প্রধানমন্ত্রীর টাকা আর পাবেন না সেই জামায়াত ‘ডোনার’
চেক বাতিল করছে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট
দুঃস্থ সাংবাদিক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পাওয়া চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, জামায়াতে ইসলামীর ‘ডোনার’ সাদাত উল্লাহর দুই লাখ টাকার চেক বাতিল করছে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দৈনিক ইনকিলাবের সাংবাদিক হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় সমর্থক সাদাত উল্লাহ দুই লাখ টাকার ওই অনুদান পান। ওইদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অসুস্থ, অসচ্ছল ও দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিক ও নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আর্থিক সহায়তা ভাতা ও চেক বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনে চট্টগ্রামের জামায়াত ‘ডোনার’ও পেলেন প্রধানমন্ত্রীর অনুদান! শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও সমালোচনামুখর হয়ে ওঠে।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর ওয়াজেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে তার (সাদাত উল্লাহ) চেকের অনুকূলে বরাদ্দ ফান্ড বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই ব্যক্তি ব্যাংক থেকে উক্ত চেকের টাকা তুলতে পারবে না।’
জাফর ওয়াজেদ বলেন, ‘আমার দায়িত্ব নেয়ার আগে এ বিতর্কিত ব্যক্তির নামে অনুদান দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তার (সাদাত উল্লাহ) বিষয়ে অনুষ্ঠান শেষে বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজীর কাছ থেকে শোনার পর বিস্মিত হয়েছি। অফিস খোলার পর এ নিয়ে দাপ্তরিক তদন্ত হবে। তাছাড়া ডিসি কিভাবে একজন দাগী ও চিহ্নিত ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করলো তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
সিইউজের ক্ষোভ
পেশাদার সাংবাদিক না হওয়া সত্ত্বেও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, জামায়াতের ক্যাডার সাদাত উল্লাহ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাষ্ট্রের অনুদান পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন-সিইউজে। সিইউজের সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস এক বিবৃতিতে বলেছেন, সাদাত উল্লাহ সাঈদীর মুক্তির দাবি জানিয়ে সাত বছর আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকি দিয়েছিলেন।
জামায়াতের এই ক্যাডার কিভাবে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে কিভাবে অনুদান পেয়েছেন তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছে সিইউজে। পেশাদার সাংবাদিক না হওয়া সত্বেও সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাষ্টে কিভাবে এই জামায়াত ক্যাডার আবেদন করেছেন, কারা তার আবেদনে সুপারিশ করেছেন, কেন বোর্ডসভায় তাকে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাষ্ট্রের তহবিল থেকে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলো এবং প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দেওয়ার পর কিভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপস্থিত হলেন— এসব কিছু খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছে সিইউজে।
বিস্মিত বান্দরবান আওয়ামী লীগ
বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগ জামায়াত সমর্থিত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাদাত উল্লাহর গণভবনে প্রবেশ ও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে দুঃস্থ সাংবাদিক হিসাবে অনুদানের অর্থ গ্রহনের ঘটনায় বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করে এই ঘটনার জোর তদন্ত দাবি করেছে।
বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাদেক হোসেন চৌধুরীর পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, চিহ্নিত এই জামায়াত নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কিভাবে একজন দুঃস্থ সাংবাদিক হিসাবে অনুদানের তালিকায় স্থান পেয়েছে আর এ সুবাদে গণভবনে প্রবেশ করে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে অনুদান গ্রহণের সুযোগ পেল এবং কে বা কারা এই ঘটনায় জড়িত তা তদন্ত করে চিহ্নিত ও দোষীদের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
জানা গেছে, সাদাত উল্লাহ ২০১২ সালের ৩ মে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জামায়াতের প্রত্যক্ষ সমর্থনে তিনি সেবার নির্বাচিত হন।
চরম্বা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার শফিকুর রহমান সাদাত উল্লাহকে জামায়াতে ইসলামীর একজন ডোনার (অনুদানদাতা) হিসেবে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ২০১৩ সালের আগস্টে লোহাগাড়ার চরম্বা ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালে সাদত উল্লাহর বিরুদ্ধে সাতজন ইউপি সদস্য কালোবাজারে ভিজিএফের ৪-৫ হাজার কেজি চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ তোলেন। চরম্বা ইউপি চেয়ারম্যান চরম্বা ইউনিয়নের দুঃস্থ গরিব লোকজনের জন্য বরাদ্দকৃত ১২ হাজার ৪৬০ কেজি চাল সরকারি গুদাম থেকে তুলে কালোবাজারে বিক্রি করে দেন বলে ইউপি সদস্যরা অভিযোগ করেন।
২০১২ সালের ১১ জুলাই জামায়াতের ইসলামীর তৎকালীন সংসদ সদস্য ও বর্তমান কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর শামসুল ইসলাম কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর সাদাত উল্লাহসহ জামায়াত নেতারা তাকে বরণ করে নেন। এ সংক্রান্ত একটি খবর তিনি ফেসবুকে শেয়ার করেন ওই বছরের ১৪ জুলাই।
২০১২ সালের ৩ ডিসেম্বর সাদত উল্লাহর একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে আহ্বান জানানো হয়— ‘আজ সারাদেশে সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি করার প্রতিবাদে জামায়াতের ডাকে আগামীকাল সারাদেশে সকাল সন্ধ্যা হরতাল সফল করুন।’
২০১২ সালের ৮ ডিসেম্বর নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে সাদত উল্লাহ লিখেছেন, ‘হে আল্লাহ, আল্লামা সাঈদীকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দাও ..।’
এছাড়া তিনি একটি ছবি শেয়ার করেন, যাতে লেখা ছিল— ‘নিরপরাধ আল্লামা সাইদীর ১ দিনের সাজা হলেও গ্রাম বাংলার লক্ষ লক্ষ মানুষ বাঁশের লাঠি, বর্শা-বল্লম ও তীর-ধনুক হাতে রাস্তায় নেমে পড়বে।’
ওই একই দিনে ফেসবুকে তার আরেকটি স্ট্যাটাস ছিল এরকম— ‘শেখ হাসিনার আছে পুলিশের শক্তি। আর আমাদের ঈমানের শক্তি। জীবন দিয়ে হলেও করবো আল্লামা সাইদীকে মুক্তি। জাগো মুসলিম জাগো। আমরা সাইদী ভক্ত, পারলে ঠেকাও।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জামাত-শিবিরের দায়িত্বশীল কোন পদে ছিলেন না বলে দাবি করে সাদাত উল্লাহ বলেন, ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসগুলো মিথ্যা।
সিপি