‘প্রথমে আমি পান করবো, তারপর আপনারা’ —হঠাৎ নাটকীয় ওয়াসা এমডি

সরাসরি ওয়াসার লাইন থেকে নেওয়া পানি পান করেছেন চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম ফজলুল্লাহ। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) মদুনাঘাটে নির্মিত শেখ রাসেল পানি শোধনাগার পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ওয়াসার লাইন থেকে নিয়ে পানি পান করেন তিনি। এর আগে সাংবাদিকদের নিয়ে শেখ রাসেল পানি শোধনাগারের কার্যক্রম ঘুরে দেখেন তিনি।

এ সময় হালদা নদী থেকে পানি তুলে ৪টি ধাপে পানি পরিশোধন শেষে সরবরাহ লাইনে দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটি তুলে ধরেন ওয়াসার কর্মকর্তারা। এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা ওয়াসার এমডিকে জিজ্ঞেস করেন, ‘৪ ধাপে পরিশোধিত এই পানি শতভাগ নিরাপদ কিনা, আমরা এই পানি অন্য কোন প্রক্রিয়ায় বিশুদ্ধ করা ছাড়া পান করতে পারবো?’ তখন ওয়াসার এমডি বলেন ‘আগে আমি নিজে পান করব তারপর আপনারা পান করবেন। ঢাকা ওয়াসাতো তাদের লাইনের পানি পান করেনি আমরা সেটা করে দেখালাম।’

বাংলাদেশ সরকার ও চট্টগ্রাম ওয়াসার যৌথ অর্থায়নে প্রায় ১৮শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রকল্পটি আগামী ২৬ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ শোধনাগারটি ৯ কোটি লিটার পরিশোধন ক্ষমতা সম্পন্ন বলে জানিয়েছে ওয়াসার কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ বলেন, ‘আমরা হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলন করি। তারপর এ পানি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষা করে কি পরিমাণ কেমিক্যাল মেশাতে হবে তা ঠিক করি। কেমিক্যাল মেশানোর পর ৪টি ধাপে পানি শোধন করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘পানি শোধন শেষে সরবরাহ লাইনে দেওয়ার আগে আমরা ল্যাবে আবারও পরীক্ষা করি। এতে পানির সব মান ঠিক আছে কিনা যাচাই করা হয়। পরে তা সরবরাহ লাইনে দেওয়া হয়। এছাড়া প্রতি মাসে শহরের ২৪০ জায়গা থেকে পানির নমুনা নিয়ে আমরা ল্যাবে পরীক্ষা করি, কোথাও কোন ব্যাকটোরিয়া বা জীবাণু পাওয়া যায় কি না।’

‘প্রথমে আমি পান করবো, তারপর আপনারা’ —হঠাৎ নাটকীয় ওয়াসা এমডি 1

ওয়াসার এমডি বলেন, ‘মাঝে মাঝে বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ আসে ওয়াসার পানি থেকে দুর্গন্ধ পাওয়ার। তখন আমরা সাথে সাথেই ব্যবস্থা নিই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে ওই লাইনটিতে কোথাও লিক আছে, অথবা লাইনটি কোন ড্রেনের মধ্য দিয়ে গেছে। সেসব ক্ষেত্রে আমরা পুরো লাইনটি আবার চেঞ্জ করে দিই। শহরে ওয়াসার নতুন সংযোগ পাইপ বসানোর কাজ চলছে এটি শেষ হলে এসব সমস্যাও আর থাকবে না।’

চট্টগ্রামে দৈনিক ৪২ কোটি লিটার পানির চাহিদা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন দৈনিক ৩৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহের যোগ্যতা অর্জন করেছি। খুব শীঘ্রই আমরা ৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহের যোগ্যতা অর্জন করবো।’

তিনি বলেন,‘বর্তমানে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার থেকে ১৪ কোটি, মোহরা পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি, শেখ রাসেল পানি শোধনাগার থেকে ৯ কোটি এবং নলকূপ থেকে ৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তবে আমরা আগামীতে নলকূপের সংখ্যা কমিয়ে নেব। কারণ চট্টগ্রামে নলকূপ থেকে যে পানি পাওয়া যায় তাতে আয়রন ও লবণাক্ততার সমস্যা প্রকট।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের মার্চে ঢাকা ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয় বলে দাবি করেছিলেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। তার এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াসার পানি দিয়ে বানানো শরবত তাকেই খাওয়ানোর উদ্যোগ নেয় জুরাইনের কিছু বাসিন্দা। কিন্তু সেই শরবত খাননি ওয়াসার কেউ। সে সময় বিষয়টি ব্যাপক হাস্যরস ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছিল।

এআরটি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!