড়ি ছাড়াও প্রবর্তক মোড়ের পাশে কে বি ফজলুল কাদের সড়কটি বন্ধ থাকার কারণে বহিরাগতদের গাড়িও চলাচল করছে । প্রায় ২/৩ মাস ধরে কে বি ফজলুল কাদের সড়কের উন্নয়নকাজ চলছে। সড়কটি বন্ধ থাকায় ওই সড়কের সব গাড়ি হাসপাতালের উত্তর, পূর্ব এবং পশ্চিম গেট দিয়ে প্রবেশ করে হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে। ফলে যানজট লেগেই আছে।
এহসান হাবিব খাবার নিয়ে এসেছেন তার ছোট বোনের জন্য। কিন্তু বহির্বিভাগের সামনে গাড়ির জটের কারণে ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হলো তাকে। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এটি একটি হাসপাতাল। হাসপাতালের পরিবেশ থাকবে শান্ত। কিন্তু সাধারণ সড়কের মতো এখানে যানজট লেগেই আছে। তিনি প্রশ্ন করেন, এটা কি হাসপাতাল চত্বর নাকি গাড়ি চলাচল বা পার্কিংয়ের রাস্তা।
তিনি বলেন, ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে আছি। হাসপাতালের ওয়ার্ডের ভিতর প্রবেশ করার একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। ওই সময়ের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারলে দারোয়ান ঢুকতে দেয় না। প্রবেশ করতে দিলেও তা টাকার বিনিময়ে। এমনিতে রাস্তায় যানজটের কারণে দেরি হয়ে গেছে। তার ওপর আবার এখানেও যানজট।
তিনি আরো বলেন, জরুরি বিভাগের সামনে প্রায় সময় ১৫-২০টি রিকশা আর সিএনজি অটোরিকশা এলোমেলো দাঁড়িয়ে থাকে। অ্যাম্বুলেন্সে থাকা কোনো মুমূর্ষু রোগী এ জটের কারণে মারাও যেতে পারে। তার দায়ভার কে নেবে! গাড়ির চালক নাকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত এদিকে নজর দেয়া।
ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছিলেন বৃদ্ধ রমজান আলী। তার মেয়ে তসলিমা আক্তার বলেন, বাবাকে নিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। পা ফেলার জায়গা নেই। একপ্রকার যুদ্ধ করেই গোলচত্বরটা পার হলাম। এখানে হাজার হাজার রোগী এবং রোগীর স্বজনরা আসা-যাওয়া করে। বিশৃঙ্খল যানবাহনের কারণে একদিকে সময়ের অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
যানজটে দাঁড়িয়ে থাকা এক রিকশার যাত্রী জানালেন, আমি ন্যাশনাল হাসপাতাল থেকে রিকশা নিই গুলজার মোড়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু প্রবর্তক মোড়ে এসে দেখি রাস্তা বন্ধ। রাস্তার কাজ চলার কারণে কোনো যানবাহনই ওই পথ দিয়ে যেতে পারছে না। তাই রিকশাওয়ালা মাজারের পাশের গেট হয়ে হাসপাতাল চত্বর দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বহির্বিভাগের সামনে দায়িত্বরত আনসার সদস্য সামছু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, সারাক্ষণ যানজট লেগে থাকে। যতক্ষণ দায়িত্বে থাকি ততক্ষণ সড়কটা যানজটমুক্ত রাখার চেষ্টা করি। ফজলুল কাদের সড়ক বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত গাড়ি এদিকে চলাচল করছে। তিনদিক থেকেই গাড়ি এসে জট পাকাচ্ছে। সড়কের কাজটা কতদিনে শেষ হবে কে জানে! হাসপাতালে আসা রোগী আর রোগীর স্বজনদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এই কারণে। রোগীর স্বজনদের সাথে চালকদের ঝগড়া তো লেগেই আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক আখতারুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে আমরা অবগত আছি। সড়কের কাজটি করছে আর্মি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে দ্রুত কাজ শেষ হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সড়কটি বন্ধ থাকায় এত বেশি গাড়ি চলাচল করে যা একজন আনসারের পক্ষে সামলানো কষ্টকর। এরকম সমস্যা সমাধানে ১০ জন আনসার দরকার। এতজন পাবো কোথায়! হাসপাতালে মোট আনসার সদস্য ১০০ জন। এরমধ্যে মাসে ছুটিতে থাকে ২০ জন। গেটগুলোতে তিন শিফটে তিনজন করে আনসার থাকে। বাকিরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে, রান্নাঘরে, অস্ত্রাগারে, সিঁড়ির নিচে থাকে। তাই সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে আমাদের।
সিআর