‘প্রতারণা’ এসিল্যান্ডের মোবাইল কোর্টের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি

‘হ্যালো, আমি এসিল্যান্ড স্যার বলছি। ডিসির নির্দেশে আজকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে সারা আনোয়ারায়। মোবাইল কোর্টের অভিযান থেকে আপনাদের দোকান বাদ দিতে চান কি না? হ্যাঁ বা না একটা বলুন? সমস্যা না থাকলেও জরিমানা করা হবে ওপরের নির্দেশ। এ নাম্বারে বিকাশ আছে, আপনি ৭০ হাজার টাকা দেন এখন।’

এভাবে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পরিচয়ে অভিযানের ভয় দেখিয়ে মুঠোফোনে দুটি দোকান থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা চাঁদা দাবির ঘটনা ঘটেছে।

বুধবার (১২ মে) দুপুরে উপজেলার বটতলী ইউনিয়নেয় রুস্তমহাট বাজারে এ ঘটনা ঘটে। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদকে বিষয়টি জানালে এ প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পান ওই দুই দোকানদার।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বুধবার সকালে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হাসান চৌধুরী পরিচয় দিয়ে বটতলী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সাইফুল ইসলামের কাছে (০১৬১০-৪৬৯৮০৫) মোবাইলে জানতে চাওয়া হয় বটতলী রুস্তম হাটে মিষ্টির দোকান কয়টি আছে। সাইফুল ইসলাম বনফুল ও আল মদিনা মিষ্টির দোকানের নাম বলার পর পরিষদের গ্রাম পুলিশ দিয়ে দোকানগুলোর ফোন নম্বর নিতে বলা হয়। পরে ওই ফোন নম্বরে বনফুল থেকে ৭০ হাজার টাকা ও আল মদিনা হোটেল থেকে ১ লাখ টাকা বিকাশের মাধ্যমে দ্রুত পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। টাকা না পাঠালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলেও ভয় দেখানো হয়। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হাসান চৌধুরীকে অবগত করেন ব্যবসায়ীরা।

ভূক্তভোগী রুস্তমহাট বনফুলের স্বত্ত্বাধিকারী মো. ফারুকুল ইসলাম জানান, বেলা ১১টার দিকে বটতলী ইউনিয়নের এক চৌকিদার এসে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কথা বলার জন্য আমার মোবাইল নম্বর চাইলে আমি চৌকিদারকে নম্বর দিই। কিছুক্ষণ পর (০১৬১০-৪৬৯৮০৫) নম্বর থেকে ফোন করে বলেন, আমি এসিল্যান্ড স্যার বলছি। ডিসির নির্দেশে আজকে মোবাইল কোর্ট পরিচলনা করা হবে সারা আনোয়ারায়। মোবাইল কোর্ট অভিযান থেকে আপনাদের দোকান বাদ দিতে চান কি না? হ্যাঁ বা না একটা বলুন? তখন আমি বলি, আমি তো লিগ্যালে আছি। আপনি যদি আমার কোনো সমস্যা দেখতে পান তাহলে জরিমানা করিয়েন। তখন বলা হয়, সমস্যা না থাকলেও জরিমানা করা হবে ওপরের নির্দেশ। আমি উনাকে বললাম, আসেন বসে কথা বলবো। তখন বলা হয়, বসে কথা বলা যাবে না, এক্ষুনি এ নম্বরের বিকাশ আছে আপনি ৭০ হাজার টাকা দেন, এখন। যখন বলি আমার কাছে এত টাকা নাই। তখন তিনি ৩০ হাজার টাকা দিতে বলে ফোনটা কেটে দেন। ১০ মিনিট পর আবার ফোন দিয়ে বলেন, টাকা দিচ্ছেন কিনা? ঠিক আছে আমরা আসতেছি জরিমানা যা হয় তা সরকারকে দিয়েন। বিষয়টি আমার সন্দেহ হলে আমি উপজেলা প্রশাসনকে জানাই।

বটতলী ইউপি সচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, সকাল ১০টায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পরিচয় দিয়ে চৌকিদারের মাধ্যমে মিষ্টির দোকানের নম্বর নিতে বলেন। আমি বিশ্বাস করে প্রথমে মিষ্টির দোকানগুলোতে চৌকিদার পাঠাই। পরে চাঁদা দাবির বিষয়টি শুনে উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করেছি। পরে ওই নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমদ জানান, উপজেলা প্রশাসন ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) পরিচয় দিয়ে মোবাইল কোর্ট করার ভয় দেখিয়ে ফোনে অজ্ঞাত ব্যক্তি রুস্তমহাট ও চাতরী চৌমহনী বাজারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা দাবি করছে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ব্যবসায়ীরা যেন কোন প্রকার প্রতারণার শিকার হন এ বিষয়ে সর্তক থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। বলে জানান তিনি।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!