প্রধানমন্ত্রীর নজর মহেশখালীর সোনাদিয়ায়
বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে সাতটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে তিনটিই কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া নিয়ে।
অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে একটি বৈঠক করেন। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) গভর্নিং বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা ওই বৈঠকে অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কার্যক্রমের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে সাতটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছ।
নির্দেশনায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়ায় শুধু ইকো-ট্যুরিজম পার্কভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সোনাদিয়া দ্বীপ ও দ্বীপ সংলগ্ন লাল কাঁকড়া ও কচ্ছপসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে। সেখানে মাছের ঘের কিংবা কোনো শিল্প কারখানা স্থাপন করা যাবে না।
সোনাদিয়া দ্বীপে বেজা কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন বনায়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, সোনাদিয়া ইকো-ট্যুরিজম পার্ক উন্নয়নের ফলে যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের পুনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়নে বন্যা ও সাইক্লোন বিবেচনায় নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর বাকি নির্দেশনাগুলো হচ্ছে—
১. অর্থনৈতিক অঞ্চল ছাড়া যেখানে-সেখানে অপরিকল্পিতভাবে শিল্প স্থাপন নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও গ্যাসসহ অন্যান্য পরিষেবা প্রদান প্রক্রিয়া পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে হবে। শিল্প উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থাপনসহ বিনিয়োগের পরামর্শ দিতে হবে। এ বিষয়ে এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে এবং সবাইকে অবহিত করতে হবে।
২. শিল্পের জন্য বরাদ্দ জমি ফেলে রাখা যাবে না, অর্থনৈতিক অঞ্চলে যেসব বিনিয়োগকারী জমি বরাদ্দ নিয়েছেন তা ঠিক মতো শিল্পে ব্যবহার হচ্ছে কি-না তা তদারকির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধিসহ একটি কমিটি গঠন করতে হবে। এ কমিটি অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের ভূমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিয়মিত তদারকি করে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
৩. দেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা ও নিরাপত্তা বিবেচনায় কৃষি জমি সংরক্ষণ করতে হবে।
৪. বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহ রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে কি-না তা দেখার জন্য বেজা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সরকারের রাজস্ব আহরণে কোনো নেতিবাচক প্রভাব যেন না পড়ে সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। বেসরকারি খাতে যেসব স্থানে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে সেসব স্থানে পূর্বে প্রতিষ্ঠিত শিল্প কল-কারখানা আগের মতো কর পরিশোধ করবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের কর সুবিধা কার্যকর হবে না।
প্রসঙ্গত, দেশে ২০৩০ সাল নাগাদ ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। এখন ২৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির কাজ চলছে। এর মধ্যে ১৩টি অঞ্চল সরকারি খাতে এবং ১৫টি অঞ্চল বেসরকারি খাতে। চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের বেশকিছু ইউনিট উৎপাদন শুরু করেছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সর্বশেষ প্রতিবেদন মতে, তিনটি সরকারি ও ১০টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে মোট এক হাজার ৭৮৫ কোটি মার্কিন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি।
বিনিয়োগকারীরা সরকারি তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৭৭টি কোম্পানি–নির্ধারিত ইজারামূল্যে জমি নিয়ে কেউ কারখানার কাজ শুরু করেছে, কেউ জমি হস্তান্তরের অপেক্ষায় আছে। সে তুলনায় বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো এগিয়ে। সেখানে ৩৯টি কোম্পানি বিনিয়োগের জন্য জমি নিয়ে ২০টি ইতোমধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে। এর মধ্যে চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে পণ্য বিদেশে রফতানিও শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত রফতানি হয়েছে ১০ কোটি ডলার।
সিপি