সাতকানিয়ার প্রেমিকের বাড়ি গিয়ে অপমানে বিষপান পেকুয়ার তরুণীর

বিয়ের দাবিতে গিয়েছিলেন প্রেমিকের বাড়িতে। স্বীকৃতি তো দূরের কথা, উল্টো শিকার হন অপমানের। তাই বিষপানে আত্মহত্যা করে লাশ হয়ে হাসপাতাল মর্গে যেতে হলো প্রেমিকাকে।

ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড বারদোনা মৌলভীপাড়া এলাকায়। জীবন উৎসর্গকারী প্রেমিকার নাম রনি আক্তার (১৮)। তিনি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের ধলিয়া-ঘাটা দেলোয়ার পাড়ার সাদেক হোসেনের মেয়ে। অন্যদিকে প্রতারক প্রেমিক সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড বারদোনা মৌলভী পাড়ার মৃত সাব্বির আমাদের ছেলে আমিনুর রহমান (২২)। তিনি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছেন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সন্ধ্যায় থানায় মামলা হয়েছে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এক বছর আগে কক্সবাজারের চকরিয়ায় কসমেটিকসের ডিলারশিপ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন প্রেমিক আমিনুর রহমান। ছয় মাস আগে আমিনুরের সাথে প্রেমিকা রনি আক্তারের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুজনই বিয়ে করবেন— এই মর্মে কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে স্বামী-স্ত্রীর মত প্রায়ই রাত্রিযাপন করতে থাকেন। সম্প্রতি প্রেমিকা রনি বিয়ে করার চাপ সৃষ্টি করলে প্রেমিক আমিনুর তাতে রাজি হচ্ছিলেন না।

s alam president – mobile

জানা গেছে, সোমবার (১৩ মার্চ) রাত আটটার দিকে বিয়ের দাবি নিয়ে প্রেমিকের বাড়িতে যান প্রেমিকা রনি। পরে প্রেমিকের পরিবারের সদস্যরা তাকে অপমান ও ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিলে তিনি ট্যাক্সিযোগে সেখান থেকে চলে আসেন। যাওয়ার পথেই সঙ্গে থাকা বোতল থেকে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান রনি। এ খবর জানতে পেরে প্রেমিক আমিনুরের পরিবারের লোকজন প্রেমিকা রনিকে উপজেলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে পরে লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ব্যাপারে প্রতারক প্রেমিক আমিনুরের বড় বোন মুন্নি আকতার বলেন, ‘মেয়েটি সোমবার রাত আটটার দিকে হঠাৎ করে আমাদের ঘরে আসে। তার পরিচয় জানতে চাইলে সে বলে, আমি আমিনুরের প্রেমিকা, সে আমাকে বিয়ে করবে, তাই তাকে আজ বিয়ে করতে আসলাম। পরে আমার ভাইয়ের সাথে তার কিছু যৌথ ছবি মোবাইল থেকে দেখাই। আমার ভাই ফারুক, ভগ্নিপতি এনাম ও এলাকার ইউপি সদস্য ছফুরা এসে তার অভিভাবক নিয়ে আসতে বললে সে অস্বীকৃতি জানায়। এভাবে প্রায় দুই ঘণ্টা পর্যন্ত মেয়েটির সাথে আমাদের তর্কাতর্কি হয়। পরে সিএনজিচালিত ট্যাক্সিতে তাকে একা তুলে দিয়ে লোহাগাড়া থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে মেয়েটি ট্যাক্সির মধ্যে হঠাৎ ঢলে পড়ে। ট্যাক্সির পেছনে মোটরসাইকেল নিয়ে থাকা আমার ভাইরা তাকে থানায় না নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক বলেন সে মারা গেছে।’

রনি আক্তারকে অপমান করা হয়েছে কিনা— এমন প্রশ্নে আমিনুরের বোন মুন্নি বলেন, ‘তার সাথে তর্কাতর্কি হয়েছে। তাকে অপমান করা হয়নি।’

Yakub Group

এদিকে রনি আক্তারের ভগ্নিপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার শ্যালিকার সাথে আমিনুরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তারা উভয়েই বিয়ে করবে এমন একটা সিদ্ধান্তও ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে আমিনুর বিয়ের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় রনি বিয়ের দাবিতে আমিনুরের বাড়িতে গিয়েছিল। সেখানে তার (রনি) কথা কেউ না শুনে উল্টো তাকে চরম হেনস্তা ও অপমান করার পর সে বিষপানে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় আমরা থানায় মামলা করছি।’

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘সুরতহাল রিপোর্টে লাশের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে মেয়েটি বিষপানে আত্মহত্যা করতে পারে। চিকিৎসকও সেভাবে আমাদের জানিয়েছেন। এ ঘটনায় আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যার দিকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মেয়েটির বাবা সাদেক হোসেন বাদি হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm